গতকাল ৭ নভেম্বর ছিল অভিষেকের জন্মদিন (Abhishek Banerjee’s Birthday)। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— বাংলার এই সময়ের রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে জনপ্রিয় মুখ ও মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো। ওকে দেখছি সেই ছোট থেকেই। কালীঘাটের বাড়ির এঘরে ওঘরে, উঠোনে, বারান্দায় ছোট্ট সৌম্যকান্তি ছেলেটি চোখের সামনেই কখন যে বড় হয়ে গিয়েছে তা সেভাবে খেয়ালই করিনি।
এই ছবিটি যখন হাজরায় মার খেয়ে দিদির মাথা ফেটে গেছিল সেই সময়ের। দেখতেই পাচ্ছেন অভিষেক তখন বেশ ছোট। মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় ঠাকুরমা অর্থাৎ দিদির মা গায়ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোলে বসে থাকা ছোট্ট অভিষেকের সঙ্গেই দিদি কথা বলছেন। এমনিতে এখন এটা সর্বজনবিদিত আমাদের দিদি যতটা রাজনৈতিক ঠিক ততটাই ঘরোয়া। আমি দেখেছি দিদি বাড়িতে ঢুকলেই একদম অন্য মানুষ। ফলে অভিষেক সহ বাড়ির অন্যান্য বাচ্চারা দিদির ভীষণ প্রিয়। আমার চিত্র সাংবাদিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ জুড়েই রয়েছে দিদিকে কভার করা। ফলে কালীঘাট গেলেই অভিষেককে দেখতাম ওর বয়সি দু’-একজনের সঙ্গে খেলছে। অনেকসময় ওকে সরিয়ে দিয়ে দিদির ছবি তুলেছি।
অভিষেক রাজনীতির বীজ সংগ্রহ করেছে তার কারণ আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ওইটুকু বয়স থেকেই কিন্তু ও দেখেছে পিসিকে (অভিষেক পিসি নয়, দিদি বলেই সম্বোধন করে) বারবার আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হতে, নার্সিংহোমে ভর্তি থাকতে। সেটাই হয়তো ওকে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট করেছিল। যে কারণেই হয়তো ওকে ছোটবেলায় কয়েকজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলতে দেখতাম। তারপর বড় হবার পরতে পরতে সর্বদাই বটবৃক্ষের মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক রাজনীতির শিক্ষককে দেখার পর রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতা নেই।
আরও পড়ুন-দ্বিচারিতা করছেন বিকাশ, বিস্ফোরক হবু শিক্ষকরা
অভিষেকের রাজনীতি নিয়ে অবশ্য অনেক কথা শুনি যে পারিবারিক ভাবেই ও এই প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে। তাহলে তো ভারতবর্ষের রাজনীতিতে গান্ধী পরিবার পরম্পরায় রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত। এর বাইরে মুলায়ম-অখিলেশ, লালু-তেজস্বী, করুনানিধি-স্ট্যালিন, বাল ঠাকরে-উদ্ভব ঠাকরে-আদিত্য ঠাকরে, রাজেশ পাইলট- শচীন পাইলট, মাধবরাও সিন্ধিয়া- জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ফারুক আবদুল্লা- ওমর আবদুল্লা ইত্যাদি ইত্যাদি বহুজনই পারিবারিক রাজনীতির পরম্পরা রক্ষা করছে। তাহলে অভিষেকের ক্ষেত্রটা আলাদা কিসে? তবে হ্যাঁ, এটা আমি বলতে পারি অভিষেক নিজের রাজনৈতিক পথকে তৈরি করেছে কিছুটা অন্তরালে থেকেই।
অভিষেককে বাংলার বিরোধী দল বিশেষ করে বিজেপির নেতা-নেত্রীরা আক্রমণ করেন তখন আমার খুব হাসি পায়। এই বাংলায় বিজেপিতে বেশিরভাগ নেতাই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল। যাঁদের প্রত্যেককেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৈরি করেছেন। সেই তাঁরাই বিজেপিতে যোগ দিয়েই দেখেছি একযোগে অভিষেকের দিকে আঙুল তুলতে… অর্থাৎ বোঝাই গিয়েছিল যে, এঁরাই দলকে ধোঁকা দিয়ে দলনেত্রীকে বিপদে ফেলার ছক কষছিলেন। যা অভিষেক বুঝে যায়। দল ও সংগঠনের প্রতি এই দায়বদ্ধতা অভিষেককে (Abhishek Banerjee’s Birthday) নিশ্চয়ই অনেক বড় মাপের মানুষ তৈরি করবে। আজ যখন গোটা ভারতবর্ষ অভিষেককে চেনে জানে। আলোচনা- সমালোচনা করে। ওর বক্তৃতা সংসদে প্রশংসা পায় তখন চিত্র সাংবাদিক হিসেবে এটা ভাবতে খুব ভাল লাগে যে এই ছেলেটিকে শৈশব থেকেই আমি দেখছি।
বিভিন্ন সভায়, দলীয় কাজকর্মের ভিতরে আমার শুধু পিছিয়ে সেই ত্রিশ বছর আগে চলে যাই… যেখানে একটা ছোট ছেলে টুকটুক করে দিদির পাশে পাশে খেলা করত… সেই ছেলেটা আজ তার দিদিকে সঙ্গত করছে দৃঢ়তার সঙ্গে… এটা আমার দেখে খুবই আনন্দ হয়।
আজ সেই ছোট ছেলেটার জন্মদিন। ওকে আশীর্বাদ করছি ও ভাল থাক। আনন্দে থাক। আর যে সামাজিক কর্তব্যে ব্রতী হয়েছে তারজন্য মানুষের মনে গেঁথে যাক।
শুভ জন্মদিন অভিষেক। এগিয়ে যাও এভাবেই। আগামীর কান্ডারি হয়ে বাংলাকে সুন্দর রেখো। গোটা বাংলার যুবসমাজ ও শুভবুদ্ধির মানুষরা তোমার সঙ্গে আছে।