প্রতিবেদন : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিচারকদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে। শুধুমাত্র প্রশাসন বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় দৃঢ়তা আশা করলেই হবে না, বিচারবিভাগের নিজেদের আগে সাহসী ও দায়িত্বশীল হতে হবে। অবসরের প্রাক্কালে শুক্রবার এক বক্তৃতায় বললেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউল (Sanjay Kishan Kaul)। বিচারপতি কাউল বলেন, বিচারকদের সমর্থন করার জন্য সাংবিধানিক সুরক্ষা রয়েছে, তার পরেও বিচারকরা যদি যথাযথ সাহস দেখাতে না পারেন তাহলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা অনুসরণ করা কঠিন হবে। দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতির এই তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য তুলে ধরে এক্স হ্যান্ডেলে বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বুঝিয়ে দিয়েছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা বলেছেন বিদায়ী বিচারপতি।
শুক্রবার ছিল সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউলের (Sanjay Kishan Kaul) শেষদিন। শেষদিনের এই বিদায় ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘একজন বিচারক বা বিচারপতির সাহসিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাংবিধানিক সুরক্ষার সঙ্গে যদি আমরা এটি প্রদর্শন করতে না পারি, তবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষে সাহসী চরিত্র দেখানো কঠিন। সুপ্রিম কোর্টের বারকে বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে এবং সমর্থন করতে হবে, প্রয়োজনে সংশোধনও করতে হবে।’’
প্রাসঙ্গিকভাবে, বিচারপতি কাউল ব্যক্তি এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমশ কমতে থাকা সহনশীলতার বিষয়টিও উল্লেখ করে, মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া এবং গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একটি সমাজ হিসাবে আমাদের অবশ্যই একে অপরের প্রতি সহনশীল থাকতে হবে। বিশ্বব্যাপী এখন সহনশীলতা কমে গিয়েছে। সময় এসেছে মানবজাতি যাতে একে অপরের সঙ্গে সহনশীলতা বজায় রেখে বসবাস করতে শেখে তা অনুশীলন করা।
শুক্রবার অবসর গ্রহণের দিনে আনুষ্ঠানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে বসে বক্তৃতা দেন বিচারপতি কাউল। তিনি শুনানি ‘স্থগিত করার সংস্কৃতি’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বলেন, তালিকাভুক্ত বিষয়গুলি অবিলম্বে শোনা উচিত। কাউলের কথায়, আমি কখনও কাউকে আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে অনুমতি দিইনি এবং এটি আমার নাতি-নাতনিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বিচারপতি কাউল অতীত স্মৃতিচারণা করে বলেন, যখন আমি একজন বিচারক হয়েছিলাম, একজন সতীর্থ সিনিয়র বিচারক আমাকে বলেছিলেন যে মামলাকারীরা শেষ অবলম্বন হিসাবে আদালতে আসেন এবং যখন তাঁরা ৫০ এর জন্য আসেন, তখন তাঁদের ৪৫ দেবেন না। কারণ তাঁরা অনেক বেশি ব্যয় করেন।
১৯৫৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর শ্রীনগরে জন্ম বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউলের। ১৯৮২ সালে আইনজীবী হিসাবে নথিভুক্ত হন তিনি। প্রাথমিকভাবে দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের বাণিজ্যিক, দেওয়ানি, রিট, মূল এবং কোম্পানি আইন সম্পর্কিত ক্ষেত্রে ওকালতি করেছিলেন। ৩ মে, ২০০১-এ দিল্লি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন এবং পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে স্থায়ী বিচারক হন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লি হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন কাউল। জুন, ২০১৩ সালে তিনি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। এর পরে ২৬ জুলাই, ২০১৪ সালে তিনি মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭-তে তিনি দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে নিযুক্ত হন।