রমা পাহাড়ি সুদ, ফ্রাঙ্কফুর্ট: আমি নাটক ও বাচিকশিল্পের সঙ্গে বহুদিন যুক্ত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকে স্নাতকোত্তর পাঠ নিয়েছি। পরে ট্রান্স ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজে চাকরির সূত্রে জার্মানিতে আসা। বিয়ে করে এখানেই থিতু হয়েছি। জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ শহর ফ্রাঙ্কফুর্ট। প্রচুর বাঙালির বাস এখানে। ১৯৮৩ সালের কাছাকাছি সময়ে এখানে গড়ে উঠেছিল রাইন–মাইন কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। তখন থেকে হয় দুর্গাপুজো। সেই সময় কোলনেও পুজো হত না। ফলে স্টুটগার্ট, ডুসেলডর্ফ ইত্যাদি নানা জায়গা থেকে বাঙালিরা পুজো দেখতে আসতেন আমাদের এখানে। সেই পরম্পরা আজও চলছে।
আরও পড়ুন-পুজোর বিজ্ঞাপনে বাঙালির আগমনি
দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে আমরা পাঁচদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করি। তিন মাস আগে থেকে শুরু হয় মহড়া। তাই নিয়ে চূড়ান্ত উত্তেজনা চলে। আমরা কখনও মহিষাসুরমর্দিনী, কখনও মনোজ মিত্রের নাটক বা রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য করি। মঞ্চস্থ করার পর প্রশংসা পেলে অসম্ভব আনন্দ হয়। ষষ্ঠীর বোধন শুরু হয় মঙ্গলাচরণ দিয়ে। কচিকাঁচাদের অনুষ্ঠান, বড়দের নাটক, কোলাজ নৃত্যে গমগম করে মণ্ডপ। পুজোর দিনে মেয়ে–বৌরা নতুন শাড়িতে ঊর্বশী হয়ে ওঠে। ছেলেরা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে। দুর্গাপুজো ছাড়াও লক্ষ্মীপুজো, সরস্বতীপুজো, নববর্ষ, রবীন্দ্র ও নজরুলজয়ন্তী আমরা পালন করি। আমি জার্মানিতে এসেছি ১৯৮৮-তে। যেহেতু সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, আমাকেই সামলাতে হয়েছে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব। বহু জার্মান পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগ দেন, সাহায্য করেন। আমার স্বামী হরমেশ সুদ, পাঞ্জাবি। তাঁরও খুব উৎসাহ।
আরও পড়ুন-মূল্যবৃদ্ধি আর বেকারত্বের সমস্যা মিটে গেল বুঝি?
প্রবীণ চিকিৎসক ডাঃ স্মৃতীন্দু রায়, সান্ত্বনা ঘোষ, অপূর্ব রায়, প্রবালকান্তি দে, তরুণ দত্ত, অমিয় পালরা প্রত্যেকেই কৃতী ও ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু পুজো উপলক্ষে ওঁরা সব কাজ ফেলে লেগে পড়েন আয়োজনে। পুজো উপলক্ষে একটা ছোট স্যুভেনিরও প্রকাশ করি। তাতে কেউ লেখে প্রবন্ধ, কেউ গল্প বা কবিতা। সব মিলিয়ে এই পুজোকে ঘিরে এই সব কর্মকাণ্ডই প্রবাসে আমাদের ‘বাঙালি’ করে রাখে। নবীন প্রজন্ম, যারা বাংলা থেকে অনেক দূরে জন্মেছে, তারাও নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে। দুর্গোৎসব এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র।