বর্তমানে আবহাওয়া, কৃষিক্ষেত্র, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, সুনামি, দাবানল, বনসৃজন ইত্যাদি থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, জল-স্থল ও আকাশ পথের যানচলাচল, পৌরসভা, শেয়ার বাজার, সমুদ্রে মাছ ধরা ইত্যাদি নানারকম কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল।
আরও পড়ুন-বিশাখাপত্তনম বন্দরে আগুনে ভস্মীভূত ৩৫টি মাছ ধরার নৌকা, কয়েক কোটির ক্ষতি আশঙ্কা
যার সংক্ষিপ্ত নাম জিস (GIS)। অতি-আধুনিক বিজ্ঞান, উপগ্রহ-প্রযুক্তি-সহ নানা রকম ডিজিটাল যন্ত্র ও সফটওয়্যার এর ওপর নির্ভর করে মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার হচ্ছে। বিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, প্রযুক্তির সাহায্যে জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেমের কর্মকাণ্ডের পরিধি তত বাড়ছে। বলাই বাহুল্য অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট পরিষেবা এর প্রধান অঙ্গ। এই কারণে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও, ‘জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম’ বিজ্ঞানের একটি পাঠ্যবিষয়।
আরও পড়ুন-২০২৩ মিস ইউনিভার্সের খেতাব জিতলেন শেনিস পালাসিওস, ভারতের প্রতিনিধিত্ব করলেন শ্বেতা শারদা
উপগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহ
পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগ জল। কাজেই কেবলমাত্র মানমন্দির দিয়ে সমগ্র পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ প্রায় অসম্ভব। তাই বিভিন্ন ধরনের উপগ্রহের প্রয়োজনীয়তা। নিম্নকক্ষের (উচ্চতা ৫০০ কিমি) উপগ্রগুলি পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চলের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের তথ্য আদান-প্রদান ছাড়াও নানাভাবে পরিবেশের নানা তথ্য সংগ্রহ করে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য একই উপগ্রহের গতি কখনও দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তর মেরু আবার উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু হয়। এদের যথাক্রমে ‘টি বাস ১’ ও ‘টি বাস ২’ বলে। ছবি আঁকতে গেলে যথাক্রমে বিন্দু (পয়েন্ট), লাইন ও ক্ষেত্র (ফ্রেম)-এর প্রয়োজন। সেইরকম উপগ্রহ, তথ্যের সাহায্যে ছবি আঁকার জন্য, উপগ্রহ থেকেও পয়েন্ট স্ক্যান, লাইন স্ক্যান ও ফ্রেম স্ক্যান করে তথ্য সংগ্রহ করে। এই উপগ্রহগুলির পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রদক্ষিণ করবার সময় ১২০০ কিমি চওড়া জায়গা স্ক্যান করতে করতে যায়। পৃথিবীর ঘূর্ণনের জন্য দ্বিতীয়বার একই জায়গায় প্রায় ১২ দিন (১২ x ২৪ ঘণ্টা) পরে আসে। তাই একাধিক উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে তথ্যগুলি দিয়ে সরাসরি কোনও পূর্ণ ছবি পাওয়া যায় না।
আরও পড়ুন-ফাঁকা বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ৪ ভাইবোনের!
সেজন্য তথাগুলিকে প্রথমে স্থান, সময় ও নাম (কীসের তথ্য) দিয়ে অঙ্কের ছক বা টেবিলের মধ্যে সংরক্ষণ করে, তারপর ছবি আঁকার জন্য ব্যবহার করা হয়। যখন পয়েন্ট স্ক্যান থেকে তথ্য টেবিলে রাখা হয় তখন বলে রাস্টার তথ্য। আবার যখন লাইন স্ক্যান থেকে তথ্য টেবিলে রাখা হয় তখন বলে ভেক্টর তথ্য। রাস্টার তথ্য খুব উপযোগী, কারণ বিশ্লেষণ অনুযায়ী বড় বা ছোট করা যায়। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম উপগ্রহ (উচ্চতা ২০,০০০ কিমি, প্রদক্ষিণ সময় ১২ ঘণ্টা) ও ভূসমালয় উপগ্রহ (উচ্চতা ৩৬,০০০ কিমি) পরিবেশের নানা তথ্য সংগ্রহ করে এবং ইন্টারনেটে আপলোড করে। বর্তমানে অপটিক্যাল ফাইবার যা ইন্টারনেটে খুব ব্যবহার হচ্ছে। সম্প্রতি চেন্নাই উপকূল থেকে পোর্টব্লেয়ার পর্যন্ত সমুদ্রের তলা দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার পাতা হয়েছে, এই রকম অনেক সমুদ্রের তলা দিয়ে অনেক আগে থেকেই পাতা শুরু হয়েছে। প্রায় ২ লক্ষ কিমি প্রতি সেকেন্ড বেগে তথ্য আদান প্রদান হয়। সমুদ্রের তলায় ভূমিকম্প হলে অপটিক্যাল ফাইবার-এর অবস্থানের পরিবর্তন হয়। তখন অনুভূমিক বা উলম্ব মেরুকরণের জন্য তথ্যের গতি পরবর্তন হয়। এর থেকে কোথায় কখন ভূমিকম্প হল জানা যায় এবং ইন্টারনেটে আপলোড হয়ে যায়। সুনামির পূর্বাভাসে খুব দরকার।
আরও পড়ুন-রাজনীতিতে পা দিলেন শাকিব আল হাসান
তথ্য সংরক্ষণ ও ক্লাউড কম্পিউটিং
মূলত সময়ের সাপেক্ষে বিন্দু (পয়েন্ট), রেখা (লাইন) ও ক্ষেত্র (এরিয়া) পদ্ধতিতে পৃথিবীর প্রতিটি অবস্থানের তথ্য সংগ্রহ করে ‘তথ্যের ছবি’ আঁকা হয়। তারপর বিশেষ ভাবে প্রক্ষেপ (মার্কেটার প্রজেকশন) করে ওই ‘তথ্যের লেখচিত্র’ প্রস্তুত করা হয়। এইভাবে প্রতিটি তথ্যের জন্যে আলাদা আলাদা ‘তথ্যের লেখচিত্র’ প্রস্তুত করা হয়। তারপর এই প্রায় অগণিত তথ্যের লেখচিত্রগুলি সংগঠিত করে একটি সমগ্র পৃথিবীর সমগ্র তথ্যের ডিজিটাল ‘মেঘে’ রূপান্তর করে ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়। যার যেরকম তথ্যের প্রয়োজন ওই তথ্যের মেঘের থেকে ডাউনলোড করা হয়। সম্পূর্ণ তথ্যের মেঘ ডাউনলোড করার প্রয়োজন পড়ে না। যাকে এক কথায় ‘ক্লাউড কম্পিউটিং’ বলে। মনে রাখতে হবে, তথ্যগুলি আমাদের সমগ্র পরিবেশের বা সমগ্র পৃথিবীর। এর মধ্যে পরিবেশের বাইরের তথ্য আপলোড করা যেতে পারে। বলতে গেলে সার্বভৌমিক তথ্য, যা ‘ক্লাউড কম্পিউটিং’ নামের যথার্থতা এনে দেয়।
আরও পড়ুন-ফাঁকা বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু ৪ ভাইবোনের!
জিস (GIS)-এর প্রয়োগ
পরিবেশের তথ্য জিস থেকে ডাউনলোড করে আবহাওয়া ও কৃষি বিজ্ঞানে পূর্বাভাসের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। সমগ্র পৃথিবীর বিমান চলাচলের জন্য সমস্ত রকমের তাৎক্ষণিক তথ্যের আদান-প্রদান হয় জিস-এর মাধ্যমে। আধুনিক ট্যাক্সি চলাচল থেকে শুরু করে যত রকমের অনলাইন পদ্ধতি আমরা জানি তা সবই কোনও না কোনও ভাবে জিস-এর অবদান। তবে জিস আমূল পরিবর্তন এনেছে তাৎক্ষণিক ভূমিকম্পের স্থান-কাল ও মাত্রা নির্ণয়ে এবং সুনামির পূর্বাভাসে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলোজি নিউ দিল্লিতে জিস-এর সাহায্যে ভূমিকম্পের পূর্বের কম্পন থেকে শুরু করে পরবর্তী কম্পনের সমস্ত তথ্যের স্থান, সময় ও মাত্রার খবর অনিমেশন করে প্রকাশ করে। এতে সাবধানতা অবলম্বনে ও ভূমিকম্পের পরবর্তী উদ্ধারে খুব কাজে লাগে এবং জীবনহানি রোধ হয়।