ব্যুৎপত্তিগত ভাবে গাজন শব্দটি এসেছে গর্জন শব্দ থেকে। গর্জন > গজ্জন > গাজন। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষে আছে, “ধর্মের উৎসবে ভক্তগণ ‘জয় জয় নিরঞ্জন’, ‘ধর্ম জয়’, ‘জয় জয় ধর্ম’ ইত্যাদি বলিয়া উচ্চস্বরে গর্জন করে বা ডাকে; এইজন্য ধর্মের ‘উৎসব’, ‘ভক্তগণ’, ‘ধর্মমন্দির’ সবই ‘গাজন’ শব্দে অবিহিত হয়। চড়ক পার্বণেও শিবের উৎসবে ‘গাজন’ শব্দ ঐ সকল অর্থেই ব্যবহৃত হয়। শিবের গাজন, ধর্মের গাজনেরই পরিণাম”।
আরও পড়ুন-কুসুমে কুসুমে চরণচিহ্ন
যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি তাঁর ‘পূজাপার্বণ’ গ্রন্থে বলেছেন, “শিবের গাজনের প্রকৃত ব্যাপার হরকালীর বিবাহ, সন্ন্যাসীরা বরযাত্রী। তাহাদের গর্জন হেতু ‘গাজন’ শব্দটি আসিয়াছে। ধর্মের গাজনে মুক্তির সহিত ধর্মের বিবাহ হয়। দুই বিবাহই প্রচ্ছন্ন।”
গ্রামবাংলায় ধর্মের বা শিবমন্দিরকে ‘গাজন ঘর’, গাজনের স্থানকে ‘গাজন তলা’, আর এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মেলাকে ‘গাজন মেলা’ বলে।”
গাজনের কতকগুলি পর্ব থাকে, যেমন— বার কামান, কামলা তোলা বা কামিখ্যা ঘট আনা, গামীরকাটা, রাজাভাটা, ফলভাঙা, ফুলভাঙা, রাতগাজন, দিনগাজন, আঁশপান্না ইত্যাদি। এর মধ্যে বেশির ভাগ কাজ উপবাস করে, বা হবিষ্যি খেয়ে বা দিনে একবার আহার গ্রহণ করতে হয়। শুধু তাই নয় কাজগুলো করার আগে স্নান করতে হয় বা কাজগুলো করার সময় স্নান করতে হয়। তখন দিনে কয়েকবার স্নান করা হয়ে যায়। সব মিলিয়ে গাজনের আচার পর্বগুলি পালন করা বেশ কষ্টকর।
আরও পড়ুন-অবনীন্দ্রনাথ এবং আরও কয়েকজন
বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট’। গাজনের এই কঠোর আচারগুলি ভক্তারা সমবেতভাবে করে গাজন সফল করে থাকে। কোথাও কোথাও সন্ন্যাসীদের ভক্তা, ভক্তে, বেরো বলা হয়। ভক্তা বা সন্ন্যাসী হল সেই সব ভক্ত বা পূণ্যার্থী যাঁরা গাজনের এই সব কৃচ্ছ্রসাধন কাজগুলি করে থাকেন। সাধারণ ভক্তদের থেকে ভক্তা বা সন্ন্যাসীদের পার্থক্য হল, ভক্তারা এমন কিছু আচার পালন করে যেগুলো সাধারণ ভক্তবৃন্দ করে না।
এর মধ্যে প্রথম হচ্ছে উদরী গ্রহণ। তার আগে ‘বার কামান’ করে নেয়। অর্থাৎ নিরামিশ খায় ও ক্ষৌরকর্ম করে; মানে চুল, দাড়ি ও নখ কাটে। বার কামান অবশ্য অনেক পুজোতে সাধারণ ভক্তরাও করে। সাধারণত কামানের পরদিন ভক্তারা উদরী বা উপবীত অর্থাৎ পৈতা গলায় ধারণ করে। এটা পরিয়ে দেয় পুরোহিত।
আরও পড়ুন-বিধানসভায় আসন বিন্যাস
সেদিন থেকে ভক্তারা নিজগোত্র থেকে দেবগোত্রে প্রবেশ করে। শিব-গাজনের ক্ষেত্রে পুরোহিতের সামনে মন্ত্র উচ্চারণ করে বলে, “স্বগোত্রং পরিত্যজ্য শিবগোত্রে প্রবিশয়।” অন্যান্য গাজনের ক্ষেত্রে সেই সব ঠাকুরের গোত্রে না ঢুকে বলে “দেবগোত্রে প্রবেশ করলাম।” গাজন শেষে আবার সবাই উদরী ত্যাগ করে নিজ গোত্রে ফিরে আসে। তখন বলে, ‘‘দেবগোত্রং পরিত্যজ্য স্বগোত্রে প্রবিশয়।” এটা সাধারণ ভক্তদের করতে হয় না।
গাজনের ভক্তারা হাতে বেতের লাঠি নেয়। কোথাও কোথাও ফুল তোলার জন্য হাতে ফুলের সাজি থাকে। পরনে থাকে নতুন ধুতি ও গামছা। নতুন না হলেও কাচা কাপড় তো লাগবেই।
এ-ছাড়া ভক্তাদের ব্যক্তিগত কৃচ্ছ্রসাধন তো আছেই যেমন উপবাস, হবিষ্যি খাওয়া, গাজনের ক’দিন সংযত জীবন যাপন করা, পাট (কোথাও কোথাও শাল বলে) অর্থাৎ লোহার পেরেক গাঁথা পাটাতন নিয়ে স্নান করাতে যাওয়া, তার ওপর শোওয়া, বানফোঁড়া, চড়কে ঘোরা, আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটা, হিন্দোল সেবা অর্থাৎ পা উপরে বেঁধে মাথা নিচে রেখে দোল খাওয়া ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-কাবুলে বিস্ফোরণ
স্থান বিশেষে গাজনের আচার বিভিন্ন হয়। তবে সংক্ষেপে বলতে পারি, ভক্তা বা সন্ন্যাসীরা বার কামান, উদরী গ্রহণ, দেবগোত্রে প্রবেশ ও কিছু আত্মনিগ্রহমূলক নানা আচরণ করে। যেগুলি সাধারণ ভক্তরা করে না। সাধারণ ভক্তর সঙ্গে ভক্তার মূল পার্থক্যের জায়গা ধরতে পারি উদরী গ্রহণ এবং নিজ গোত্র থেকে দেব গোত্রে প্রবেশ।
গাজন শব্দের উৎপত্তির আরেকটি ভিন্নমত আছে, তা হল, ‘গাঁ-জন অর্থাৎ গ্রাম জনের উৎসব’। ১৮২৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির এক অনুষ্ঠানে শ্রীযুক্ত রামকমল সেন চড়কের গাজন সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ পাঠের সময় এই কথা বলেছিলেন। গ্রামবাংলায় লোকজন জড়ো হয়ে উৎসবে মাতলেও গাজন বলে থাকে। তবে নামে গাজন হলেও ভক্তা ওঠা, পাট বার হওয়া, বাণ ফোঁড়া— এসব কিছু হয় না। শুধু পূজা ও মেলা হয়।
আরও পড়ুন-বাংলার উন্নয়ন রুখে দিতে চাইছেন বিরোধী দলনেতা
বাঁকুড়ায় শিব পূজা-সহ অন্যান্য পূজাতে এরকম কয়েকটি মেলা বসে। অথবা পূজা উপলক্ষে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। সেই উৎসবগুলিও গাজন বলে পরিচিত। যেমন ছাতনা থানার ঝাঁটিপাহাড়িতে ২৬ জ্যৈষ্ঠ শিবপূজা উপলক্ষে শ্রীনাথ গাজন, বাঁকুড়া থানার উড়িয়ামা গ্রামে ১১ বৈশাখ শিবপূজায় হুচুক গাজন, ছাতনাতে রামনবমীর সময় বাসন্তী গাজন, ওন্দা থানার লেদাসন গ্রামে চৈত্র কালী পূজার সময় কালীগাজন, ওন্দা থানার রতনপুর গ্রামে সরস্বতী গাজন, বাঁকুড়া থানার শিবরামপুর (নররা গ্রাম পঞ্চায়েত) গ্রামে দোলযাত্রার সাতদিন বাদে অষ্টমী তিথিতে শীতলা গাজন। এগুলি একটিও আমাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী গাজন নয়। এগুলি জনসমাগমজনিত কারণে ‘গাজন’ নামে পরিচিত।
সাধারণভাবে বাঙালির বৃহৎ অংশের ধারণা গাজন মানে শিবের গাজন। শিশুদের ছড়ায় তার উদাহরণ, ‘আমরা দুটি ভাই, শিবের গাজন গাই/ ঠাকুমা গেছেন গয়া কাশী, ডুগডুগি বাজাই।’ কিন্তু শিব ছাড়াও অন্যান্য দেবতারও গাজন হয়; তার ইঙ্গিত আমরা ওপরের সংজ্ঞাতেই পেয়েছি। যেমন বাঁকুড়া জেলাতেই আছে ধর্মরাজের গাজন, চণ্ডী গাজন, ভগবতীর গাজন, মনসা গাজন, ভৈরব গাজন, বসন্তকুমারী মায়ের গাজন, ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-বিহারে মাঝগঙ্গায় সিলিন্ডার ফেটে আগুন, মৃত ৫
এখানে তিনটি অভিনব গাজনের কথা উল্লেখ করা হল যা অন্য কোনও জেলায় দেখা যায় না। এর মধ্যে প্রথম দুটি হচ্ছে জনসমাগম জনিত কারণে গাজন, তৃতীয়টি প্রকৃত গাজন।
হেলনা শুশুনিয়া গ্রামের শুশুনেশ্বরী গাজন—
জগদলা ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েত, বাঁকুড়া থানা।
হেলনা শুশুনিয়া গ্রামে প্রতিবছর বৈশাখ মাসের ১৫-১৬ তারিখে একটি শালবৃক্ষকে ঘিরে একটি উৎসব হয়। গ্রামে একটি বাঁধানো থান আছে। সেখানে আগে একটি শাল গাছ ছিল, এই গাছকেই দেবতা বলে পূজা করে।
গ্রামের ঠাকুর ইনি, তাই গ্রামের নাম অনুসারে দেবীর নাম শুশুনেশ্বরী। পূজা উপলক্ষে প্রচুর লোক জমায়েত হয়। তাই এই উৎসবকে বলে শুশুনেশ্বরী গাজন। এই দুদিন মেলা বসে। মেলায় খেলনা, খাবার, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, নাগরদোলা সব রকম পশরা থাকে। ৮০-১০০টি দোকান আসে। গ্রামের সবাই এই দুদিনের জন্য অপেক্ষা করে। সারা গ্রাম আনন্দে মেতে ওঠে। সেই আনন্দের ভাগ নিতে আশেপাশের ৬-৭টি গ্রামের লোক আসে। দুদিন নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, যেমন বাউল, ছৌ-নাচ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন-হাসপাতালে গুলি, আহত আসামি
হেলনা শুশুনিয়া গ্রামে শুশুনেশ্বরী দেবীর আগমন অনেকদিন আগে। গ্রামে একসময় কলেরা মহামারী রূপে দেখা দিয়েছিল। তখন গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে গ্রামের রক্ষাকর্ত্রী দেবী বলেন, ‘শাল বাগানের মধ্যে আমি আছি। সেখানে পূজা কর। গ্রাম থেকে মহামারী দূর হয়ে যাবে।’ শুধু তাই নয় দেবী সেই শালগাছ নির্দিষ্ট করে চিনিয়েও দেন। পূজা করার পর সত্যি সত্যি কলেরার প্রাদুর্ভাব কমে যায়, সেই থেকে পূজা শুরু।
বার্ষিক গাজন ছাড়াও পয়লা মাঘ পূজা হয়। সেদিন হয় ছাগবলি। গাজনে বলি হয় না। ছাগবলি দেয় ব্রাহ্মণ। সে সময় কিছুতেই বলি দেওয়া যাচ্ছিল না। তখন স্বপ্নে মা বলে গঙ্গারামের হাতে বলি নেব। বর্তমানে তাঁর বংশধর তারকনাক বন্দ্যোপাধ্যায় পূজা করেন। ছাগলকে সানবাঁধা পুকুরে স্নান করিয়ে ছাগবলি দেওয়া হয়। এসব তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন গঙ্গারামের পৌত্র লালমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফতেপুর গ্রামে দিদিঠাকরুনের গাজন—
করিশুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েত, ইন্দাস থানা।
আরও পড়ুন-আম্পায়ারের ভুলে সবিতাদের হার
আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে ফতেপুর গ্রামে বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল। তখন যজ্ঞেশ্বর পণ্ডিত নামে এক ব্যক্তি গ্রামে আসেন। তাঁর আসল বাড়ি ছিল বর্তমান পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরের মাটিবেড়া গ্রামে। তিনি জলপড়া বা অন্যান্য ওষুধপত্র দিতেন। তিনি ‘দিদিঠাকরুন’ নামে এক দেবীর পূজা করতেন। দিদিঠাকরুনের মূর্তিটি একটি গোলকার শিলা মূর্তি। দিদিঠাকরুনের পূজা করে ফুল-জল, চরণামৃত দিতেন। গ্রামের লোকজন এই চরণামৃত খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। সেই থেকে গ্রামে দিদিঠাকরুনের পূজা বা গাজন হয়ে আসছে। যে-ঘটে প্রথম পূজা হয়েছিল সেই ঘট এখনও আছে। যজ্ঞেশ্বর পণ্ডিত বিবাহ করেননি। তার এক ভাইপো ছিল নাম দর্পহারী পণ্ডিত। তাঁর বংশধররা বর্তমানে মন্দিরের পুরোহিত, বর্তমান পুরোহিতের নাম স্বপন পণ্ডিত।
আরও পড়ুন-শেষ চারে গেলেন সিন্ধু
বর্তমানে দিদিঠাকরুনের একটি মন্দির আছে। এই মন্দিরে আষাঢ় মাসের কৃষ্ণাপঞ্চমীর আটদিন পর হয় এই গাজন। গাজনে কোনও ভক্তা হয় না। তবে রাত-গাজন ও দিন-গাজন হয়। তার আগে ঘট তোলা। মায়ের ঘট তোলা হয় কানাখাল থেকে। রাতগাজনের রাতে দিদিঠাকরুন ছোট সিংহাসনে করে শোভাযাত্রা সহকারে গ্রামের শিবমন্দিরে আসে। মন্দিরের পূজারী সিংহাসন মাথায় চাপিয়ে নিয়ে আসে। শিবমন্দিরে এসে মা বসেন। তখন বাদ্যযন্ত্র বাজে। আতশবাজি ফাটে। এখানে বলে বাজির কারখানা। আবার ভোরের দিকে শোভাযাত্রা করে মা নিজের মন্দিরে ফিরে যায়।
দিন-গাজনের দিন পাশাপাশি প্রায় দশটি গ্রাম থেকে প্রচুর লোক মন্দিরে পূজা দিতে আসে। যারা মানত করে তারা মায়ের সামনে বলি দেয়। যে ছাগ বলি হয় তার মুড়ি অর্থাৎ মাথা পুরোহিত পায়। ছাগলের একটি পা মন্দিরে রেখে দেওয়া হয় প্রসাদ হিসাবে বিলি করার জন্য। বাকিটা যিনি বলি দিলেন তিনি নিয়ে যান।
আরও পড়ুন-শেষ চারে গেলেন সিন্ধু
পূজা শেষ হবার পর বিকালে এত লোকের সমাগম হয় যে মেলা বিশাল রূপ নেয়। এমনিতে মেলা দুদিন বসে। মেলাতে নাগরদোলা-সহ নানা দোকান আসে। গ্রামের প্রতি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসে। মেলার পরদিন গ্রামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পূজা হয়। গ্রামের লোকেরা চাঁদা তুলে এই গাজনের আয়োজন করেন।
খয়েরবনি গ্রামের বসন্তকুমারী মায়ের গাজন—
ধুলাই গ্রাম পঞ্চায়েত, সোনামুখী থানা।
খয়েরবনী গ্রামে ‘মা বসন্ত কুমারী মাতা’র মন্দির আছে। মন্দিরটি মাত্র দুই বছরের পুরাতন। আগে থান ছিল। অনেক দিন আগে এই মন্দির চত্বরটি ঝোপ ঝাড়ের মধ্যে ছিল এবং একটি উইঢিপি ছিল। একটি গাভির বাচ্চা হবার পর বাড়িতে কোনওদিন দুধ দিত না। কারণ জানতে মালিক গাভিটিকে অনুসরণ করে দেখেন যে, গাভিটি নিজ নিজই উইঢিপি তে একটি পাথরের উপর দুধ দিচ্ছে।
তখন ওই ব্যক্তি গ্রামের লোকেদের ডেকে আনলে, সবাই গিয়ে দেখে ওটা কোনও পাথর নয়। ওটা একটি প্রাচীন শিলার টুকরো।
তারপর থেকেই ওই জায়গায় পূজা শুরু হয় এবং কয়েক বছর পর গাজন শুরু হয়েছিল। গাজন প্রায় ১০০ বছরের পুরানো। গাজনে ভক্তা হয় ১৫-২০ জন। নির্দিষ্ট পাটভক্তা অর্থাৎ মূল সন্ন্যাসী নেই। প্রতি বছর পরিবর্তন হয়। পুরোহিত অবশ্য বংশপরম্পরায়, বর্তমান পুরোহিতের নাম কাঞ্চন রায়।
আরও পড়ুন-কাকলিকে জেলা সভাপতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত কর্মীরা
জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে মঙ্গলবার অথবা শনিবারে ঘটস্থাপন করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় গাজন। দিন-গাজনের ৫ দিন আগে বার কামান বা ভক্তাকামান। গাজনের বাকি পর্ব গুলি হল গামীর কাটা, ফুল কাড়ানো, রাজাভাটা, রাতগাজন, দিনগাজন, আঁশপান্না। কারক পুকুর থেকে ঘটে জল তোলা হয়। কারক পুকুর মন্দির থেকে ২০০ মিটারের মধ্যে।
পাঁচটি গ্রাম ঘুরে ‘রাজাভাটা’ করে ভক্তারা। অর্থাৎ কামানের পরের দিন থেকে রাত-গাজনের দিন পর্যন্ত পাঁচটি গ্রামের বাড়ি বাড়ি যায় ভক্তারা মন্দিরের পাট নিয়ে। প্রতি বাড়িতে পাট নামায়। গৃহস্থ পাটটিকে পূজা করে। ভক্তাদের চাল, আনাজ দেয়। এই আদায় আঁশপান্নার কাজে লাগে। পাঁচটি গ্রাম হল বিদ্যাধরপুর, বনগ্রাম, পাঁচকোলা, তিলেডাঙা ও খয়েরবনি।
আরও পড়ুন-নিম্নচাপ ও কোটাল, আতঙ্কে সুন্দরবন
রাত গাজনের দিন দুপুর বেলা ফুল কাড়ানো হয়। অর্থাৎ ঘটের ওপর ফুল চাপানোর হয়। ঘট থেকে ফুল পড়লে গাজন শুরু হয়। সন্ধ্যা বেলায় দামোদর নদেতে পাট নিয়ে স্নান করতে যাওয়া হয়। দামোদর নদ মন্দির থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দুর। ফিরে এসে মন্দিরে বাণফোঁড়া হয়। ৮-১০ জন ভক্তা বাণ ফোঁড়েন অর্থাৎ নিজেদের দেহের চামড়া ভেদ করে লোহার তার বা শিক ঢোকান।
দিন গাজনের দিন বিকাল বেলায় গামার কাটা হয়। গামার গাছ কাটতে যাওয়া হয় গ্রামের মধ্যে; মন্দির থেকে ৮০০ মিটার দূরে। তারপর গামার ডালটিকে নিয়ে গ্রামে ঘোরা হয়।
শেষদিন থাকে আঁশপান্না ভক্তা-সহ সবার জন্য। প্রায় ৭০০-৮০০ লোক মাংস- ভাত খায়। এদিন ষোলো আনার তরফ থেকে একটি ছাগবলি দেওয়া হয়। মানসিক থাকলে অন্যরাও ছাগল বলি দেয়। সেই ছাগলের মাংস প্রসাদ হিসাবে আঁশপান্নায় খাওয়া হয়।
আরও পড়ুন-জনির জোড়া গোলে জিতল মোহনবাগান
গাজনে ১ দিন যাত্রা এবং ১ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আগে গ্রামের লোকেরাই দুদিন যাত্রা করতেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সেই আগ্রহ না থাকায় বাইরে থেকে যাত্রাদল আনা হয়। মন্দিরের কিছু জমি আছে, তাই চাষ করে এবং গ্রামে আদায় করে। এভাবে গাজনের খরচ ওঠে। গাজনের আয়োজন করে গ্রাম্য ষোলো আনা কমিটি।