প্রতিবেদন : প্রায় দুশো বছর আগে জমির পাকা ধান বাঁচাতে গিয়ে ডাকাতদের হাতে নাক খোয়ান পুরুলিয়া চিড়াবাড়ির দেউলিয়া কালী। সেই থেকেই কাটা নাকের মাতৃমূর্তির পুজো হয়ে আসছে। ঐতিহ্যের টানে আজও এলাকা ছাড়াও সুদূর ঝাড়খণ্ড থেকে বহু মানুষ এই নাক কাটা কালীর পুজোয় ভিড় করেন। লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি হল, ধানের জমিতে ডাকাত পড়ার খবর স্বপ্নাদেশে গৃহস্থকে জানিয়ে দেন চিড়াবাড়ির দেউলিয়া কালী। সেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে ছুটে আসেন চাষিরা।
আরও পড়ুন-লাহিড়ীবাড়ির ৪৫০ বছরের পুজোভোগে আকর্ষণ ইলিশ ও চিংড়ি
পাকা ধান কেটে নিয়ে যেতে না পারায় ক্ষোভে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মায়ের মূর্তিতেই আঘাত করে ডাকাতের দল। টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পাথরের মূর্তি। কাটা যায় প্রতিমার নাক। জমির মালিকরা রাতে মন্দিরে সেই টুকরো মূর্তি দেখে হতবাক হয়ে যান। সেই থেকেই মা নাক কাটা কালী নামে পূজিতা হয়ে আসছেন। প্রথমে স্থানীয় চাষিরা পুজোর দেখাশুনা করলেও পরে বাড়ে পুজোর ব্যাপ্তি। কথিত যে, মায়ের মায়ের নাক ও গলা আজও পড়ে আছে মন্দিরের ভিতরে। মন্দির চত্বরে রয়েছে বিশালাকার পায়ের অংশ, প্রায় এক ফুট লম্বা জিভ ও অন্যান্য অঙ্গ। সেগুলির পুজো সেখানেই হয়।
আরও পড়ুন-রোহিতদের পরামর্শ বিন্দ্রার
স্থানীয়রা জানান, নডিহা মৌজার এই সব অংশে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ধানজমি। চাষিরা তাঁদের জমিতেই মায়ের পুজো শুরু করেন। মন্দিরের ভিতরে মায়ের পুরনো ভেঙে যাওয়া পাথরের মূর্তিটি আজও বিদ্যমান। গা ছমছম করত। এখন এলাকায় ধানের জমি নেই বললেই চলে। স্থানীয়রা বলেন, পুরুলিয়ার প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম এই পুজো। তবে আড়ম্বর কমলেও পুজোর দিনে নাক কাটা কালীমন্দিরে নজরকাড়া ভিড় হয়। ফসলরক্ষার জন্য নাক কাটা যাওয়ার জন্য দেবীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে। মন্দির চত্বরে ফ্লেবার্স ব্লক, হাইমাস্ট আলো লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মন্দিরে যাওয়ার জন্য রাস্তাও তৈরি হয়েছে। এই কারণে এবারও দূরদূরান্তের মানুষের ঢল নামল পুরুলিয়ার দেউলিয়া কালীমন্দিরে।