গরমে ত্বকের যত্ন, সন্তানের যত্নে মা

এখন থেকেই সবার মুখে একটাই কথা এখনই এত তাপ পরে কী হবে? বাড়িতে বসে থাকলে তো আর কারও চলবে না। প্রতিদিন কাজের জন্য বাইরে বেরতেই হবে। সূর্যের এই তীব্র দাবদাহ থেকে নিজের স্বাস্থ্যকে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যকে কীভাবে রক্ষা করবেন? জানালেন চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

Must read

রাস্তায় বেরলে বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছে সূর্যের দাপট। এপ্রিলের গরম জানান দিচ্ছে। প্রস্তুতি নেওয়া না থাকলে সমস্যায় পড়তে পারেন।

প্রায় আড়াই বছর ধরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ফলে বাবা-মা এবং শিশুরা বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছেন। পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল বন্ধ ও শারীরিক দূরত্বের বিষয়গুলো মেনে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরিবারের প্রত্যেকে কীভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে এবং এই নিউ নরমাল সময়ে সবকিছুকে কীভাবে সহজ করে তোলা যায় সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি যিনি সচেতন, তিনি হলেন মা।

এক্ষেত্রে মায়েদের কথা শুনতে হবে। তারপরে তাদেরকে আরও কিছু কাজ করতে দিন যা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে। হয়তো অভাবগ্রস্ত মানুষদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া বা তাদের জন্য কেনাকাটা করতে যাওয়া বা নিজেদের কমিউনিটির কোনও এলাকার মানুষের সহায়তা দরকার তা নির্ধারণ করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশেপাশের মানুষদের সহায়তা করার জন্য কাজ করা।

আসলে শিশু-কিশোরদের জন্য একটা সময়সূচি দরকার। খুব দ্রুততার সঙ্গে আমাদের সকলকে এমন একটা সময়সূচি বানাতে হবে যা তাদের সময়কে দিনের পর দিন কার্যকরভাবে ব্যয় করতে সাহায্য করবে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মা যদি পরিবারের সদস্যদের আবেগগুলোকে তীব্রভাবে অনুভব করে, তখন মায়ের পক্ষে আবেগকে ধরে রাখা কঠিন হতে পারে। মায়েরা তাদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য একটি আউটলেট খুঁজে পাক কিন্তু সেটা তাদের সন্তানদের নয়।

সন্তানরা কেমন বোধ করছে— এ-বিষয়ে মায়ের তাদেরকে নিয়মিত জিজ্ঞাসা করা উচিত ?

বিশেষজ্ঞ শিশু-চিকিৎসক জয়ন্ত ঘোষাল বলছেন, শিশুদেরকে দুঃখ পেতে দিন এবং এর জন্য তাদের দোষী করার চেষ্টা করবেন না। ‘অন্য অনেক মানুষ তোমার চেয়েও খারাপ’ তাদের এমন কথা বলবেন না। এতে করে বাচ্চারা দুঃখ পাবে এবং নিজেকে দোষী মনে করবে!

দীর্ঘদিন পর স্কুল-কলেজ খুলে গিয়েছে। এখন কথা হল সূর্যের এই তীব্র দাবদাহ থেকে নিজের ত্বককে (Skin Care) কী ভাবে রক্ষা করবেন?

গ্রীষ্মকালেও ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। এই সময়ের প্রধান সমস্যাই হল রোদ, রোদের অতিবেগুনি রশ্মি, প্রচণ্ড ধুলোবালি, ঘাম হওয়া, ঘাম থেকে ঘামাচি হওয়া, ব্রণ হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই এই সময়ে ত্বকের বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন।

রোদের তাপে ট্যানও পড়ে যায়। এই সময় ত্বকের ঠিকমতো যত্ন না নিলে ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যা লেগেই থাকে।

আমাদের ত্বকের কিছু কোষের মৃত্যু হয় প্রতিদিন— প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই। এই যে আমরা মুখে জলের ঝাপটা দিই, স্নানের আগে তেল মালিশের পরামর্শ দেওয়া হয়— সব কিছুরই উদ্দেশ্য একটাই, মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ত্বকের নিজস্ব উজ্জ্বলতা বের করে আনা। আগেকার দিনে মা-ঠাকুমারা স্নানের আগে দুধের সর-ময়দা, কমলালেবুর শুকনো খোসাবাটা দিয়ে রূপটান বানিয়ে গোটা গায়ে ঘষে ঘষে লাগাতেন— তারও উদ্দেশ্য ছিল মৃত কোষের পরত সরিয়ে ত্বকের স্বাভাবিক জেল্লা ফেরানো। এগুলির প্রত্যেকটিই কাজ করে স্ক্রাব (Skin Care) হিসেবে।

মনে রাখবেন যে, ত্বকের নিজেকে পরিষ্কার করে নেওয়ার নিজস্ব পদ্ধতি আছে, খুব বেশি ঘষাঘষি ছাড়াও তার স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। হ্যাঁ, নিয়মিত স্ক্রাব করলে ত্বকে রক্ত চলাচল ভাল হয়, উজ্জ্বলতা বাড়ে। কিন্তু মুখের ত্বক যেহেতু খুব কোমল, তাই স্ক্রাব বাছাইয়ের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকেই নুন বা চিনি আর মধুর মিশ্রণ মুখে ঘষে নেন স্ক্রাব হিসেবে। সঙ্গে মেশান লেবুর রস। মনে রাখবেন, ত্বকের প্রকৃতি যা-ই হোক না কেন করকরে নুন অথবা চিনিতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে, কিছু অংশে শুকনো প্যাচ তৈরির আশঙ্কাও থাকে। একান্তই যদি ঘরোয়া সমাধানের উপর ভরসা রাখতেই হয়, তা হলে খুব নরম, পুরোনো কাপড়ের টুকরো নিন। তার উপর কয়েক ফোঁটা এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেল বা অলিভ তেল ঢালুন। তার পর সেই কাপড়টা খুব আলতো করে গোটা মুখে চক্রাকারে ঘোরাতে থাকুন। সপ্তাহে দু’বার এমনটা করলেই ঝকঝকে সুন্দর ত্বক পাবেন।

চিনি বা নুনের স্ক্রাব কিন্তু গোটা শরীর পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে দারুণ কাজে দেয়। তেল, মধু আর চিনি বা নুন মিশিয়ে নিন। কনুই, হাঁটুর কাছে ভাল করে রগড়ে নেবেন। তা হলে কালো দাগ থাকবে না।

গরমে বাইরে থেকে বাড়িতে এলে প্রথমেই ভাল করে ফেসওয়াশ দিয়ে নিজের মুখ ধুয়ে নিতে হবে। ত্বকের জন্য টোনার ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অবশ্যই দেখে নিতে হবে তা যেন কেমিক্যালহীন হয়। এ-ছাড়াও শীতের মতো গ্রীষ্মেও ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার লাগানো জরুরি। যাঁরা ব্রণ বা ফুসকুড়ির সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্য অ্যালোভেরা জেল খুব উপকারী। প্রচুর জল খেতে হবে এই প্রচণ্ড গরমে। জল শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বক উজ্জ্বল করে। রোদে বের হবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতাও ব্যবহার করতে হবে। চোখের যত্নে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

এক্সফোলিয়েট করতে হবে ত্বকের। এর জন্য প্রকৃতিক উপাদানই সবচেয়ে শ্রেয়। লেবু, শশা, অ্যলোভেরা, টকদই, টমেটো, বেসন, চন্দন ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে প্যাক তৈরি করে মুখে, গলা, ঘাড়ে ব্যবহার করতে হবে। এতে রোদে পোড়া দাগ বা ভাব চলে যাবে।

তা ছাড়া প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে, এতে ত্বক সতেজ থাকে। ঘাম হলে তা অবশ্যই পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। প্রয়োজনে এই গরমে একের অধিক বার স্নান করুন। নিউট্রিশিয়ান সুছন্দা বসুর পরামর্শ, বিভিন্ন ধরনের ফলমূল দিয়ে তৈরি শরবত খান, এতে ত্বক ভাল থাকবে। গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের ফলই খেতে চেষ্টা করুন।

শিশুর ত্বক প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বকের চেয়ে বেশি পাতলা হওয়ায় আলাদা হয়। সহজভাবে বলতে এটি আরও সূক্ষ্ম এবং সংবেদনশীল হয়। আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি বেশি সংবেদনশীল হয়। তাই এটি অ্যালার্জি, সংক্রমণ, র‍্যাশ এবং জ্বালার ঝুঁকিতে বেশি থাকে।

ত্বক একটি শিশুর বাহ্যিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার প্রথম ধাপ। সুতরাং, শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি সুস্থ রাখতে বিশেষ মনোযোগ এবং সুরক্ষার প্রয়োজন। শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়া জটিল মনে হলেও, শিশুর স্কিনকেয়ারের দিকে সর্বোত্তম পদ্ধতি হল ‘অল্পই হল নিরাপদ’।

শিশুর ত্বক কোনও কঠোর পণ্য ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জির ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ থাকে। রাসায়নিক সাবান ও শ্যাম্পু, কঠোর ডিটারজেন্ট এবং স্নানের পণ্যও এড়ানো উচিত। সুতরাং, আপনি কীভাবে আপনার শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে পারেন? জানুন।

কীভাবে শিশুর ত্বকের যত্ন নেবেন

পরিষ্কার করা

নবজাতকের শিশুর ত্বকে সাধারণত গ্রাইসড এবং সাদা ভার্সিক্স জাতীয় মোমের মতো প্রলেপ থাকে, যা জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ধীরে ধীরে খসে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি, তাই এতে ত্বক ঘষা বা ক্রিম প্রয়োগের মতো কোনও সহায়তার প্রয়োজন হয় না। জন্মের পরের প্রাথমিক সপ্তাহগুলিতে শিশুর মুখ এবং ডায়াপারের ঢাকা অংশের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে কেবল এটি পরিষ্কারভাবে স্পঞ্জ করাই যথেষ্ট।

স্নান করানো

অতিরিক্ত স্নান শিশুর ত্বকের প্রাকৃতিক তেলগুলি বের করে দিতে পারে এবং এর ফলে ত্বকে শুষ্কতা ও চুলকানি সৃষ্টি হয়। সুতরাং, সপ্তাহে ৩–৪ বার শিশুকে স্নান করানো পর্যাপ্ত হতে পারে।

পাউডার লাগানো

ঘরের হাওয়ায় শুকানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হলে স্নানের পরে বাচ্চাকে পাউডার লাগানোর প্রয়োজন হবে না। তবে যদি স্নানের পরে আপনার শিশুকে একান্তই পাউডার লাগাতে হয়, তবে নিরাপদ, বেবি ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করা উচিত যা কোমল ত্বকের জন্য সমস্যা সৃষ্টি না করে। সুগন্ধী পাউডার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

প্রাকৃতিক পণ্য

শিশুদের ত্বক খুব কোমল এবং ভঙ্গুর হয়। জন্মের পরে, শিশুর ত্বকে নতুন কঠোর পরিবেশ এবং এর বিভিন্ন পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য সময় দেওয়া প্রয়োজন। সুতরাং, শিশুর জন্য তৈরি প্রাকৃতিক এবং জৈব পণ্যগুলিতে কোনও রাসায়নিক থাকে না, তাই সুগন্ধযুক্ত বা কঠোর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল পণ্যগুলির তুলনায় একটি নিরাপদ বিকল্প হয়, কারণ কঠিন পণ্যগুলি র‍্যাশ এবং শুষ্কতার কারণ হতে পারে। হালকা বেবি সোপ, টিয়ার–ফ্রি শ্যাম্পু এবং মৃদু লোশনের মতো বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা পণ্য ব্যবহার করুন।

ত্বকের সমস্যা

কিছু শিশুর ব্রণ হতে পারে, যা প্রাপ্তবয়স্কের ব্রণর থেকে পৃথক হয়। এ জাতীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া ভাল। কখনও কখনও শিশুদের একজিমা বা এটোপিক ডার্মাটাইটিস হয়, তার ফলে এক ধরনের ত্বকে র‍্যাশ হয়। একজিমায় ত্বক শুকনো, চুলকানি হয়, ফুলে ওঠে এবং কখনও কখনও লাল প্যাচও হতে পারে। একজিমা নিরাময় করা কঠিন, কারণ এটি পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত ত্বকের সমস্যা, তবে এটির সঠিকভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। একজিমা বিকাশকারী বেশিরভাগ শিশু সাধারণত এই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে।

ম্যাসাজ

ম্যাসাজ আপনার শিশুর সঙ্গে আপনার বন্ধনের এক দুর্দান্ত উপায়। প্রাকৃতিক তেলগুলি দিয়ে শিশুর ত্বককে ধীরে ধীরে মালিশ করা এটিকে পুষ্টি পেতে এবং ময়েশ্চারাইজড করতে সহায়তা করে। নারকেল তেল সাধারণত বেছে নেওয়া হয়। তবে আপনাকে অবশ্যই বাণিজ্যিক তেল ব্যবহার করা এড়ানো উচিত, যাতে সাধারণত সুগন্ধী ও রাসায়নিক থাকে, যা শিশুর ত্বকে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

Latest article