খায়রুল আলম ঢাকা: ‘তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দেব।’ এমনই আশ্বাস দিয়েছিলেন লালদুর্গা। তিনি নাকি তাঁর ভক্তকে যথাযথ বর প্রদান করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, লালদুর্গা স্বয়ং অধিষ্ঠান করেন। এটি জাগ্রত প্রতিমা। জানলে অবাক হবেন, উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের দুর্গামূর্তি এটি।
লাল বর্ণের দেবীমূর্তি দেশের আর কোথাও নেই। যে কারণে এই প্রতিমার কাছে ভক্তদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা। পুরাণ অনুযায়ী দেবী দুর্গার লাল রূপকে দেবী কাত্যায়নী, ষষ্ঠ অবতার দেবী দুর্গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেবী দুর্গার রুদ্ররূপকে প্রতিফলিত করে লাল রং। এ থেকে অনেকের ধারণা লাল রঙা দুর্গাদেবী জাগ্রত। রয়েছে আলাদা শক্তি। চাইলেই পাওয়া যায় বর।
আরও পড়ুন-নবরাত্রে ও দুর্গাপুজোর বৈপরীত্যের সামঞ্জস্যবিধান
এই পুজো চালু করেন সর্বানন্দ দাস। তিনি তৎকালীন সরকারের অধীনে আসামের শিবসাগরে মুন্সি পদে চাকরি করতেন। ছিলেন সাধক পুরুষ। একবার আসামের কামরূপ-কামাখ্যায় বেড়াতে গিয়ে পুজোর জন্য পাঁচ বছরের একটি মেয়ে চাইলে স্থানীয়রা তাঁকে একটি মেয়ে দেন। মহাষ্টমীর দিনে সর্বানন্দ দাস ওই মেয়েকে পুজো করার মনস্থ করেন, সেই সঙ্গে তাঁর বাড়িতে পুজো সম্পন্ন করার জন্য তাঁর স্ত্রী ও কর্মচারীকে নির্দেশ দেন। ভগবতীজ্ঞানে ছ’ঘণ্টা পুজো শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দেখেন, কুমারীর গায়ের রং পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারণ করেছে। মেয়েটির মধ্যে স্বয়ং দেবী ভর করেছেন। মেয়েটি তখন সর্বানন্দ দাসকে বলে, তুমি আমার কাছে বর চাও। আমি তোমাকে বর দেব। সর্বানন্দ দাস তখন তাঁর কাছে বর চাইলেন। দেবী তখন নির্দেশ দিলেন পাঁচগাঁওয়ের প্রতিমার রং হবে লাল। লাল রঙের প্রতিমা প্রসঙ্গে সর্বানন্দ দাস বংশের উত্তরাধিকারী সঞ্জয় দাস এমনটিই উল্লেখ করেন। সেই থেকে এখানে লাল বর্ণের মূর্তির পুজো হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে থেকে ভক্তরা এই লাল রঙের দুর্গা মূর্তিকে দর্শন করতে আসেন।
আরও পড়ুন-দুর্গাপুজোয় আদিবাসীদের ভুয়াং নাচ এখন বিলীন
মৌলভিবাজার জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রাম। সেই গ্রামে উদযাপিত হয় উপমহাদেশের একমাত্র লাল বর্ণের জাগ্রত দুর্গা দেবীর পুজো। ঐতিহ্য প্রায় তিনশো বছরের। উপমহাদেশের আর কোথাও লাল বর্ণের দুর্গা পুজো হয় না।