মণীশ কীর্তনীয়া : ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি কহো না প্যার হ্যায় তাঁর সংগীত জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ছবি রিলিজ হওয়ার পর বলিউডের নতুন হিরো হৃত্বিক রোশনের সঙ্গে গোটা দেশ একডাকে চিনেছিল তাঁকে। এরপর রাজনীতির ময়দানে আসানসোলের সাংসদ। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১। জীবনের আর একটি অধ্যায়ের শুরু। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান। নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক জীবনে মোড় ঘোরানো দিন। আবার ১৩ মার্চ ২০২২। তিনি বাবুল সুপ্রিয় আবারও শিরোনামে। কলকাতার বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। রবিবাসরীয় বিকেলে বাবুল যখন জাগোবাংলাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তখনও দুপুরের খাওয়া হয়নি। তিন-তিনবার খাবার গরম করা হলেও খেতে পারেননি।
নেত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় বালিগঞ্জ কেন্দ্রে তাঁর নাম ঘোষণার পর থেকেই ক্রমাগত বেজে চলেছে তাঁর ফোন। সঙ্গে অসংখ্য শুভেচ্ছা মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা। এরই ফাঁকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মেসেজ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাঁর পুরনো কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়া শত্রুঘ্ন সিনহাকেও। বাবুল সুপ্রিয় আবেগপ্রবণ সবাই জানেন। নিজেই বললেন, একটা সময় বিজেপির জন্য প্রাণপাত করেছি। আসানসোলের মানুষের জন্য জীবন দিয়ে কাজ করেছি। সবকিছু ভুলে শুধু মানুষের পাশে থেকেছি। তাও অপমানিত হয়েছি। তবে আমি আজ বিজেপির জন্য বেশি কথা খরচ করতে চাই না। শুধু বলব, বালিগঞ্জ থেকে জিতে সব অপমানের জবাব দেব। শত্রুজিও বিজেপির জন্য অনেক করেছেন৷ তাঁকেও অপমান করা হয়েছে। আমি শত্রুজিকে মেসেজ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। উনি অনেক ভোটে আসানসোল থেকে জিতবেন। আমরা দু’জনেই বাংলার মানুষের জন্য কাজ করব। তাদের পাশে থাকব।
আরও পড়ুন – পকেটমারির অভিযোগে ধৃত বিজেপি ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী
আমি চিরকৃতজ্ঞ আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে, তিনি আমাকে এই সুযোগ দিয়েছেন। ২০২১-এর কালীপুজোর রোশনাইয়ের রাতে বাংলার সব আলো নিভে গিয়েছিল মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অকাল প্রয়াণে। সেই হাইপ্রোফাইল বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে দল তাঁকে প্রার্থী করেছে এটা জানার পর থেকেই অনেক পুরনো দিনের কথা মনে পড়ছে, বললেন বাবুল। তখন ২০০১ সাল। কহো না প্যার হ্যায় রিলিজ করে সুপার-ডুপার হিট। বাবুল সুপ্রিয় কোনও একটা কাজে এসেছিলেন বালিগঞ্জে। সেখানে তখন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবির চলছে। অনেকক্ষণ সেখানে ছিলেন। তাঁকে দেখে সুব্রত মুখোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন, বাবুল তুমি রক্ত দিলে না? উত্তরে বাবুল জানিয়েছিলেন, আমার রক্তে গান তাই আমি রক্ত কাউকে দিই না। মজার ছলে বলে থাকলেও ঘটনাচক্রে এতবছর পর সেই বালিগঞ্জেই তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপের ঘটনাটা বারবার মনে পড়ছে। এক লহমায় স্মৃতিচারণ করলেন বাবুল।
২০২১-এর ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর এতদিন সে অর্থে বাবুল সুপ্রিয় একরকম আড়ালেই ছিলেন। মাঝে গোয়ায় কয়েকদিনের জন্য প্রচারে গিয়েছিলেন। নেত্রী জানতেন তিনি বাবুলকে (Babul Supriyo) কখন কীভাবে মাঠে নামাবেন। কিন্তু বিজেপির তরফে এ নিয়ে নানা কটাক্ষ উড়ে এসেছে নানা সময়ে। বাবুল একটি শব্দও খরচ করেননি পাল্টা। তিনি বরাবর বলে এসেছেন, আমি প্রথম একাদশের খেলোয়াড়। হলও তাই। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাবুল সুপ্রিয়কে (Babul Supriyo) নামিয়ে দিলেন বড় ম্যাচ খেলতে। আর বাবুলও বললেন, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা-ভরসার যথাযথ মর্যাদা দেবেন বালিগঞ্জ থেকে জিতে। তিনি বললেন, দেবাশিস কুমার সহ স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে মনোনয়ন ও প্রচারের দিনক্ষণ ঠিক করবেন।