মণীশ কীর্তনিয়া, বাগদা: কলকাতার কাশীপুরে আত্মহত্যার ঘটনায় নাটক করতে গিয়েছিলেন। আপনার বাহিনী বিএসএফের জওয়ানরা গণধর্ষণ (Bagda Gangrape Case) করেছে। এবার বাগদা সীমান্তে এসে ক্ষমা চান অমিত শাহ। রবিবার বাগদার প্রতিবাদ সভা থেকে এই দাবি তুলল তৃণমূল কংগ্রেস। সীমান্তের বিএসএফ জওয়ানদের হাতে তাঁর ছোট্ট শিশুর সামনেই ওই তরুণীকে নৃশংসভাবে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়। রবিবার বাগদার কাশীপুর স্কুল মাঠে তার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে এই সভার আয়োজন করেন দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস৷ কলকাতা থেকে আসেন দলের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, মন্ত্রী শশী পাঁজা, পার্থ ভৌমিক, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার। বাগদা পৌঁছেই মন্ত্রী শশী পাঁজা ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ চলে যান অকুস্থলে, এক্কেবারে জিতপুর সীমান্তে যেখানে তারকাঁটার বেড়া রয়েছে। গ্রামবাসীরা ঘুরিয়ে দেখান সেই পটলখেত যেখানে নৃশংসভাবে গণধর্ষিতা হতে হয়েছে অসহায় ওই তরুণীকে। প্রতিনিধি দলের সামনে তাঁরা অভিযোগও করেন, কীভাবে দিনরাত বিএসএফের অত্যাচারে-তাণ্ডবে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। আতঙ্কে দিনযাপন করছেন গ্রামবাসীরা।
রুজি-রোজগারের টানে কাঁটাতার পেরিয়ে নিজেদের জমি চাষ করতে সীমান্তের কোর এলাকায় যেতে হয় গ্রামবাসীদের। অত্যাচার চলে তখনও। বর্তমানে বিএসএফের যে ব্যাটালিয়ন এখানে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভূরি ভূরি। কুণাল ঘোষ ও শশী পাঁজা যখন এলাকা পরিদর্শন করছেন সীমান্তে, সেই সময় বিএসএফ জওয়ানদের পুরো ব্যাটালিয়ন এসে হাজির হয় কাঁটাতারের পাশে। ভিডিও ক্যামেরায় তারা গোটা দলটির ভিডিও করতে থাকে। শশী পাঁজা ও কুণাল ঘোষ তাদের বলেন, ইঁহাপে যো হুয়া ও সহি নেহি হুয়া। আপ লোগোকো কেয়া লাগতা হে? প্রশ্ন শুনে উত্তর দিতে পারেননি বিএসএফ জওয়ানরা ও উপস্থিত তাঁদের কর্তারা। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, আমরা গ্রামবাসীদের করুণ অবস্থা-আতঙ্কের পরিবেশ বুঝতে পারছি। আমাদের শীর্ষ নেতৃত্বকে আমরা সবটা জানাব। কুণাল ঘোষ বলেন, এটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আরও কত কত ঘটনা এখানে হয়ে যাচ্ছে তার শেষ নেই। আমরা একের পর এক অভিযোগ গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পেলাম।
আরও পড়ুন: শিবসেনার প্রশ্ন, ধর্ষকদের মুক্তি কি কৃতিত্বের কাজ
সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার বেশ কিছু জায়গায় দেখা গেল বেশ বড় ফাঁক রয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই সব জায়গা দিয়েই চোরাচালান বা অবৈধ অনুপ্রবেশের কারবার চলে বিএসএফের যোগসাজশে।
এদিনের প্রতিবাদ সভায় উপচে পড়া ভিড় হয়েছিল। কাশীপুরের স্কুলের মাঠে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। মহিলাদের উপর এই অত্যাচার বা বিএসএফের এই তাণ্ডব দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা গ্রামবাসীদের পক্ষে বরদাস্ত করা সম্ভব হবে না। সভায় অত্যন্ত জোরালো ভাষায় একথা বলেন সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার। মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, যাদের দেশ রক্ষা করার কথা তারাই ভক্ষকের কাজ করছে।
বনগাঁ সংগঠনিক জেলার সভাপতি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে এই সভার আয়োজন করেছেন। মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, যে বোনের উপর এই নারকীয় অত্যাচার হয়েছে তিনি সাহস করে থানায় গিয়ে বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তাঁকে কুর্নিশ জানাই। মা-বোনেদের বলব, কোনওরকম কোনও সমস্যা বিএসএফ তৈরি করলে সঙ্গে সঙ্গে রুখে দাঁড়াবেন। অভিযোগ জানাবেন। ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, কলকাতার কাশীপুরে আত্মহত্যার ঘটনায় নাটক করে অমিত শাহ চলে গিয়েছিলেন, বিজেপির দু’ আনা চার আনা নেতার কথায় নেচে। এবার যে ন্যক্কারজনক ঘটনা তাঁর বাহিনী ঘটিয়েছে (Bagda Gangrape Case) তিনি এবার আসুন বাগদা সীমান্তে, এখানে এসে ক্ষমা চেয়ে যান। মনে করবেন না প্রতিবাদ এখানে এই একটা সভাতেই শেষ হয়ে যাবে। সোমবার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনাকে, এই প্রতিবাদকে জাতীয় স্তরে পৌঁছে দেবেন। সূর্য ডোবার আগে। এখন কোথায় মানবাধিকার কমিশন? প্রশ্ন কুণাল ঘোষের।