রাজ্যের কৃষি দফতরে (Agriculture Department) কর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল বাম আমলে। অভিযোগের তির ছিল সেই জমানার কৃষি দফতরের একাধিক শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে। এবার সেই অভিযুক্তদের মূল বিচারপর্ব শুরু হতে চলেছে। কৃষি দফতরের তৎকালীন ৩ অভিযুক্ত আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করে রাজ্য তদন্তকারী সংস্থা (CID)। জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে দুজন সেই সময় অতিরিক্ত অধিকর্তার পদে ছিলেন। আগামী ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ মঙ্গলবারই কলকাতা নগর দায়রা আদালতে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
গত ২৯ নভেম্বর মামলাটি আদালতে ওঠে। বিচারপতি কৃষি দফতরের কাছে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়ে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। এর আগে সিআইডি আদালতে চার্জশিট পেশ করে। তবে তা খারিজ করার জন্য অভিযুক্তরা আদালতে আবেদন করে। কিন্তু বিচারপতি তা নাকচ করে দেন। পাশাপাশি বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, চার্জশিটে পরীক্ষায় বিভিন্ন অনিয়ম এমনকি কারচুপি করে পরীক্ষার্থীদের নম্বর বাড়ানোর উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্যকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল বাংলা
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে কৃষি অধিকর্তার দফতরে লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক বা এলডিসি-র ৩৩১টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছিল। তার ভিত্তিতে একটি পরীক্ষাও হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই পরীক্ষায় প্রায় ৩১ হাজার প্রার্থীর কাছে অ্যাডমিট কার্ডই পাঠানো হয়নি। নিয়ম ভেঙে তড়িঘড়ি পরীক্ষা কেন্দ্র বদলে দেওয়া হয়। এই ধরনের কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০৮ সালে পরীক্ষা বাতিল করে দেয় তৎকালীন বাম সরকার। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কিছু পরীক্ষার্থী প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল বা রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) এবং পরে কলকাতা হাইকোর্ট, তারও পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, রিপোর্টে সিআইডি জানিয়েছে, আবেদনপত্র কাটছাঁট থেকে শুরু করে অ্যাডমিট কার্ড পাঠানো, পরীক্ষা কেন্দ্র বদল এবং উত্তরপত্র নিয়েও অনিয়ম হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ামকের দায়িত্বে থাকা কৃষি দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বিষয়টি জানা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেননি। ওই পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া অনেকেই কৃষিকর্তাদের আত্মীয়পরিজন, এমনটাই জানিয়েছে সিআইডি। রিপোর্টে সিআইডি দাবি করেছে, পরীক্ষায় সরকারের প্রায় দু’কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। পরীক্ষার আর্থিক হিসেব পরীক্ষা করলে তার প্রমাণ মিলবে। কিন্তু সেই সব নথিই নেই কৃষি দফতরে। সিআইডি-র অভিযোগ, কৃষি দফতরের চার কর্তা ওই সব ফাইলপত্র নষ্ট করে দিয়েছেন।
কৃষি দফতরের তৎকালীন যুগ্মসচিব এ কে সামন্ত, তদানীন্তন কৃষি অধিকর্তার ব্যক্তিগত সহায়ক কল্যাণ সুর, কৃষি দফতরের (Agriculture Department) তখনকার অতিরিক্ত অধিকর্তা (প্রশাসন) উদয়ন মজুমদার এবং দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা (উত্তরবঙ্গ) সার্থক বর্মার বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন রাজ্যের কৃষি সচিব সুব্রত বিশ্বাস। তবে ওই চার কর্তা ছাড়াও আরও কয়েক জন এই দুর্নীতিতে জড়িত থাকতে পারেন বলে অভিযোগ।