চন্দন মুখোপাধ্যায়, কাটোয়া: আকাশজুড়ে প্রবল ঝড়ের অশনিসংকেত। পুজো (Durga Puja) কীভাবে হবে সেই দুশ্চিন্তায় কপালে গভীর ভাঁজ। সেই আবহেই মেলে দুর্গার স্বপ্নাদেশ। মাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখার নিদান। ১৯৪২ সালে দুর্গোৎসবের মুখে রাতের সেই স্বপ্নাদেশ আজও অক্ষরে অক্ষরে মানেন কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামের জমিদার ভবানন্দ রায়ের পরিবারের সদস্যরা। মণ্ডপ লাগোয়া গাছের সঙ্গে মোটা দড়ি বেঁধে চারদিন ধরে পুজো হয় মহামায়ার। বিসর্জনের রাতে খোলা হয় দড়ি। ১৭৫১ সালে নিজের ভিটে লাগোয়া ৫ কাঠা জায়গায় বাঁশের কাঠামোয় তালপাতার ছাউনি দিয়ে পুজোর পত্তন করেন মুর্শিদাবাদের নবাব আলিবর্দির দেওয়ান এলাকার জমিদার ভবানন্দ রায়। দুর্গা এখানে ‘খেপি মা’ হিসেবে খ্যাত। পুজো জাঁকজমকের সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য আর্থিক সাহায্য করেন নবাব আলিবর্দি। এমনকী পুজো দেখতে নিজে হাজিরও হন। শুরুর বছরগুলিতে মেষ, মোষ ও ছাগবলি হত। এখন শুধু ছাগবলি হয়।
নবাবের মুসলমান কর্মীরাও পুজোর (Durga Puja) আনন্দ উপভোগ করতে এখানে হাজির হতেন। পরিবারের সদস্য মহিমচন্দ্র রায়, শুভাশিস রায়রা জানান, ‘মূলত প্রজাদের আনন্দ দিতেই পুজোর সূচনা করেন ভবানন্দ। সে সময় বর্গিহানার ফলে কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন গ্রাম ছাড়খার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ সাঙ্ঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই গ্রামে দুর্গোৎসবের মাধ্যমে আনন্দদান ও কয়েকদিন প্রজাদের ভূরিভোজের ব্যবস্থা করেন তিনি। জমিদারদের বংশধরেরা দুর্গাপুজোর সেবাইত হলেও দেবীর বিসর্জন হয় বর্ণাঢ্য মশাল মিছিল সহকারে গ্রামের আমজনতার কাঁধে চেপে। লাগোয়া মুস্থুল, আমডাঙা, একডালা-সহ বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পাটকাঠির মশালের আলোয় বিসর্জন দেখতে ভিড় জমান গ্রামের অদূরে ব্রহ্মাণী নদীতীরে।
আরও পড়ুন- ঐতিহ্যবাহী বিসর্জনের প্রতীক্ষায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের টাকি