নবনীতা মণ্ডল নয়াদিল্লি : টানা ন’দিন ধরে চলা নবরাত্রির পর রাবণদহন বা দশেরা (Dussehra in India) উত্তর ভারতের একটি প্রচলিত প্রথা। বিশ্বাস অনুযায়ী, ওইদিন রাবণ দহনের মধ্য দিয়ে দুষ্টের দমন করার প্রতীকী বার্তা দেওয়া হয়। অথচ ভারতের এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে রাবণকে সন্তানরূপে, দেবতারূপে পুজো করা হয়। কোথাও বা রাবণকে পুজো করা হয় নিজেদের জামাতা রূপে। দেশের এইসব জায়গায় রাবণ দহনের দিন নেমে আসে শোকের ছায়া। আজও তাঁরা রাবণের আত্মার উদ্দেশে যজ্ঞ করেন এবং ওইদিনে ওইসব এলাকায় শোক পালন করা হয়।
আমাদের দেশে, বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং এটিই ভারতের সৌন্দর্য। ভারতের এমন জায়গাও আছে যেখানে রাবণকে ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হিসেবে স্বাগত জানানো হয় এবং রাম সেখানে ব্রাত্য। তথাকথিত রামরাজ্য উত্তরপ্রদেশের বহু জায়গায় যখন ধুমধাম সহকারে রাবণের কুশপুতুল (Dussehra in India) দাহ করা হয়, তখন আবার উত্তরপ্রদেশেরই বিসরাখ গ্রামে দশেরা এবং দীপাবলিতে ধুমধাম করে রাবণের পুজো করেন স্থানীয়রা। কারণ তাঁদের বিশ্বাস এই গ্রামটিই রাবণের জন্মস্থান। এখানেই তাঁর শৈশব কেটেছে। একইভাবে মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌর সম্পর্কে বলা হয়, প্রাচীনকালে এর নাম ছিল মন্দোতরি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী মন্দসৌরের বাসিন্দা, তাই মন্দসৌর রাবণের শ্বশুরবাড়ি। মন্দসৌরের নামদেব সমাজের মহিলারা এখনও রাবণের মূর্তির সামনে ঘোমটায় মুখ ঢেকে রাবণের পায়ে লাচ্ছা (সুতো) বাঁধেন। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই সুতো বাঁধলে রোগ নিরাময় হয়। এখানে দশেরার দিন রাবণের পুজো হয় মহাসমারোহে। প্রতি বছর দশেরার দিনে নামদেব সমাজ এভাবেই জামাতা রাবণকে বরণ করে।
আরও পড়ুন-বেনজির! প্রধান বিচারপতির প্রস্তাব মানল না কলেজিয়াম
উজ্জয়িন জেলার চিখালি গ্রামের মানুষের আবার বিশ্বাস, রাবণের পুজো না হলে পুরো গ্রাম পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তাই নবরাত্রি শেষে রাবণপুজোয় মগ্ন হয় গোটা গ্রাম। রাজস্থানের যোধপুরে কিছু বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ নিজেদের রাবণের বংশধর বলে মনে করেন এবং তাঁরা আজও দেবতাজ্ঞানে রাবণের পুজো করেন। উত্তরপ্রদেশের কানপুরে একটি শিবমন্দির রয়েছে, যার নাম দশানন মন্দির। স্থানীয় মানুষ এখানে রাবণপুজো করতে আসেন। এখানকার সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, রাবণ রাক্ষসদের রাজা ছিলেন না, তিনি একজন জ্ঞানী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মহান পণ্ডিত ছিলেন। এখানে কখনও রাবণদহন হয় না। হিমাচলপ্রদেশের কাংড়া জেলার বৈজনাথ শহরে রাবণকে পূর্ণভক্তি সহকারে পূজা করা হয়। লৌকিক বিশ্বাস অনুসারে, রাবণ বহু বছর ধরে বৈজনাথে ভগবান শিবের তপস্যা করে মোক্ষলাভ করেন। এখানেও তাই দশেরায় পূজিত হন রাবণ।