প্রতিবেদন : এবার কি দেশের ঐতিহাসিক প্রত্নসম্পদ (Historical heritage) লুঠের ব্যবস্থা হচ্ছে? ইতিহাস মুছে দেওয়ায় সিদ্ধহস্ত মোদি সরকার আদৌ কি দেশের মহার্ঘ্য প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ রক্ষায় যত্নশীল? কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানতে চাইলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ জহর সরকার।
সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের জন্য দিল্লির ঐতিহাসিক জাতীয় সংগ্রহশালা সরানোর পরিকল্পনায় ভারতের অমূল্য প্রত্নসম্পদের (Historical heritage) ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ এবং একদা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিবের দায়িত্ব পালন করা প্রাক্তন আমলা জহর সরকার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরিকে চিঠি লিখে নিজের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। জানতে চেয়েছেন, রাজধানীর জাতীয় সংগ্রহশালায় বছরের পর বছর সংগ্রহ করে রাখা অমূল্য সম্পদের বিষয়ে কী চিন্তাভাবনা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের? কারণ মোদি সরকারের দাবি, জাতীয় সংগ্রহশালার বদলে ‘যুগে যুগে ভারত’ নামে নতুন সংগ্রহশালা গড়া হচ্ছে। তাতে তুলে ধরা হবে ভারতের পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। এর পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়াম খালি করার সরকারি নির্দেশ জারি হয়েছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে আশঙ্কা প্রকাশ করে জহর সরকার প্রশ্ন তোলেন, স্থায়ী কোনও ঠিকানায় দেশের অমূল্য সম্পদকে স্থানান্তর করার আগে তড়িঘড়ি কীভাবে তা ভেঙে ফেলার সরকারি নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে? দেশের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্থাপত্য নিয়ে ন্যূনতম দায়িত্ববোধ, সম্মান বা দয়ামায়া যদি বিজেপি সরকারের থাকত তাহলে স্থায়ী কোনও ঠিকানা নিশ্চিত না করে এমন অপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে পারত না তারা। দেখা যাচ্ছে, নিজেরাই আগ্রাসী লুটেরার মতো দেশের সম্পদ সরানোর রাস্তা খুলে দিচ্ছে। পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এরপর যদি চোরাপথে তা ভারতের বাইরে পাচার হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কে দায়ী থাকবে? দিল্লিতে হাজার হাজার কোটি টাকায় নরেন্দ্র মোদির সাধের সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের আওতায় নির্মাণকাজ চলছে। আর তার জেরেই ভাঙা পড়তে চলেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় সংগ্রহশালা। চলতি বছরের মধ্যেই ন্যাশনাল মিউজিয়ামের লক্ষাধিক অমূল্য সম্পদকে অন্যত্র সরানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে অমূল্য সম্পদের অনেকাংশই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমনকী অমূল্য এই সম্পদকে গুদামঘরে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। আর এই আশঙ্কাতেই চিঠি লিখেছেন তৃণমূল সংসদ। দিল্লির জাতীয় সংগ্রহশালায় প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী রয়েছে প্রায় দু’লক্ষ। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত প্রায় ২০ হাজার সামগ্রী। এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ স্থানান্তরিত করে নর্থ এবং সাউথ ব্লকের সংগ্রহশালায় জায়গা দেওয়া হতে পারে। অন্যথায় পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনিশ্চিত সময়ের জন্য বন্ধ করে রাখা হতে পারে ন্যাশনাল মিউজিয়াম। ফলে গবেষক থেকে উৎসাহী আমজনতা— ক্ষোভ বাড়ছে প্রত্যেকের। জহর সরকারের বক্তব্য, দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে হরপ্পা সভ্যতার ভাস্কর্য ও ব্যবহার্য জিনিস, পাল বংশ, কুষাণ বংশ, গুপ্ত যুগের প্রত্নসম্ভার, বিভিন্ন যুগের মুদ্রা, প্রাচীন আদিবাসীদের জীবনচিত্রের নিদর্শন, পুরনো বাদ্যযন্ত্র, সাজপোশাক সবই রয়েছে। স্থানান্তর করার আগে এগুলির নথিবদ্ধ তালিকা তৈরি হয়েছে কি? রোদজলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ন্যাশনাল মিউজিয়াম নর্থ বা সাউথ ব্লকে সরানো হলে প্রদর্শনীর পরিকাঠামো কতদূর সম্পন্ন হয়েছে? সুদীর্ঘ টিনের আচ্ছাদনে ঢেকে কার্যত গোপনে ন্যাশনাল মিউজিয়াম ঘিরে কাজের এত তোড়জোড় কীসের, কেন্দ্রের কাছে তা জানতে চেয়েছেন সাংসদ। স্থানান্তরের ফলে এহেন জাতীয় সম্পদ আদৌ রক্ষা করা যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, নয়াদিল্লির তিন মূর্তি ভবনের ‘নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়াম এবং লাইব্রেরি (এনএমএমএল) আনুষ্ঠানিকভাবে বদল করেছে মোদি সরকার। স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন সমিতির চেয়ারপার্সন নৃপেন্দ্র মিশ্র জানিয়েছেন, এবার থেকে এনএমএমএল-এর পরিচিতি হবে ‘প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা এবং গ্রন্থাগার সোসাইটি’ (প্রাইম মিনিস্টার মিউজিয়াম অ্যান্ড লাইব্রেরি সোসাইটি বা পিএমএলএল সোসাইটি) নামে।
আরও পড়ুন- সিকিমকে টাকা বাংলা বঞ্চিতই, ২৪ কোটি বরাদ্দ করলেন মুখ্যমন্ত্রী