পুজো পরিক্রমা
পুজোয় যেমন শপিং আছে, তেমন আছে প্যান্ডেল হপিং। ঘুরে ঘুরে পুজো দেখতে ভালবাসেন বহু মানুষ। কেউ ঘোরেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ পছন্দ করেন সর্বজনীন পুজো। কেউ বনেদি বাড়ির পুজো।
এবারের দুর্গাপুজো উপলক্ষে কয়েকটি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর। তার মধ্যে অন্যতম পুজো পরিক্রমা। তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগিতায় কলকাতা শহর জুড়ে বনেদি বাড়ি এবং বারোয়ারি পুজো দেখানো হবে। তার জন্য রয়েছে দুটি প্যাকেজ। সেগুলো কী কী?
আরও পড়ুন-ছোটদের দুটি শারদ সংখ্যা
রাজ্যের পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘সেগুলো হল ‘উদ্বোধনী’ ও ‘সনাতনী’। সারারাত ধরে কলকাতার সর্বজনীন পুজো দেখতে চাইলে ‘উদ্বোধনী’ প্যাকেজ বেছে নেওয়া যায়। রবীন্দ্রসদন থেকে শুরু হবে যাত্রা। দেখানো হবে কলেজ স্কোয়্যার, মহম্মদ আলি পার্ক, কাশী বোস লেন, ৬৬ পল্লি, মুদিয়ালি, শিবমন্দির, সিংহী পার্ক, একডালিয়া এভারগ্রিন, হিন্দুস্তান পার্ক, বাদামতলা আষাঢ় সংঘ ইত্যাদি জায়গার ঠাকুর। তৃতীয়া ও চতুর্থীতে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত এই প্যাকেজের সুবিধা পাওয়া যাবে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে ঘোরার পাশাপাশি থাকবে ডিনার। মাথাপিছু খরচ মাত্র ২,০৯৯ টাকা।’
আরও পড়ুন-পিতৃপক্ষের অন্তিমক্ষণে একদিনের জন্য পুজো নেন উমা
যাঁরা শহরের বনেদি বাড়ির পুজো ঘুরতে দেখতে চান, তাঁরা সুবিধা পাবেন? তিনি জানান, ‘‘তাঁদের জন্য আছে ‘সনাতনী’ প্যাকেজ। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর সকালে ঘুরে দেখতে পারবেন বনেদি বাড়ির পুজো। শোভাবাজার রাজবাড়ি, ছাতুবাবু লাটুবাবু বাড়ি, চন্দ্র বাড়ি, রানি রাসমণি বাড়ি, ঠনঠনিয়া দত্ত বাড়ি ইত্যাদি জায়গার পুজো ঘুরিয়ে দেখানো হবে এই প্যাকেজের মধ্যে। এছাড়া থাকছে ব্রেকফাস্ট ও দুপুরে শোভাবাজার রাজবাড়িতে প্রসাদ গ্রহণের সুযোগ। মাথাপিছু খরচ মাত্র ১,৯৯৯ টাকা।’
‘উদ্বোধনী’ এবং ‘সনাতনী’র পাশাপাশি আনা হয়েছে আরও একটি প্যাকেজ, ‘হুগলি সফর’। পর্যটন দফতর এই প্যাকেজটি এনেছে শহরতলির পুজো দেখার জন্য। প্যাকেজটি সম্পর্কে তিনি জানালেন, ‘‘২১, ২২, ২৩ অক্টোবর ঘোরানো হবে হুগলি গুপ্তিপাড়া দুর্গাবাড়ি পুজো, গুপ্তিপাড়া সেনবাড়ির মন্দির, শ্রীরামপুর গোস্বামী বাডি, বুড়ি দুর্গা, শেওড়াফুলি রাজবাড়ির পুজো, হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির। সকাল ৭টায় রবীন্দ্রসদন থেকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস ছাড়বে। ফেরা রাত ৮-৩০ মিনিটে। রবীন্দ্রসদনে। পুজো পরিক্রমার এই প্যাকেজে থাকবে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ। মাথাপিছু খরচ মাত্র ৩,৪৯৯ টাকা। বুকিংয়ের জন্য আগ্রহীরা লগ-ইন করতে পারেন রাজ্যের পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইটে।’’
আরও পড়ুন-৩৫০ বছরের দালান মা পুজো নেন পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে
নিউ টাউন হাফ ডে ট্যুর :
সবুজ শহর নিউটাউন। কলকাতার লাগোয়া। ছিমছাম এবং অত্যাধুনিক এই শহরে আছে বেশ কয়েকটি বেড়ানোর জায়গা। এই জায়গাগুলো ঘোরানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর। বিভাগীয় সচিব এই ট্যুর সম্পর্কে জানালেন, ‘‘দুর্গাপুজো চলাকালীন শনি ও রবিবারে কলকাতা কানেক্ট নিউ টাউন হাফ ডে ট্যুরের আয়োজন করা হয়েছে। ১৪-১৫ অক্টোবর এবং ২৮-২৯ অক্টোবর, মোট চারদিন। সফর শুরু হবে দুপুর ২টোয়। শেষ হবে সন্ধে ৬টায়। ঘোরানো হবে বিশ্ববাংলা গেট, রবীন্দ্রতীর্থ, বিমান জাদুঘর, কফিহাউস, মোমের জাদুঘর, ইকো-পার্ক, ওয়ান্ডার মিনি চিড়িয়াখানা। দুটো ডবল ডেকার বাস আছে আমাদের। সেগুলো ব্যবহার করা হবে হবে নিউ টাউনের এই ট্যুরে। পুজো উপলক্ষে কলকাতায় চালানো হবে দুটি ট্রাম।’’
আরও পড়ুন-শ্রীলঙ্কার বন্দরে চিনা গুপ্তচর জাহাজ
জেলায় জেলায়
পুজো মানেই ছুটি। ছুটি মানেই বেড়ু-বেড়ু। কোথায় যাওয়া হবে সেটা নাহয় ঠিক হল, কিন্তু কীভাবে যাওয়া হবে সে এক চিন্তার বিষয়। টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং নিয়েও নানা রকমের ঝামেলা। যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁদের সমস্যা নেই। যাঁরা অনভিজ্ঞ, বেশি সমস্যা তাঁদের। পর্যটকরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ ট্যুর’ নিয়ে এসেছে রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর। ২৬ সেপ্টেম্বর ট্যুর প্যাকেজ প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিষয়ে পর্যটন সচিব জানালেন, ‘‘কোন-কোন জায়গা ঘোরানো হবে, কোথায় রাত কাটানো হবে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা থাকছে প্যাকেজে। শুধু কি তাই? টিকিট থেকে হোটেল বুকিং, খাওয়াদাওয়া থেকে পরিকল্পনা— সবকিছুর দায়িত্ব ট্যুর অপারেটরদের। পরিবার, দম্পতি এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী সবাই নিজেদের মতো প্যাকেজ বেছে নিয়ে আনন্দ করতে পারবেন। ঘুরতে পারবেন নিশ্চিন্ত মনে।’’
আরও পড়ুন-পুরসভার নয়া ভবনের সূচনা
তিনি আরও বলেন, ‘‘প্যাকেজ ট্যুরে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রাজ্যের ১৬টি ডেস্টিনেশন। তার মধ্যে আছে পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল। পাওয়া যাবে সংস্কৃতির স্বাদও। ১৬টি ডেস্টিনেশনে ৬৫টি ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে আপাতত এই প্রক্রিয়া চালানো হবে। ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েকজন গাইডকে। এই ট্যুর প্যাকেজের মধ্যে থাকবে পাহাড়ে দুটি সার্কিট। যেমন, দার্জিলিং এবং কালিম্পং। পাশাপাশি বন্যপ্রাণের আওতায় থাকবে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য থাকছে হেরিটেজ ট্যুর প্যাকেজ। এর মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, বীরভূম, মালদহ, হাওড়া, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, কোচবিহার ও কলকাতা। সবুজ প্রকৃতির কাছাকাছি বেড়াতে চাইলে বেছে নিতে হবে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রামের প্যাকেজ। সমুদ্রসৈকতের মধ্যে থাকবে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। উইকএন্ড ডেস্টিনেশন হিসেবে বেছে নেওয়া যায় উত্তর ২৪ পরগনাকে। জেলাগুলোতে কিন্তু ধর্মীয় পর্যটন ক্ষেত্র আছে প্রায় একশোটির বেশি। চারশোরও বেশি ধর্মস্থানের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে প্যাকেজে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘মহাপুণ্যভূমি মহাতীর্থভূমি’।”
আরও পড়ুন-জাগোবাংলা উৎসব সংখ্যা প্রকাশ, জয়ী ব্যান্ডের গানে মাতলো মঞ্চ
বুকিং শুরু হয়েছে
পর্যটন দফতরের সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী আরও জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের পুজো পরিক্রমার অনলাইন বুকিং শুরু হয়েছে। খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। আমাদের দুটো ডবল ডেকার বাস আছে। সেগুলো চালানো হবে নিউ টাউনে। পুজো ক’দিনের জন্য। প্রতি বছর বাইরে থেকে বহু পর্যটক আসেন। বিদেশ থেকে এবং দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে। কলকাতার দুর্গাপুজো দেখার জন্য। তাঁদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে ট্যুর প্যাকেজ। বিভিন্ন ডেস্টিনেশন কভার করা হবে। মনে করা হচ্ছে, এবার দুর্গাপুজো দেখতে প্রচুর মানুষ আসবেন। সুবিধা নেবেন প্যাকেজের। পুজোর শেষে কার্নিভালেও তাঁরা থাকবেন। পাশাপাশি ঘুরে দেখবেন আশপাশের বিভিন্ন জায়গা। জেলার প্যাকেজগুলো মূলত ৩ দিন ২ রাতের। জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁরা যতটা সম্ভব সহযোগিতা করবেন। সবমিলিয়ে এবারের পুজো জমজমাট হতে চলেছে। রাজ্যে এত বৈচিত্র থাকলেও, ঘোরার জন্য সরকারি কোনও প্যাকেজের সুবিধা এতদিন পর্যন্ত ছিল না। তাই আশা করা হচ্ছে, এই প্যাকেজ ট্যুর পরিষেবা রাজ্যবাসীদের আনন্দ দেবে। এমনকী ভিনরাজ্য ও বিদেশি পর্যটকদেরও বিশেষ সুবিধা দেবে নতুন এই পরিষেবা।”