সংবাদদাতা, দিঘা : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১৮ সালে দিঘা সফরে এসে একটি আন্তর্জাতিক মানের মৎস্য নিলামকেন্দ্রের শিলান্যাস করে যান। অত্যাধুনিক ও উন্নত মানের সেই নিলামকেন্দ্রটি গড়ার কাজ চলছে জোরকদমে। রাজ্য মৎস্য দফতরের অর্থানুকূল্যে এই কাজের কারিগরি তত্ত্বাবধান করছে বেনফিশ। কলকাতার একটি ঠিকাদার সংস্থা নির্মাণের কাজ করছে। মৎস্য নিলামকেন্দ্র গড়ার জন্য ১২ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বরাদ্দ ৬ কোটি টাকায় কাজ চলছে।
আরও পড়ুন-বিজেপি রাজ্যগুলিতে কেন কঠোর আইনি ব্যবস্থা নয়? প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
বর্তমানে পুরনো নিলামকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্রের গা ঘেঁষে নতুন নিলামকেন্দ্রটি তৈরি হচ্ছে। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেওয়া তিন একরের বেশি জায়গার উপর এটি গড়ে উঠছে। প্রসঙ্গত, উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক মাছের নিলামকেন্দ্র রয়েছে দিঘার মোহনায়। সেখান থেকে রাজ্যের নানা প্রান্ত ছাড়াও বিভিন্ন দেশে সামুদ্রিক মাছ রফতানি হয়। মরশুমে কোটি কোটি টাকার মাছ নিলাম হয়। বিদেশের ব্যবসায়ী এবং রফতানিকারীরা আসেন। রফতানির মাধ্যমে আসে বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু নিলামকেন্দ্রটি মান্ধাতার আমলের পুরনো নিলামকেন্দ্রে রয়েছে শতাধিক আড়ত। রয়েছে মাছ বিক্রির প্রচুর ‘কাঁটা’। আড়তগুলি অস্থায়ী ছাউনিতে গড়ে ওঠায় বৃষ্টি হলেই জল জমে চারদিক থইথই করে। মৎস্যজীবী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাছ পরিবহণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন-মণিপুর ইস্যুতে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিল
দিঘার মৎস্যজীবী ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরেই তাই একটি উন্নত সুবিধাযুক্ত নিলামকেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সেই দাবি এবং প্রয়োজনীয়তা মেনেই মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায় নতুন মৎস্য নিলামকেন্দ্রটি গড়ে তোলার কাজ চলছে। জানা গিয়েছে, পুরো নিলামকেন্দ্রটি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবে। ২০০টি স্টল থাকবে। নিলাম হওয়া মাছ সংরক্ষণে ১৮০টি স্টল থাকবে। বাকি ২০টি প্যাকেজিংয়ের জন্য থাকবে। নিলাম ও প্যাকেজিংয়ের জন্য আলাদা দুটি চাতাল গড়ে তোলা হবে। মাছ নিলামের প্রক্রিয়া সবটাই ই-অকশন পদ্ধতিতে হবে।
আরও পড়ুন-ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ডায়মন্ড হারবারে
নিলামকেন্দ্রে জলের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা থাকে। তাই একটি বড় জলাধারও গড়ে তোলা হবে। বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ী ও রফতানিকারীদের রাতে বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া মাছ সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘নিলামকেন্দ্রটি গড়ে উঠলে মৎস্যজীবী, আড়তদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে।’ দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্তা অচ্যুত দাস বলেন, ‘দ্রুত কাজ চলছে। কারিগরি পরিকাঠামো নির্মাণ শেষ পর্যায়ে।’ জেলার সহ মৎস্য-অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্তকুমার প্রধান বলেন, ‘এই নিলামকেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে।’ বেনফিশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শর্মিষ্ঠা দাস বলেন, ‘কয়েক মাসের মধ্যেই নিলামকেন্দ্রটি গড়ে তোলার কাজ শেষ করতে পারব বলে আশাবাদী।’