গাইবেরহা, ১৯ ডিসেম্বর : পরিসংখ্যান থাকে ইতিহাসের পাতায়। লেখা হবে সেন্ট জর্জেস পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ উইকেটে জয়, টনি ডি জর্জির কীর্তি। ১১৯ নট আউট। লেখা হবেই। শুধু যা লেখা হবে না, সেটা সিরিজ-জুড়ে তরুণদের এই দাদাগিরির কথা। এটা তাদেরই সিরিজ।
প্রথম ম্যাচ ছিল অর্শদীপ আর আবেশের। মঙ্গলবার জর্জি ও রেজা হেনড্রিকসের। নান্দ্রে বার্গারের কথা মাথায় রেখেও এই দুটো নাম আনতে হল। ঈষৎ খটমট উইকেটে ভারতের ২১১-র টার্গেট একসময় চ্যালেঞ্জিং লাগলেও সেটা যে ভুল, প্রমাণ হয়ে গেল জর্জির ব্যাটে। প্রথম সেঞ্চুরি। তাঁর দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ ১-১ করে দেওয়া নিয়ে কখনও সংশয় ছিল না। ৪২.৩ ওভারে জয়ের রান তুলে নিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার শেষ ম্যাচ।
হেনড্রিকস ইতিমধ্যেই নিজেকে ভবিষ্যতের তারকা হিসাবে দাড় করিয়েছেন। টি-২০ সিরিজে ভারতীয় বোলারদের আতঙ্ক ছ়িলেন। ওয়ান্ডারার্সে প্রথম ম্যাচে রান পাননি। মঙ্গলবার সেটা সুদে-আসলে তুলে নিলেন। কিন্তু তাঁর কথা বললে হবে না। হেনড্রিকসের সঙ্গে শুরুতে যিনি এসেছিলেন, সেই ডি জর্জি পরে তাঁকেও ছাপিয়ে গেলেন। দুই তরুণ ওপেনার ১৩০ রান তুলে দেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের রাস্তা সহজ
হয়ে গিয়েছিল।
অদ্ভুত আচরণ করল উইকেট। ভারতের ব্যাট করার সময় মনে হচ্ছিল বড়জোর আড়াইশোর উইকেট। রাহুলরা যার কাছাকাছি যেতে পারেননি। গেলেও যে কিছু হত সেটা মনে হল না স্থানীয় দলের ব্যাট করার সময়। এই মাঠে প্রথম উইকেটে সর্বোচ্চ (১৩০) রান করে ফেললেন হেনড্রিকস (৫২) ও জর্জি। সেখান থেকে রাহুলরা আর ম্যাচে ফিরতে পারেননি।
৪৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ভারত চাপে পড়েছিল। তবে সাই সুদর্শন আর কে এল রাহুল মিলে পরিস্থিতি সামলে নেন। জুটিতে ৬৮ রান উঠে না এলে ভারতের রান দুশো পার হত না। বাঁহাতি পেসার বার্গার এই দুটি উইকেট নিয়ে বিশাল ঝটকা দিয়েছিলেন। পরে ভারতের রান যখন ১১৪, তখন লিজাড উইলিয়ামস তুলে নেন সুদর্শনকে (৬২)।
দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাট করতে ডেকেছিল। সকালের দিকে বৃষ্টি হয়েছে। উইকেট ঢাকা থাকলেও যে সামান্য আর্দ্রতা খেলার সময় ছিল, সেটা কাজে লাগাতে মার্করাম আগে বল করতে নেন। বার্গার ঠিক এটাই করেছেন। ঋতুরাজ দুই বলে ৪ রান করে ফিরে গেলেন বোল্ড হয়ে। তিলকের ক্যাচ সোজা চলে গেল হেনড্রিকসের হতে।
এই ম্যাচে অভিষেক হল রিঙ্কু সিংয়ের। শ্রেয়স আইয়ার টেস্টের প্রস্তুতি শিবিরে যোগ দিয়েছেন। সেই জায়গায় দলে এলেন রিঙ্কু। এদিন ঋতুরাজ যেভাবে আউট হলেন তাতে তাঁর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পরে। সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ তিলকও। এই তিলক আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করেছেন। কিন্তু নীল জার্সির চাপ নিতে পারছেন না। এদিন যেমন ১০ রান করতেই ৩০ বল খেলে ফেললেন।
অভিষেক ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করার পর সুদর্শনের খুব প্রশংসা করেছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। মঙ্গলবার সেই তিনি ৮৩ বলে ৬২ রান করে গেলেন। সাতটি চার, একটি ছক্কা। পরপর দুটি ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করলেন তামিলনাড়ুর বছর বাইশের তরুণ। কিন্তু সঞ্জু স্যামসন (১২) আরও এক ম্যাচে ব্যর্থ হলেন। এই নিয়ে অনেক সুযোগ পেয়েছেন সঞ্জু। কিন্তু কিছু করতে পারেননি।
সঞ্জু যখন হেনড্রিকসকে উইকেট দিয়ে গেলেন, ভারত ১৩৬/৪। আর তারপরই সেন্ট জর্জেস পার্কে ব্যাট করতে নামলেন রিঙ্কু সিং। এই প্রথম একদিনের ম্যাচে খেললেন তিনি। তবে রিঙ্কু সেট হওয়ার মুখে ৫৬ রান করে ফিরে গেলেন রাহুল। বার্গারের শর্ট বল কভার দিয়ে চার মারতে গিয়েছিলেন তিনি। বল সোজা চলে গেল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো মিলারের হাতে।
রাহুল আর সুদর্শন মিলে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, সেটা পরের দিকে দেখা গেল না। ফলে ১১৪/২ থেকে বারো ওভারের মধ্যে ১৭২/৭ হয়ে গেল ভারত। টি-২০ ক্রিকেটে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ভরসার জায়গা তৈরি করে ফেলেছেন রিঙ্কু, কিন্তু তাঁর একদিনের ক্রিকেট অভিষেক ভাল হল না। মহারাজের বলে ফিরে গেলেন ১৭ রান করে।
পরে অবশ্য বল করতে এসে একটি উইকেট নিয়েছেন।
ভারতীয় ব্যাটিং পরে সেভাবে এগোতেই পারল না। মার্করাম ভাল টস জিতেছিলেন। বোলাররা, বিশেষ করে বার্গার ভারতীয় ব্যাটিংকে আটকে দিলেন ২১১ রানে। তিনি মিচেল জনসনকে মনে করিয়ে দিলেন। ১০ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট। যেভাবে বল করলেন তাতে ভারতীয় ব্যাটারদের কোনও জবাব ছিল না। শেষদিকে অর্শদীপ ১৮ রান করে গেলেন। নাহলে এই রানও হত না।
রাহুলদের উড়িয়ে ১-১ দক্ষিণ আফ্রিকার
পরিসংখ্যান থাকে ইতিহাসের পাতায়। লেখা হবে সেন্ট জর্জেস পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ উইকেটে জয়, টনি ডি জর্জির কীর্তি।