মোহালি, ২০ সেপ্টেম্বর : ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে অবিশ্বাস্য একটা পার্টনারশিপ খেলে টিম ডেভিড (১৮) যখন ফিরে যাচ্ছেন, জিততে অস্ট্রেলিয়ার দরকার আর ২ রান। যেটা পরের বলেই একটা বাউন্ডারিতে সেরে ফেললেন প্যাট কামিন্স। মোহালিতে চার বল বাকি থাকতে অস্ট্রেলিয়া জিতল ৪ উইকেটে।
আরও পড়ুন-প্রয়াত কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তব
এই মাঠে এটা রেকর্ড চেজ। যা বিশ্বকাপের আগে ফিঞ্চদের মনোবল বাড়িয়ে দিল। একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিল ভারতীয় বোলিং নিয়ে। ২০৮ রান ডিফেন্ড করতে না পারাটা অবশ্যই বিপদ সংকেত। সেটাও বিশ্বকাপের আগে। পরিসংখ্যান বলছে ১৭ ও ১৮ ওভারে ভারতীয় বোলাররা দিয়েছেন ৩৭ রান। ১৮তম ওভারে হর্ষল একাই দিলেন ২২ রান। ওয়েড ২১ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে গেলেন, ঠিক আছে। কিন্তু শেষদিকে হর্ষল-ভুবি কেউ তাঁকে চ্যালেঞ্জ দিতে পারেননি। দলে থেকেও বুমরা কেন খেলেননি, সেটা একটা প্রশ্ন। তিনি না খেলায় ডেথ ওভারে দিশাহারা লেগেছে ভারতীয় বোলিংকে। ভুবি চার ওভারে দিলেন ৫২ রান। হর্ষল ৪৯। চাহাল ৩.২ ওভারে ৪২।
আরও পড়ুন-আজ উদ্বোধন হবে খাদির অভিনব জনতা শাড়ি
ক্যামেরন গ্রিন অস্ট্রেলিয়ার এই দলে থাকতেন না, যদি না মার্শ বা স্টয়নিস চোটের জন্য বাইরে চলে যেতেন। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার গ্রিন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস শুরু করলেন। আর যেভাবে খেললেন তাতে অজি নির্বাচকদের সামনে কঠিন অঙ্ক হাজির করে দিলেন। বিশ্বকাপে মার্শরা ফিরে এলে গ্রিন কোথায় খেলবেন! তাঁকে বাদ দেওয়ারও উপায় নেই।
দশ ওভারে ১০০ রান তুলে দেওয়ার পর থামলেন গ্রিন। অক্ষরের বল গ্যালারিতে ওড়াতে গিয়ে প্রায় মহাশূন্যে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিরাট কোহলির ক্যাচ মিস করার রেকর্ড নেই। তিনি আরামসে বলের নিচে এসে গ্রিনকে (৩০ বলে ৬১) ধরলেন। একটু আগে অক্ষর আর রাহুল একটা করে ক্যাচ ফেলেছেন। মোহালি মাঠের নিচু ফ্লাড লাইট উঁচু ক্যাচের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে।
আরও পড়ুন-বিজেপি একটি নারীদ্বেষী দল
টি-২০ ক্রিকেটের মজাই হল রং বদলানো। ঝোড়ো শুরু করে একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১০৯/১। আউট হয়েছেন শুধু ফিঞ্চ (২২)। ছবিটা চার ওভারের মধ্যে বদলে গেল যখন অস্ট্রেলিয়া ১৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বসল। স্মিথ (৩৫) আর ম্যাক্সওয়েল (১) পরপর ফিরে গেলেন উমেশ যাদবের বলে। উমেশ এই দলে থাকতেন না যদি মহম্মদ শামির করোনা না হত। পরিস্থিতি আরও খারাপ হল জশ ইঙ্গলিশ (১৭) ফিরে যাওয়ার পর। কিন্তু ওয়েড আর ডেভিডের ৬২ রানের ঝোড়ো পার্টনারশিপ অস্ট্রেলিয়াকে জয়ে পৌঁছে দিল। সিঙ্গাপুরের হয়ে কেরিয়ার শুরু করা ডেভিডের এটা অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে প্রথম ম্যাচ। টি-২০ স্পেশ্যালিস্ট। ফ্রাঞ্চাইজি লিগে তাঁর খুব কদর।
আরও পড়ুন-বায়ু থেকেই বাত
মোহালিতে রাতের ম্যাচের সিমাররা যে সুবিধা পান, এদিন সেটা হ্যাজলউড ছাড়া কেউ পাননি। পেলে ভারতের রান২০৮/৬ হত না। অস্ট্রেলিয়াও এত সহজে রান তুলে ফেলত না। কামিন্স চার ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটের মুখ দেখেননি। হ্যাজলউড বরং ৩৯ রানে দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে ধাক্কা দিয়ে গেলেন।
তবে এই ধাক্কাটা কিছুতেই হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো নয়। কেন তিনি বিশ্বকাপে ব্যালেন্সিং ফ্যাক্টর হতে পারেন, তার একটা আন্দাজ পাওয়া গেল এই ম্যাচে। ৩৫ রানে রোহিত (১১) আর বিরাটকে (২) হারিয়ে চাপে পড়েছিল ভারত। সেই চাপ কাটিয়ে দিলেন বরোদা অলরাউন্ডার। পাঁচে নেমে ৩০ বলে ৭১ নট আউট থেকে গেলেন হার্দিক। সাতটি চার, পাঁচটি ছয়। কামিন্স-জাম্পাদের তাঁর সামনে দিশাহারা দেখাচ্ছিল।
আরও পড়ুন-অপদার্থ কেন্দ্র, আরও বেশি দামি হচ্ছে চাল
টি-২০ বিশ্বকাপের আর এক মাসও নেই। রাহুল (৩৫ বলে ৫৫) রানে ফেরায় যতটা স্বস্তি ফিরল, ততটাই অস্বস্তি বাড়াল রোহিত-বিরাটের রান না পাওয়া। রোহিত এশিয়া কাপে রান পেয়েছেন। বিরাট শুধু রান পাননি, আফগানিস্তান ম্যাচে সেঞ্চুরিও করেছেন। কিন্তু দু’জনের কাউকে দেখে মনে হল না সেই ফর্ম সঙ্গে করে মোহালিতে এসেছেন। তবে রাহুলের সঙ্গেই সূর্যকুমার যাদবকেও (২৫ বলে ৪৬) দেখে মনে হয়েছে ছন্দে আছেন। মাঠের সব কোণে বল পাঠাতে পারেন বলে তাঁকে বলা হয় থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি ব্যাটার। সূর্য কিন্তু নিজের নামের প্রতি সুবিচার করে গেলেন।
কিন্তু দিনের শেষে সেই হার নিয়েই এবার নাগরপুর যাচ্ছে ভারত। পরের ম্যাচ শুক্রবার। কয়েকদিন আগে গৌতম গম্ভীর বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে না পারলে ভারতের বিশ্বকাপে কোনও আশা নেই। গম্ভীরকে ভুল প্রমাণ করার দায় এবার রোহিতদের।