রূপান্তরকামীদের পাশে থাকতে চান উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম ‘শরণ্যা’, যোগ দিতে চান সিভিল সার্ভিসে

Must read

শরণ্য থেকে শরণ্যা হয়ে ওঠার লড়াইটা সহজ ছিল না। হুগলির জনাইয়ের সেই রূপান্তরকামীই এবার উচ্চমাধ্যমিকে (West Bengal HS Result 2023) মেধা তালিকায় সপ্তম। ৪৯০ নম্বর পেয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে চান তিনি। সেটা সম্ভব না হলে অধ্যাপনা করবেন তিনি। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সৌরভ ও ঘরকন্যা সামলানো দেবস্মিতার প্রথম সন্তান শরণ্য। ছোট থেকে আর পাঁচটা ছেলের মতোই চলছিল শরণ্যের জীবন। হুগলির জনাই ট্রেনিং স্কুলের খাতাতেও তাঁর নাম ছিল শরণ্য। কিন্তু ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই শরণ্য বুঝেছিলেন তাঁর শরীরী ভাষা। আসলে পুরুষের শরীরে জন্ম হলেও তিনি একজন নারী। একথা প্রথমেই বাবা-মাকে জানান তিনি। তবে, সমাজের আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো শরণ্যার বাড়িতে কারোর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। শরণ্যার আবেগকেই প্রাধান্য দিয়েছিল শিক্ষক পরিবার। প্রমাণ দিয়েছিলেন, একজন শিক্ষক, সমাজ গড়ার কারিগরের ঠিক কী ভূমিকা পালন করতে হয়। এরপর শুরু হয় শরণ্যের শরণ্যা (West Bengal HS Result 2023) হয়ে ওঠার লড়াই।

একাদশ শ্রেণিতে রূপান্তরিত হয়ে শরণ্য থেকে শরণ্যা হয়ে ওঠেন। শরণ্য হিসেবে পরীক্ষা দিলেও একজন রূপান্তরকামী ছাত্রী হিসেবে স্কুলের গর্ব তিনি। শরণ্যার কথায়, সিভিল সার্ভিস পাশ করলে হাতে ক্ষমতা থাকবে। সেক্ষেত্রে যে সমস্ত নারী-পুরুষ রূপান্তরিত রয়েছেন, তাদের অধিকার ও সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করাটা অনেক সহজ হবে। আর তা না হলে অধ্যাপনা বেছে নেবেন। অধ্যাপনার মাধ্যমে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। যাতে সমাজের সমস্ত লিঙ্গের মানুষ সসম্মানে মানে বেঁচে থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: উচ্চমাধ্যমিকে সফল ছাত্রছাত্রীদের শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, টুইট শিক্ষামন্ত্রীর

তবে, আনন্দের মধ্যেও শরণ্যার মনে বাষ্প জমা আছে। রূপান্তরকামী হওয়ায় অনেক সময় অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তার বাবা, মা, পরিবার থেকে শুরু করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ অন্যান্য শিক্ষক এবং সহপাঠীরা তাঁর পাশে সবসময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শরণ্যার বাবা জানান, তাঁরা কখনওই মেয়ের এই রূপান্তরকামী হওয়ার ইচ্ছায় বাধা দেননি। বরং জীবনে এগিয়ে যাওয়ার পথে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনাই ট্রেনিং হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রজত কুন্ডু বলছেন, ” শরণ্য এখন আমাদের কাছে শরণ্যা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ও আমাদের স্কুলের প্রত্যাশা অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। গত ২বছর ওর জীবনে অনেক ওঠাপড়া গিয়েছে। সেই জায়গা থেকে ও নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে দেখে আজ আমরা গর্বিত।”

Latest article