শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় সুযোগ-সরঞ্জামের গন্ধমাদন এখন হাতের মুঠোয়, তার মধ্যে থেকে ঠিক যা-যা দরকার মুহূর্তের মধ্যে পেয়ে যাবেন মাউসের ক্লিকে বা স্মার্ট ছোঁয়ায়। ওয়েবসাইট ঘটিয়েছিল বিপ্লব। এখনকার নিত্য-নতুন অ্যাপস (Website-Apps) হয়ে উঠছে প্রায় সর্বকর্মের আলাদিনের প্রদীপ। পড়াশুনার জগতেও, দুনিয়ার যা খুশি যখন খুশি পড়ার সুযোগ গুছিয়ে দিতে খুলে গেছে অ্যাপস-ইন্টারনেটের নতুন দিগন্ত। অভিনব উপায়-উপকরণের সীমাহীন সম্ভারে ভরা শিক্ষার এ এক নতুন জগৎ। যেমন কিন্ডল। এর সঙ্গে বাঙালির পরিচয় বেশ কয়েক বছর আগেই। কিন্ডল-এ ডিজিটাল হল পড়াশোনা। কয়েকশো বই চলে এল হাতের মুঠোয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে টলস্টয়, শেক্সপিয়র থেকে শরৎচন্দ্র, মিলটন থেকে মধুসূদন পকেটে ভরেই চলল বাঙালি। বাসে, ট্রেনে, ট্রামে, স্কুল-কলেজে, মাত্র কয়েক গ্রাম ওজনের স্বল্পায়তন ফ্রেমেই বন্দি হতে পারে দুনিয়ার সাহিত্যজগৎ, শিক্ষাজগৎ। অঙ্ক, বিজ্ঞান, কারিগরি-প্রযুক্তি সহ যা চাই একই অঙ্গে বহুবিচিত্র ধারার সমাহার। আঙুলের ছোঁয়ায় জ্ঞান আহরণের অনন্ত সুযোগ।
কিন্তু এর বিস্তার হল কতটা? সত্যিই কি ডিজিটাল শিক্ষার উত্তরণ ঘটল? কিন্ডল সত্যিই কি পড়াশোনার প্রসারে যুগান্তকারী ভমিকা নিতে পারল? পারলে কতটা? প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, সে সময় একটা কিন্ডলের যা দাম ছিল তাতে গ্রামের নিম্নবিত্ত বাঙালির কাছে তো বটেই, শহুরে সাধারণ মধ্যবিত্তের ঘরেও দুরাশার বিষয়। সঙ্গে চাই নেট ব্যবহারের সুযোগও। তাই বিরাট বৈপ্লবিক সম্ভাবনার সূচনা হলেও বিস্তার ঘটেনি। এই বিপ্লবের ভিত গড়েছিল কম্পিউটার। ডিজিটাল প্রযুক্তি বদলে দিয়েছিল শিক্ষা জগতের ইতিহাস। মাউসের ক্লিকে বই বা পত্র-পত্রিকা পড়া। মাউসের ক্লিকে পাতা উল্টানো, ডিকশনারির তাত্ক্ষণিক সাহায্য। বুক রিডার দিয়ে পড়িয়ে নেওয়া। এই পথেরই ভাগীরথী হয়ে জোয়ার আনল ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন-সমবায় ভোটে ৬৮-৮-এ জয় তৃণমূলের
আধুনিক প্রজন্ম পেল ডিজিটাল লাইব্রেরির এক বিপুল ভাণ্ডার। দুর্লভ পুরনো বই সংগ্রহের জন্য বইপাড়ায় দৌড়োদৌড়ি কমল। কমল অর্থ ও স্থান সঙ্কুলানের সমস্যা। ভিড় বাড়ল পড়াশোনার ওয়েবসাইটে। তৈরি হল বিষয়ভিত্তিক ভিডিও টিউটোরিয়াল, পরীক্ষা প্রস্তুতি, গ্রাহকের প্রশ্নের দ্রুত সমাধান। গুণমান নানা সাইটে নানারকম। কোথাও পয়সা লাগে, কোথাও বিনা পয়সায়। ডিজিটাল হল ইন্ডিয়া। আরও স্মার্ট হল দেশবাসী, মোবাইল, ট্যাবলেট আর তাদের উত্তরসূরি ফ্যাবলেট। কিশোর- কিশোরী থেকে শুরু করে ষাটের কোঠায় পৌঁছনো প্রবীণও ধীরে-ধীরে সাবলীল হয়ে উঠছেন স্মার্ট ফোনে। এ হেন মহামূল্যবান বস্তুটি আজ আর দুর্লভ নয়। এখন আর কেবল উচ্চবিত্ত মানুষের স্টেটাস সিম্বলও নয়। প্রত্যন্ত গ্রামেও মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ছে স্মার্ট ফোন। গ্রামে এমন বহু বাড়ি আছে যেখানে শৌচাগার নেই, কিন্তু স্মার্ট ফোন আছে। এমন বহু যুবক আছে যারা নাম সই করতে পারে না, কিন্তু অ্যানড্রয়েডে সাবলীল।
তরুণ প্রজন্মকে ঘুম পাড়ায় অ্যাপস (Website-Apps)। ঘুম ভাঙায়ও। আজ একটি শিশুর হাতেখড়ি হয় অ্যাপসে। এখন আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে আকাশে উল্কার দেখা মিললে তা পতিত হবার (বা মিলিয়ে যাওয়ার) আগেই সেই ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ওয়ালে আপলোড হয়ে যায়। ঘুরতে থাকে মোবাইল থেকে মোবাইলে, টিভির চ্যানেল থেকে চ্যানেলে। পড়াশুনার জগতেও যে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে তাতে আর আশ্চর্য কী! শুরু হল অ্যাপস-এ বইপড়া যত খুশি, যখন খুশি, হোক তা দুর্লভ, বিনা পয়সায়। যা কয়েকবছর আগেও ছিল অকল্পনীয়। এখন অজস্র অ্যাপস ডাউনলোড করা যায় বিনামূল্যে গুগলের প্লে স্টোর, বুক স্টোর ইত্যাদি থেকে।
এই নব উদ্ভাবন আধুনিক প্রজন্মের কাছে কতটা স্বস্তিকর, কতটা ফলদায়ক এবং কতটা উন্নয়নকারী তা নিয়ে বিতর্ক থাকবেই। এই নতুন আবিষ্কার আধুনিক প্রজন্মকে কতটা উন্নতির দিকে এগিয়ে নিতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। কিন্তু কথা হল, একদলা কাদা একজন শিল্পীর হাতে দিলে শিল্পী তা দিয়ে প্রতিমাও গড়তে পাবেন আবার দৈত্যও বানাতে পারেন। সবটাই নির্ভর করছে তাঁর মানসিকতার উপর। তেমনই প্রযুক্তিকে কে কীভাবে ব্যবহার করবে তা নির্ভর করছে ব্যবহারকারীর চাহিদার উপরেই। ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অভিভাবকের গাইডেন্স এবং নজরদারি দরকার হতে পারে। ইন্টারনেট-অ্যাপসের (Website-Apps) হাত ধরে ঘটবে নতুন চেতনার বিকাশ। পড়াশোনার এই যুগান্তকারী সুযোগ-সুবিধার যথোচিত সদ্ব্যবহার করলে ঘটতে পারে জ্ঞান ও বৌদ্ধিক সূত্রে বহুমুখী নবজাগরণ।