পাপিয়া ঘোষাল, প্রাগ: দেশের মাটি ছেড়ে বিদেশে। এই সময়টায় বাংলার ফেলে আসা কাশফুল, ঢাকের বাদ্যি আর অষ্টমীর আরতির কথা মনে পড়ে যায়। এই স্মৃতি নিয়েই চেক রিপাবলিকের প্রাগে (Prague- Durga Puja) একার উদ্যোগেই পুজোটা শুরু করেছিলাম। এবার নবম বর্ষ। বাউলগান আর ছবি আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বোহেমিয়ান শিল্পী আমি। তাই আমার দুর্গাও আমার মতোই। আড়ম্বরহীন, অনার্য, সহজিয়া। এক সাধারণ নারী, যিনি নারীশক্তির প্রতীক। প্রাগের পুজোয় এবার দুর্গার আরাধনা করবেন দুই সংস্কৃত ও তিব্বতি ভাষা বিশেষজ্ঞ চেক মহিলা পুরোহিত বিয়াঙ্কা ও জুজানা, এই বাউল পাপিয়ার তত্ত্বাবধানে। আমাদের ‘সেক্যুলার’ এই উৎসবে প্রতিবারের মতই থাকবেন মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, ইহুদি, নাস্তিক, সব্বাই। ঐতিহাসিক চেক প্রজাতন্ত্রের প্রাগ (Prague- Durga Puja) শহরে তিথি ও বিধি মেনেই মহালয়া হবে। ষষ্ঠীর বোধন থেকে শুরু করে দশমীর সিঁদুর খেলাও হবে প্রতিবারের মতো। হবে নানা অনুষ্ঠান— বাউল গান, সেতার, বাঁশি, শাস্ত্রীয় সংগীত, নৃত্য, রবীন্দ্রসঙ্গীত, মহাত্মা গান্ধীর ১৫০ বর্ষপূর্তি ঘিরে চিত্র প্রদর্শনী। আমার দুর্গা মায়াহীন ও অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারিণী তাঁর বোধিশক্তিতেই। তাঁর সর্বদেহের অলংকার তাঁর ভালবাসার সাপ। আমাদের দুর্গার হাতে অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। তার বদলে থাকবে বাদ্যযন্ত্র। আমি বিশ্বাস করি বাউল শক্তিতেই অশুভ শক্তির পরাজয় সম্ভব। দুর্গা মাকে আরতি করে উদ্বোধন করবেন দুই চেক মেয়ে জুজানা বেইবাদভা ও মিখাইলা বার্নাদোভা। থাকবেন প্রথম মহিলা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত নরেন্দ্র চৌহান। পুজো হবে আমার আখড়া পাড়ায় চেক মিনিস্ট্রির বাগানে, যেখানে কেল্টিক জঙ্গলের নীচে বয়ে চলেছে ভ্লতভা নদী। শাড়ি, আর নানা রঙে সেজে উঠেছে আমাদের প্রতিমা। আমাদের পুজোর বিশেষত্ব, মায়ের পুজোয় মেয়েরাই সব কাজ করেন। এই মহিলারা সবাই বিদেশি এবং প্রবাসী ভারতীয়। পুজোর ক’টা দিন জীবনের সব আনন্দ আমরা চেটেপুটে উপভোগ করি। দেশের মাটি ছাড়িয়ে সুদূর চেক রিপাবলিকে আমার প্রতিমা নারীশক্তি, প্রেম, পূজা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। আমি চাই সারা বিশ্ব জানুক কীভাবে আজও ভারতীয় পুরুষ ও দেবগণ দেবীশক্তি দুর্গার আরাধনা করছেন।
আরও পড়ুন- জঙ্গলে মিতিন মাসি