প্রতিবেদন : যত দিন যাচ্ছে, লাল-হলুদের রক্ষণের কঙ্কালসার চেহারা বেরিয়ে পড়ছে। গতবার ৫-৬ গোলে হেরেছিল লাল-হলুদ। এবার হার ৪-৬ গোলে। ডার্বিতে তিন গোল হজমের পর এবার ওড়িশার বিরুদ্ধে ছয় গোল হজম! প্রথম ম্যাচে ড্রয়ের পর, টানা দুটো ম্যাচে হার। খুবই খারাপ অবস্থা তা বলাই যায়। অপরদিকে চাঙ্গা মোহনবাগান।
ইস্টবেঙ্গল এদিন একটা-দুটো নয়, সেটপিস থেকে বিরতির আগেই তিন-তিনটি গোল হজম করে। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ম্যানুয়েল দিয়াজের রক্ষণ কতটা নড়বড়ে। প্রথম দুই ম্যাচে দু’জন বিদেশি স্টপার নিয়ে দল সাজালেও, এদিন টমিস্লাভ মার্সেলাকে প্রথম একাদশে রাখেননি লাল-হলুদ কোচ। বরং ফ্রাঞ্জো প্রিসের সঙ্গে স্টপারে জুড়ে দেন রাজু গায়কোয়াড়কে। প্রথম দুটো গোলের ক্ষেত্রে দায়ী রাজু। ওড়িশার স্প্যানিশ স্টপার হেক্টর রোডাস হেলায় তাঁকে টপকে দু-দু’বার গোল করে গেলেন। তৃতীয় গোলের ক্ষেত্রে দায়ী গোলকিপার শুভম সেন। জাভি হার্নান্ডেজের কর্নারের ফ্লাইটই বুঝতে পারলেন না তিনি! অখচ ১৩ মিনিটেই সিডওয়েলের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। রাজুর লম্বা থ্রো বিপদমুক্ত করতে পারেনি ওড়িশার স্টপার ভিক্টর মঙ্গিল। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের চমৎকার শটে বল জালে জড়িয়ে দেন লাল-হলুদের ডাচ মিডিও। তবে বিরতির আগেই গোল হজম করে বসে ইস্টবেঙ্গল। ৩৩ মিনিটে জাভির ফ্রি-কিক থেকে হেডে গোল করে যান রোডাস। ৪০ মিনিটে ফের সেটপিস থেকে গোল করে দলকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন রোডাস। ৪৪ মিনিটে কর্নার থেকে জাভির সরাসরি গোল। বিরতির সময় অবশ্য জাভিকে তুলে নেন ওড়িশা কোচ। মাঠে নামিয়ে দেন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার জোনাথাসকে। একই সঙ্গে স্টপার ভিক্টরকে তুলে নিয়ে স্প্যানিশ উইঙ্গার আরিদাই কাবরেরাকে মাঠে নামিয়ে দেন। মরিয়া ইস্টবেঙ্গল কোচও কিছুক্ষণের মধ্যে এক সঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন। আমির, প্রিস ও সিডওয়েলকে তুলে নিয়ে তিনি মাঠে নামান চিমা, মার্সেলা ও অমরজিতকে।
কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। উল্টে ৭১ মিনিটে ফ্রি-কিক থেকে আসাধারণ গোল করে যান ওড়িশার পরিবর্ত ফুটবলার আরিদাই। অবশ্য ৮০ মিনিটে ব্যবধান কমালেন লাল-হলুদের পরিবর্ত স্ট্রাইকার সেমবই হাওকিপ। কিন্তু দু’মিনিট পরেই ওড়িশার পাঁচ নম্বর গোলটি করেন আইজ্যাক। ম্যাচের অন্তিম সময়ে পরপর দুটো গোল করে দলকে কিছুটা হলেও লড়াইয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন চিমা। কিন্তু ইনজুরি সময়ে ফের গোল করে ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করে দেন আরিদাই।
আরও পড়ুন : এ মাসেই স্মার্ট ফোনে মিলবে মেট্রোর টিকিট
এদিকে চুনীকে ডার্বি জয় উৎসর্গ করলেন বাগান কোচ। হাবাসের এবারের আইএসএলও দুর্দান্তভাবে শুরু হয়েছে। এটিকে মোহনবাগান কেরালা ব্লাস্টার্সকে হারানোর পর ঐতিহ্যের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে । আর কোচ অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাস ডার্বি জয় উৎসর্গ করলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে কিংবদন্তি চুনী গোস্বামীকে। মুম্বই ম্যাচের আগের দিন হাবাস বললেন, ‘‘চুনী গোস্বামী ক্লাবের কিংবদন্তি ফুটবলার। তাঁকেই ডার্বি জয় উৎসর্গ করছি।’’ বুধবার রয় কৃষ্ণদের প্রতিপক্ষ গতবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি। গত মরশুমে ফাইনাল-সহ দু’বার মুম্বইয়ের কাছে হেরেছে হাবাসের দল। লিগ শিল্ড ও আইএসএল ট্রফি দু’টিই তাদের কাছে হারিয়েছে মোহনবাগান। এবার বদলার ম্যাচ কৃষ্ণ-মনবীরদের সামনে। কোচ-ফুটবলারদের লক্ষ্য, মুম্বই ম্যাচ থেকে এবার তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করা। তবে বদলার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামবে না হাবাসের দল। স্প্যানিশ কোচ ম্যাচের আগের দিন বললেন, ‘‘প্রতিশোধের কথা মাথায় নিয়ে আমরা মাঠে নামব না। এটি আলাদা ম্যাচ। ওদের নতুন কোচ, কিছু নতুন প্লেয়ারও এসেছে দলে। আমার কাছে ওরা বদলে যাওয়া দল। ৯০ মিনিটের লড়াই পার্থক্য গড়ে দেবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’’
জয়ের অভ্যাস বজায় রাখতে চাইছেন হাবাস। দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কোচ বলে দিলেন, ‘‘প্রতিদিন জিততে হবে। তিন পয়েন্ট পেতে হবে এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, আমাদের জয়ের অভ্যাসে থাকতে হবে।’’ হাবাসের পছন্দের ফর্মেশন ৩-৫-২। কোলাসো ও মনবীরকে দুই উইংব্যাক হিসেবে ব্যবহার করেন। স্প্যানিশ কোচ বললেন, পরিস্থিতির প্রয়োজনে তিনি নতুন ফর্মেশনেও যেতে পারেন।
রক্ষণে শক্তি বাড়াতে আশার কথাও শুনিয়েছেন কৃষ্ণ, প্রীতমদের কোচ। তিরি ফিট হয়ে অনুশীলনে নেমেছেন। আগামী সপ্তাহেই ম্যাচ খেলার জায়গায় চলে আসতে পারেন স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক।
আজ আইএসএলে
এটিকে মোহনবাগান-মুম্বই সিটি এফসি
(সন্ধ্যা ৭.৩০)