প্রতিবেদন : শেষ চার ম্যাচে জয় নেই। গত চার ম্যাচে দল এগারো গোল হজম করেছে। ছন্দে নেই রয় কৃষ্ণ, হুগো বোউমাসরা। কোচের স্ট্র্যাটেজি নিয়েও উঠছিল প্রশ্ন। ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে ছ’নম্বরে সবুজ-মেরুন। তবু বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু ম্যাচ ড্র করার পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাগানের স্প্যানিশ বস। কিন্তু শনিবার আচমকাই আইএসএলের ইতিহাসে সব থেকে সফল কোচ অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাসকে ছেঁটে ফেলল এটিকে মোহনবাগান ম্যানেজমেন্ট। কৃষ্ণ-কাউকোদের নতুন হেড মাস্টার হওয়ার দৌড়ে তৎকালীন এটিকে-কে আইএসএল জেতানো স্প্যানিশ কোচ হোসে ফ্রান্সিসকো মোলিনা।
দু’লাইনের এক প্রেস বিবৃতিতে ক্লাবের পক্ষ থেকে এদিন জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘আমাদের প্রধান কোচের পদ থেকে অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাসকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সহকারী কোচ ম্যানুয়েল কাসকালানা অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন’। প্রথম দুই ম্যাচে দল সাত গোল করেছিল। ডার্বি জিতে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল হাবাসের দল। এর পরই আচমকা ছন্দপতন। শেষ চার ম্যাচের মধ্যে দু’টি হার, দু’টি ড্র। ১০ পয়েন্ট নষ্ট। বৃহস্পতিবার বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে ড্র করার আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিল ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। দুই তরফের পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে হাবাসকে হেড কোচের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, ক্লাবের শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট গত চার ম্যাচে শুধু দল নয়, স্প্যানিশ কোচের পারফরম্যান্সেও খুশি নয়। তাই সমঝোতার ভিত্তিতে কোচকে পদত্যাগে রাজি করানো হয়। রয় কৃষ্ণদের পরবর্তী কোচ কে হবেন, তা নিয়ে জল্পনার মধ্যেই ক্লাব ম্যানেজমেন্ট সূত্রে খবর, কয়েক বছর আগে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার টিমকে ট্রফি দেওয়া মোলিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে স্প্যানিশ কোচ কোনও ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত নন। তাই তাঁকে কৃষ্ণদের নতুন বস হিসেবে দেখা যেতেই পারে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াইয়ে রয়েছেন গতবার মুম্বই সিটিকে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ সের্জিও লোবেরাও। আইএসএলের ইতিহাসে অত্যন্ত সফল কোচ হাবাস। এটিকে ও মোহনবাগান ক্লাব জুড়ে যাওয়ার আগের মরশুমেই (২০১৯-২০) দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। গতবারও আইএসএলে রানার্স হাবাসের মোহনবাগান। তার আগে তৎকালীন এটিকে-র হয়ে দু’বার আইএসএল জিতেছেন। পুণে সিটি এফসি-তেও কোচিং করিয়েছেন। এবারই যেন অচেনা ছবি। ভারতে তাঁর কোচিং কেরিয়ারে কখনও টানা চার ম্যাচে জয় পাননি, এমনটা হয়নি।
আরও পড়ুন : লখনউ ফ্রাঞ্চাইজির মেন্টর হলেন গম্ভীর
অষ্টম আইএসএলে মশাল নিভছে। সাত ম্যাচ পরেও জয় অধরা। শুক্রবার রাতেও লজ্জার ব্যর্থতার ছবিটা বদলায়নি। খালিদ জামিলের নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে কার্যত আত্মসমর্পণ করেছে মানোলো দিয়াজের ইস্টবেঙ্গল। তিন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে লিগের লাস্ট বয়ের তকমা আরও মজবুত করছেন ড্যানিয়েল চিমারা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে কোচ বদল হওয়ায় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের দাবি, অবিলম্বে মানোলো দিয়াজকেও সরিয়ে দিয়ে নতুন কোচ আনা হোক। স্প্যানিশ কোচের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট নয় এসসি ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজমেন্টও। দিয়াজের দল নির্বাচন, রণকৌশল নিয়ে প্রথম থেকেই উঠছে প্রশ্ন।
সূত্রের খবর, লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা বিকল্প ভাবনাচিন্তা করছেন। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। জানুয়ারি উইন্ডোয় বিদেশি বদলও হবে। কোচ, ফুটবলারদের নিয়ে ক্ষোভ, বিরক্তি বাড়ছে লাল-হলুদ সমর্থকদের মধ্যে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সমর্থকরা। কারও দাবি, আইএসএল থেকে দল তুলে নেওয়া উচিত। কারও মতে, অবিলম্বে কোচ বদলে জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোয় নতুন কিছু ফুটবলার নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত। নর্থ ইস্টের কাছে হারের পর স্প্যানিশ কোচ বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই দল নিয়ে তিনি কিছু করতে পারবেন না। ম্যাচ জেতাটা কঠিনতম কাজ। দিয়াজ বলেছেন, ‘‘এটা খুব কঠিন পরিস্থিতি। যা চলছে, যে মানের ফুটবলার আমাদের হাতে রয়েছে, তা নিয়েই চলতে হবে। তিন পয়েন্ট পাওয়া আমাদের কাছে খুব কঠিন।’