রিতিশা সরকার, ময়নাগুড়ি : মৃত্যুভয় কী তা আজ টের পেলাম। বলতে গিয়ে আতঙ্কে গলা কাঁপছিল ট্রেন দুর্ঘটনায় বরাতজোরে বেঁচে যাওয়া আসাফ আলির। বললেন, ‘ঘড়িতে তখন বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটে। স্লিপার কোচে শুয়েছিলাম। তখনই হঠাৎ ঝাঁকুনি। সেকেন্ডের মধ্যে একটা কামরার ওপরে একটা কামরা উঠে পড়ে।
আরও পড়ুন-শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তেহার
জানলা দিয়ে এমন দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি চারদিকে হাহাকার কান্নার রোল। সবকিছু এলমেলো। বিধ্বস্ত ট্রেনের বাইরে আমি শুয়ে আছি। আমার চোখে মুখে অনবরত জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন কয়েকজন। বেঁচে আছি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।’একই অভিজ্ঞতা অভিশপ্ত ট্রেন গুয়াহাটি-বিকানির এক্সপ্রেস (১৫৬৩৩)-এর আরও এক যাত্রীর।এস-১২ কামরার এক যাত্রী আতঙ্কিত অবস্থায় জানিয়েছেন, হঠাৎ ট্রেনটি বিকট শব্দে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। ওই কামরা লাইনচ্যুত হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে তার আগে বেশ কয়েকটি কামরা সম্পূর্ণ উলটে গিয়েছে। তিনি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বঙ্গাইগাঁও যাচ্ছিলেন।এভাবেই যাত্রার গতি থমকে যায়। দুর্ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় পরিস্থিতি। চারপাশে কান্নার রোল। হাহাকার। উদ্ধার-কাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। গ্রিন করিডোর করে গুরুতর আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বজনহারার বুকফাটা কান্নার আর্তনাদে চারদিকে মর্মান্তিক পরিবেশ। এদিন কেউ ফিরছিলেন কাজে। কেউ যাচ্ছিলেন বাড়ি। কিন্তু দুর্ঘটনায় বদলে গেল পরিস্থিতি। চোখের সামনে পরিজনের মৃত্যু দেখে অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিলেন এক যাত্রী। সাংবাদিকদের কোনও কথার উত্তরই দিতে পারেননি তিনি। ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে ছিলেন ওই যাত্রী। পুরো পরিবেশই ছিল থমথমে।