প্রতিবেদন : রাজ্যপালদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন। এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এভাবেই কটাক্ষ করল সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যপালদের স্বাক্ষরের অভাবে আটকে রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল। বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি আটকে রাখার জন্য সোমবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন-অস্থায়ী উপাচার্যকে কড়া চিঠি দিল রাজ্যের শিক্ষা দফতর
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এদিন বলেন, রাজ্যপালদের আত্ম-অনুসন্ধানের সময় এসে গিয়েছে। দেশের রাজ্যপালদের উচিত সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের বিরুদ্ধে অকর্মণ্যতা অথবা সংবিধানিক সংকট তৈরি হওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হওয়ার আগেই নিজেদের কাজ সঠিকভাবে করা। এটা তাঁদের দায়িত্ব।
সম্প্রতি পাঞ্জাবের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল আটকে রাখার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে সে-রাজ্যের আপ সরকার। এই মামলার শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি-ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও মনোজ মিশ্রর বেঞ্চ বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে রাজ্যপালদের সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এদিন পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করে আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বলেছেন, বিধানসভা মার্চ মাসে স্থগিত করা হয়েছিল। সাতটি বিল পাশ করার জন্য স্পিকার পুনরায় বিধানসভার অধিবেশন ডাকেন। কিন্তু রাজ্যপাল বলছেন যে স্পিকার নতুন করে অধিবেশন ডাকতে পারেন না। রাজ্যপাল যে বিলগুলি আটকে রেখেছেন, তার মধ্যে শিক্ষা ও আর্থিক বিল রয়েছে৷ তাই পুরো বিষয়টিকে আদালতের বিবেচনা করা উচিত। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বেঞ্চ সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে পঞ্জাবের রাজ্যপালের গৃহীত পদক্ষেপের উপর শুক্রবার একটি আপডেট রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে।
আরও পড়ুন-পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে টাস্ক ফোর্সের হানা
প্রধান বিচারপতি এদিন বলেন, কেন রাজ্যগুলিকে সুপ্রিম কোর্টে আসতে হবে? রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রীদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। প্রধান বিচারপতি সোমবার শুনানিতে বলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়ানো মোটেই কাম্য নয়। দুপক্ষ নিজেদের মধ্যে কথা বলে বিবাদ মিটিয়ে নেবে, এটাই কাম্য।
লক্ষণীয় বিষয় হল, আপ সরকার আদালতে যাওয়া মাত্রই রাজ্যপাল পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবৎ সিং মানকে চিঠি লিখে কথা দেন, রাজ্যবাসীর স্বার্থে তিনি বিলগুলি খতিয়ে দেখছেন। পাঞ্জাবের রাজ্যপালের হয়ে এদিন আদালতে সওয়াল করে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান যে, পঞ্জাবের রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিত এই নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন-কবিকে অপমান, বিজেপিকে মানুষ বঙ্গোপসাগরে ফেলবে, ধরনামঞ্চে তোপ দাগলেন তৃণাঙ্কুর
বেঞ্চ তাঁদের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে যে এই ধরনের ঘটনা অন্য রাজ্যেও ঘটেছে৷ তাই বেঞ্চের তরফে প্রশ্ন করা হয়, কেন দলগুলিকে সুপ্রিম কোর্টে আসতে হবে? এদিন বেঞ্চকে তেলেঙ্গানার বিষয় সম্পর্কে অবহিত করে জানানো হয়, ওই রাজ্যও আদালতে এসেছিল এবং তারপর রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন যে বিলগুলি পাশ করা হবে। একইভাবে বিরোধী-শাসিত কেরল এবং তামিলনাড়ুর রাজ্যপালরাও রাজ্য সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা করছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, আইনজীবী কে কে ভেনুগোপাল কেরলের বিষয়টি এদিন আদালতে উল্লেখ করেন। সেখানে রাজ্যপাল দু বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনটি জনকল্যাণমূলক বিল মুলতুবি রেখেছেন।
এদিন অভিষেক মনু সিংভি তেলেঙ্গানার বিষয়টি উল্লেখ করার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ উল্লেখ করেছে, এরকম ঘটনা অন্য রাজ্যেও ঘটছে। এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।