পশ্চিম আফ্রিকার গায়না, বেনিন, লাইবেরিয়া, মালি নয়, আমাদের ভারতবর্ষ।
অন্য কারও দেওয়া তথ্য-উপাত্ত নয়। খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিবারের স্বাস্থ্য-বিষয়ক পরিসংখ্যান। ২০১৯-২০২১ অর্থবর্ষে খাদ্যবিহীন ভারতীয় শিশুর সংখ্যা মোট শিশুর সংখ্যার ১৯.৩ শতাংশ। তালিকা বলছে, সংখ্যাটা গায়না (২১.৮ শতাংশ) এবং মালি (২০.৫ শতাংশ)র পরেই।
বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও খাবার নিয়ে হাহাকার এত প্রকট নয়। পাকিস্তানের ভুখা শিশুর সংখ্যা ৯.২ শতাংশ। বাংলাদেশে সংখ্যাটা ৫.৬ শতাংশ। কঙ্গো, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলোর হালও ভারতের চেয়ে ভাল। কঙ্গোর ৭.৪ শতাংশ শিশু, নাইজেরিয়ার ৮.৮ শতাংশ শিশু আর ইথিওপিয়ার ১৪.৮ শতাংশ শিশু দিনভর না খেয়ে থাকে।
আরও পড়ুন-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার রেট ঠিক করতে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ
এখানে শিশু বলতে যাদের বোঝানো হচ্ছে তাদের বয়স ছ’মাস থেকে চব্বিশ মাসের মধ্যে। এরা মূলত মায়েদের বাচ্চার খাবার জোগানোর ব্যাপারে গা-ছাড়া ভাবের কারণে দিনভর ভুখা কাটাতে বাধ্য হয়।
এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে আরও কিছু চমকে দেওয়ার মতো খবর। যে ৯২টি নিম্ন আর এবং মাঝারি আয়বিশিষ্ট দেশে সীক্ষাটি চালানো হয়েছে, সেই ৯২টি দেশেই ভুখা দিন কাটানো শিশুরা স্তন পান করে। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা সময়কালে কোনও খাবার পেটে না গেলেও তাদের শরীরে কিছু না কিছু ক্যালোরি জোটে। কিন্তু সেই পরিমাণ ক্যালোরিতে ছ’মাসেও তাদের প্রয়োজনীয় প্রোটিন, শক্তি, ভিটামিন, খনিজ দ্রব্য পায় না।
২০১০ থেকে ২০২১-এর মধ্যবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্বাধিক সংখ্যক শিশু ভখা ছিল। সংখ্যাটা ৮০ লক্ষের কম নয়। এর মধ্যে ৬ লক্ষ ৭০ হাজার শিশু ভারতীয়।
এই সংখ্যাগুলোই বলে দিচ্ছে শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার বিষয়টা আর অবজ্ঞা করা যাবে না। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সমীক্ষক এসভি সুব্রমহ্মণ্যম জেএএমএ নেট ওয়ার্ক ওপেন জার্নালে এই মন্তব্য করেছেন।
আরও পড়ুন-হঠাৎ হাজির বিডিও, কর্মী খেলেন ধমক
এই বুভুক্ষার আড়ালে সংগুপ্ত একাধিক সমাজতাত্ত্বিক বিষয় উঠে এসেছে নানা জনের মন্তব্যে। যেমন বন্দনা প্রসাদ নামের একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এর থেকে বোঝা যায় ভারতের বিপুল সংখ্যক মায়েরা যে পরিবেশ পরিমণ্ডলে বাস করেন, সেই পরিবেশ পরিমণ্ডল বাচ্চাকে স্তন্য পান করানোর সুযোগ সময়টুকুও দেয় না।
আসলে ছয়মাস বয়সি শিশুকে খাওয়ানো সোজা কাজ নয়। সময় লাগে, ধৈর্য লাগে। অধিকাংশ ভারতীয় মায়ের সেই সময়-সুযোগ নেই। শহর হোক বা গ্রাম, যেসব মায়েরা অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার মধ্যে বাস করেন, তাঁদের এই সময় বা সুযোগ থাকে না। কারণ ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি পরিবারকে অন্ন জোগানোর কাজ, আর্থিক রোজগার করার জন্য কাজ, তাঁদেরই করতে হয়। ফলে, বাচ্চাকে স্তন্য পান করানোর মতো সময় তাঁদের থাকে না।
আরও পড়ুন-ট্রাম্পের পক্ষে বড় রায় মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের
ওড়িশার মতো দেশের কোনও কোনও জায়গায় ক্রেশগুলো এই ব্যাপারে মায়েদের সাহায্য করতে বড়সড় ভূমিকা পালন করছে।
এই সমীক্ষার ফলাফল দেখেও কি মোদিজিদের বড় বড় কথা বলতে একটু লজ্জা করে না! দু’কান কাটা নির্লজ্জ আর কাকে বলে!
শিশুদের খিদেয় কাঁদানো এই মোদি সরকার আর নেই দরকার। আগামী নির্বাচনে এদের বিদায় করুন।