মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াকু চরিত্রের জন্য ১৯৯৮ সালেই তাঁর ভক্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর হাতে ধরে দেন রাজনৈতিক পাঠ। রাজনীতির টানেই সুন্দরবনের চুনাখালি হাইস্কুলে ভোকেশনাল টিচার পদে ৭-৮ বছর কাজ করার পর, শিক্ষকতা ছেড়ে জেলা পরিষদের প্রার্থী হন ২০১৩ সালে। পরপর দু’বার জেতার পর এবার একেবারে সভাধিপতির পদে। দায়িত্ব পেয়েই কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন।
আরও পড়ুন-সুন্দরবনের পরিত্যক্ত জমিতে ড্রাগন ফলাচ্ছেন মহিলারা
সুন্দরবনের নদীবাঁধ রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ
গড়ে উঠেছে মানুষের পঞ্চায়েত। তাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে ২০টি জেলা পরিষদেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। উঠে এসেছেন একঝাঁক নতুন মুখ। যার মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর নারীদের সামনের সারিতে রেখেছেন। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ তাঁদের অনেকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি। আছে অনেক পুরনো মুখও। আমরা কথা বলেছি তাঁদের সঙ্গে। বাংলার মানুষের জন্য জেলা পরিষদ কীভাবে উন্নয়নের কাজ করবে, সেই ভাবনা সদ্য দায়িত্ব নেওয়া সভাধিপতিরা ভাগ করে নিয়েছেন জাগোবাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে। আজ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা…
আরও পড়ুন-গোলকিপারকে লাথি, বিতর্কে রোনাল্ডো
রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলের সঙ্গে কতদিন যোগ?
উঃ তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই আমি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৯৮ সাল থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদী চরিত্রে আমি মুগ্ধ। কলেজজীবন থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ।
আপনার রাজনৈতিক গুরু কে?
উঃ প্রয়াত বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের হাত ধরেই রাজনৈতিকভাবে আমার উত্থান। ভীষণ স্নেহ করতেন। মানুষের সঙ্গে কাজ করা, মানুষের পাশে থাকা, আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে।
আরও পড়ুন-‘খাবার থালায় ভারতের জাতীয় প্রতীক’ এক্সে সরব সাকেত গোখলে
রাজনৈতিক যোগ দেওয়ার আগে কী করতেন?
উঃ সুন্দরবনের চুনাখালি হাইস্কুলে ভোকেশনাল টিচার ছিলাম ৭-৮ বছর। সেখানে শিক্ষকতা ছেড়ে জেলা পরিষদের প্রার্থী হই ২০১৩-য়।
জেলা পরিষদের একজন সদস্য, এখন সভাধিপতি। দুটো অবস্থান কীভাবে দেখছেন?
উঃ একজন সাধারণ সদস্য ছিলাম। কেবল আমার ব্লক দেখতাম। দু’বার জেতার পর তিনবারের মাথায় সভাধিপতি হলাম। ফলে জেলার সমস্ত ব্লকে উন্নয়নের কাজ দেখতে হবে। আগের থেকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।
জেলা সভাধিপতি হওয়ার পর সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে?
উঃ না। ওঁদের কারও সঙ্গেও কথা হয়নি। যেদিন ডাকবেন নিশ্চয়ই কথা হবে।
আরও পড়ুন-আট গোল দিয়ে ফাইনালে ভারত
বিরোধীরা আপনার জেলায় অনেক পঞ্চায়েত দখল করেছে। তাদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করবেন?
উঃ মুখ্যমন্ত্রী উন্নয়ন করছেন কোনও রাজনৈতিক দল বা রং না দেখে। আমিও সেইভাবে রং, দল না বেছে মানুষকে সমস্ত পরিষেবা দেব। এটাই আমার দল শিখিয়েছে।
পরিবারে কে কে আছে? একদিকে সংসার, অন্যদিকে মানুষের কাজ, দুটো কীভাবে সামাল দিচ্ছেন?
উঃ স্বামী, দুই সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন। বাড়ির লোক সবাই সহযোগিতা করে। কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়। দিদি নিজে চাউ করেন, চা করেন, কালীপুজোর ভোগও নিজে হাতে করেন, আবার জনগণের সেবাও করেন। আমরা তো ওঁর কাছে তুচ্ছ। ওঁকে অনুসরণ করেই এগোই।
উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক কোনও বৈঠক করেছেন?
উঃ হ্যাঁ, জেলাশাসকের সঙ্গে তিনবার বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বৈঠক হয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হলে আরও ভালভাবে উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
আরও পড়ুন-ইডেনে ট্রফি, বাজল বিশ্বকাপের দামামা
জেলাতে প্রথম কাজ কী করা দরকার?
উঃ জেলায় যাঁরা বিধায়ক আছেন, জেলা পরিষদের সদস্য আছেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে জেলার কোন কোন কাজগুলোকে আগে করা দরকার, সেগুলোকে বসে ঠিক করব। একা কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। সমস্ত জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠক করে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে উন্নয়নের কাজে এগোব।
জেলার উন্নয়ন নিয়ে কী পরিকল্পনা আছে?
উঃ সরকার এবং দিদি যে ৬৮টি জনমুখী প্রকল্প করেছেন, সেগুলো এখনও যাঁরা পাননি সেগুলো তাঁদের পাইয়ে দিতে হবে। এটাই আমার কাজ।
আরও পড়ুন-৫০০০ কোটির রাজসূয় যজ্ঞ
জেলাতে নদীবাঁধের সমস্যা আছে, কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
উঃ সুন্দরবন বাঁধ নিয়ে একটা সমস্যা আছে। কারণ প্রতিবছরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে এবং বাঁধ ভেঙে চাষের জমি নষ্ট হয়। রাজ্য সরকারের চেষ্টায় সুন্দরবন এলাকার একাধিক মাটির বাঁধকে পাকা করা হয়েছে। বাঁধের কাজ সেচ দফতর করে। ইতিমধ্যে সেচ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে, একাধিক বাঁধ মেরামতের কাজ হবে। এটা রাজ্য সরকারের একার কাজ নয়, কেন্দ্র গরিব মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করে যাচ্ছে, অথচ এই বাংলায় সুন্দরবন এলাকার নদী সীমানা নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা নেই। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে তাই অনেক বাঁধের কাজ হচ্ছে না। এসব সত্ত্বেও বিধায়ক-সাংসদদের সঙ্গে বসে মাস্টার প্ল্যান করে কাজ করা হবে।
আরও পড়ুন-৫০০০ কোটির রাজসূয় যজ্ঞ
গঙ্গাসাগর মেলায় ভিন রাজ্য থেকে বহু পুণ্যার্থী আসেন। কীভাবে সামলাবেন?
উঃ গঙ্গাসাগর একটি তীর্থস্থান। প্রতিবছরই রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে। মন্দির সংস্কার করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। জেলা পরিষদ ইতিমধ্যেই কপিল মুনির মন্দির বাঁচানোর জন্য প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচা করে বাঁধের কাজ করছে। কেন্দ্র সরকার একটা টাকাও দেয় না। আমরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে মন্দিরচত্বর, মেলার অধিকাংশ সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছি। আরও কাজ করা হবে।