সংবাদদাতা, বাঁকুড়া : পুজো শুরু হতে দুই সপ্তাহ বাকি। মণ্ডপে মণ্ডপে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মাঝেই রবিবার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ (Bishnupur Mallaraj Family Puja) পরিবারে মহাধুমধামে শুরু হয়ে গেল দেবীর আবাহন। ১০২৭ বছরের রীতি মেনে স্নানপর্ব শেষে মন্দিরে এলেন বড় ঠাকুরানি। স্থানীয় মুর্ছা পাহাড় থেকে মুহুর্মুহু কামানের শব্দ ঘোষণা করল তাঁর আগমনবার্তা। প্রাচীন মল্লরাজত্বের (Bishnupur Mallaraj Family Puja) সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেবী মৃন্ময়ীর ইতিহাস। ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের আগে ছোট এলাকায় বিস্তৃত ছিল মল্লদের রাজত্ব। রাজধানী ছিল জয়পুরের প্রদ্যুম্নপুরে। মল্লরাজ জগৎমল্ল শিকারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন। পথের খোঁজে ক্লান্ত জগৎমল্ল একসময় একটি বটগাছের তলায় বসে পড়েন। সেখানেই বিভিন্ন অলৌকিক কাণ্ড-কারখানার সম্মুখীন হন রাজা। শেষে তিনি দৈববাণী পান ওই গাছের নিচে দেবী মৃন্ময়ীর মন্দির স্থাপনের। দৈবনির্দেশ মোতাবেক রাজা সেখানে দেবীর বিশাল মন্দির গড়েন। ঘন জঙ্গল কেটে রাজধানী সরিয়ে আনেন বিষ্ণুপুরে। এরপর দীর্ঘ ১০২৭ বছর ধরে বহু উত্থানপতনের সাক্ষী এই পুজো। একসময় পুজোয় নাকি নরবলি হত। পরবর্তীতে মল্লরাজারা বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হলে বলিদান প্রথা বন্ধ করে শব্দকে ব্রহ্মজ্ঞানে তোপধ্বনির প্রচলন শুরু হয়। সেই প্রথা আজও চলে আসছে। পুজোর প্রতিটি নির্ঘণ্ট ঘোষিত হয় তোপধ্বনি করে। রাজ্যে দুর্গাপুজো কালিকাপুরাণ মতে হলেও শুরুর দিন থেকেই মল্লরাজ পরিবারের পুজো হয় এক প্রাচীন পুঁথি বলিনারায়নি অনুসারে। পুজো শুরু হয় জিতাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নবমী তিথি ধরে। এবছরও রবিবার নবম্যাদি কল্পারম্ভে সকালেই দেবীর আগমন ঘটল প্রাচীন মন্দিরে। সুপ্রাচীন রীতি অনুসারে রাজ দরবার সংলগ্ন দিঘিতে স্নানপর্ব সেরে মন্দিরে আনা হল বড় ঠাকরুণ অর্থাৎ মহাকালীকে। দেবীপক্ষের চতুর্থী তিথিতে মন্দিরে আসবেন মেজ ঠাকরুন অর্থাৎ মহালক্ষ্মী। সপ্তমীর দিন আনা হবে ছোট ঠাকরুণ অর্থাৎ মহাসরস্বতীকে। এই তিন ঠাকরুণ হলেন আসলে স্থানীয় ফৌজদার পরিবারের হাতে আঁকা তিনটি বিশেষ পট। পুজোর বোধনের ১৫ দিন আগেই উদযাপনে মাতলেন প্রাচীন মল্লভূমের আপামর মানুষ।
আরও পড়ুন- তৃতীয় ত্রৈমাসিক— নতুন ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়েছে ১০৫ শতাংশ