মেগা পুজো শেষ কিন্তু উৎসবের রং ফিকে হতে এখনও বেশ দেরি। সামনেই আবার দীপাবলি, ভাইফোঁটা। জমাটি মরশুম। ভরপুর আনন্দ সঙ্গে দেদার খানাপিনা। রসনাকে তৃপ্তি দিতে কসুর করেননি কেউ। রেস্তোরাঁর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েছেন, ফ্যামিলি গেট টুগেদারে কবজি ডুবিয়ে যা না খাওয়ার সবই খেয়েছেন। সকাল, দুপুর বিকেল জুড়ে চলেছে উৎসবের ভূরিভোজ। অ্যান্টাসিড খেয়ে পেটকে গ্যাটিস দিয়েছেন ঠিকই শরীরে কিন্তু তার প্রভাব পড়ে গেছে। বিশেষ করে যাঁরা আগে থেকেই নানা রোগের শিকার। তাঁদের ক্ষেত্রে অনিয়ম মানেই সাংঘাতিক, কারণ তাঁদের রোগ অনুযায়ী ওষুধ এবং পথ্য দুই-ই চলে।
আরও পড়ুন-এই প্রজন্মের সেরা বিরাট, দাবি চ্যাপেলের
যিনি সুগারের রোগী তিনি ভাবলেন, একটাই পুজো মিষ্টি খাব না! খাব না আমি মিষ্টি। তাই আবার হয় নাকি! ষষ্ঠী থেকে দশমী প্রতিদিনই মিষ্ঠিসুখ ভোগ করেছেন। হাইপ্রেসার তাই বলে মাটন হবে না, কোলেস্টেরল বেশি তো ভারী বয়েই গেল, নবমীতে বিরিয়ানি তো চাই-ই। এর ফলে যা হবার তাই হয়েছে।
যাঁরা সুগার, হাই ব্লাডপ্রেসার, লিপিড প্রোফাইলের সমস্যা বা ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন, তাঁদের ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া হয়ে গেছে, এর ফল হয়েছে দুই রকমের। প্রথমত, এঁরা এর জন্য মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন, দ্বিতীয়ত, হঠাৎ করেই বেশি সলটেড ফুড খাওয়ার ফলে রক্তচাপ হয়তো বেড়েছে এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস, মিষ্টি, আইসক্রিম, হাই ক্যালোরি জাঙ্ক ফুড খেয়ে সুগার এবং লিপিড প্রোফাইলের বৃদ্ধি হতে পারে। তাহলে কী কী করণীয়।
আরও পড়ুন-পুজোর লেনদেনের একাংশ জনকল্যাণে
রুটিন টেস্ট আবার
পুজোর আগে রক্ত পরীক্ষা, সুগার পরীক্ষা আরও যা যা গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট সেগুলো করিয়ে রেখেছিলেন কি? চিকিৎসকরা সাধারণত পুজোর আগে আগেই কিছু রুটিন টেস্ট করার পরামর্শ দেন। যদি না করিয়ে থাকেন তবে কিছু করার নেই। এবার করান। যাঁদের আগে থেকেই রোগ নিয়ন্ত্রণে, তাঁদের পুজোর পর বিরাট কিছু ক্ষতি হয় না। তবে যাঁরা একেবারেই নিয়মমাফিক চলেন না তাঁদের চাপ। তাই প্রথমেই দেখতে হবে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না।
আরও পড়ুন-অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করিনি, বললেন শতাব্দী
ঘাম ঝরুক
টেস্ট তো করতে দিলেন, আর অপেক্ষা না করে ব্যায়ামটা আবার শুরু করে দিন। হাঁটতে যেতেন কি সকালে? তবে আবার শুরু করুন। ছোট ছোট পা ফেলে জোরে জোরে হাঁটুন, এতে কাজ বেশি হয়। সুগার এই ক’দিনে নির্ঘাত বেড়ে থাকলে নিয়ন্ত্রণে আসবে। অফিস যাতায়াতের পথে হাঁটুন। দশমিনিট দৌড়নো যেতে পারে। ব্রিটিশ এক্সারসাইজ করুন। একটু ঘাম ঝরুক।
ঘুম ফিরুক নিয়মে
পর্যাপ্ত ঘুম অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। তাই ঘুমকে রুটিনে ফেরান। দুপুরে এবং রাতে সব মিলিয়ে আট থেকে ন’ঘণ্টা সাউন্ডস্লিপ ঘুমোন।
আরও পড়ুন-অনুব্রতর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করিনি, বললেন শতাব্দী
জল খেয়ে যান
যে কোনও রিচ খাওয়ার অনতিবিলম্বে যদি আট আউন্সের মতো জল খেয়ে নেওয়া যায়, খাবার হজম হয় খুব ভাল, আর নুনের যে ক্ষতিকর প্রভাব অর্থাৎ রক্তচাপ বৃদ্ধি, সেটা হতে পারে না। যদি সেটা না করে থাকেন তবে এখন প্রচুর জল খান এতে এতদিনের জমে থাকা টক্সিন বেরোবে শরীর থেকে।
এবার খাবারে নিয়ন্ত্রণে
এবার ডেইলি ক্যালোরি ইনটেকের একটা পরিকল্পনা করে নিন।
যদি কেউ ডায়াবেটিক হন ইতিমধ্যেই সুগার লেভেল বেড়ে গেছে। এবার লো ক্যালোরি, লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ফুড যেমন এক বাটি সবজির স্যুপ বা হাল্কা চিকেন স্ট্যু বা একবাটি মরশুমি ফল যেমন, শসা, আপেল, পেয়ারা বা দুই বা তিনটি ডিমের সাদা। অর্থাৎ এবার দেহের এক্সেস লোডটা কমাতে হবে। হালকা খাবার খেতে হবে না হলে ওষুধ খেলেও কমবে না।
সকালে উঠে মেথি ভেজানো জল খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। তারপর এক কাপ হার্বাল-টি আদা বা কারি পাতা দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে সুগার লেভেল কমবে।
আরও পড়ুন-জনসংযোগে আজ শুরু বিজয়া সম্মিলনীর সভা
আগে আমরা বলতাম ব্রেকফাস্ট লাইক এ কিং এখন সেই কনসেপ্ট নেই। এখন আমার লাইফস্টাইল রোগ অনুযায়ী খাওয়া। ছাতুর শরবত বা লস্যি খাওয়া যেতে পারে। ডাবের জল কখনওসখনও কারণ অনেকেই জানে না ডাবের জলে সুগার বাড়তে পারে।
দুপুরে ভাতটা এখন ক’দিন বন্ধ রাখুন। একদিন মাছ সঙ্গে গ্রিন স্যালাড, টক দই, সবজি সেদ্ধ।
ফল অনেকেই আপন মনে খেয়ে যান কিন্তু ফলে থাকা সুগার ফ্যাটে কনভার্ট হয়। এতেও ক্যালোরি বাড়ে। ফলের মধ্যে পাকা পেঁপে, ড্রাই ফ্রুটস।
ডিনারে এখন আর রুটি নয়, বদলে সবজি ডাল, সবজি সেদ্ধ যেমন বিট আর পালংয়ের সবজি দালিয়া, ওটস খাওয়ার যেতে পারে। রাতে ডিনার অবশ্যই তাড়াতাড়ি করতে হবে। মধু, চিনি, গুড় নয়।
আরও পড়ুন-কড়া জবাব তৃণমূল কংগ্রেসের, শকুনের রাজনীতি বিরোধীদের
অনেক ডায়াবেটিসের রোগীর কিডনি সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে এখন তাঁর খাবারে প্রোটিন একদম কমিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে অ্যানিম্যাল প্রোটিন। এরপর সোডিয়াম, পটাশিয়াম দেখে নিতে হবে।
হাইপারটেন্সি থাকলে বাইরের খাবার এখন থেকে পুরো বন্ধ, অন্তত টেস্ট করা এবং ডাক্তারকে দেখানো অবধি।
প্যাকেজড ফুড খাওয়া যাবে না। সফ্ট-ড্রিঙ্ক, হার্ড ড্রিঙ্ক সব বাদ। ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কম তেল, কম নুন যুক্ত খাবার। সকালে একটু আধটু খাওয়া গেলেও সন্ধ্যার পর একেবারেই বাড়ির খাবার। খাবার এবং ওষুধ একেবারে সময় মেনে খেতে হবে।
কোলেস্টেরলের রোগী স্যাচুরেটেড ফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ দেবে। ফ্যাট সলিউবল প্রোটিন যেগুলো শুধু সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। রাতে শুধু স্যুপেই ডিনার সারুন। ময়দা একদম বাদ দিন, আপাতত বেশ কিছুদিন। ডাক্তার দেখানোর আগে পর্যন্ত খাবারটা খান মেডিসিনের মতো।
বেশি খেয়েই শুয়ে পড়া নয়
আরও পড়ুন-কম্পিউটার ও কম্পিউটিং কিছু ফিরে কথা
এখনও পুজো যাঁদের শেষ হয়নি অর্থাৎ কালীপুজো, দীপাবলি, দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজো বাকি, তাঁরা রাতে ভোগ খেয়েই শুয়ে পড়বেন না। খেয়ে একটু হেঁটে আসুন, বজ্রাসনে বসুন।
পরেরদিন আর সেই খাবার খাবেন না। ওই সময় রেস্তোরাঁ এড়িয়ে চলুন, গ্রিলড বা বেকড ডিশ খান। লেফ্ট ওভার ফুড বাড়িতে আনবেন না। কার্বনেটেড বেভারেজ বা কোল্ড ড্রিঙ্কস একদম আর নয়।