আজ সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিন। আজই বড়পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে তাঁর অভিনীত ছবি ‘কাছের মানুষ’ (Kacher Manush)। জন্মদিনের স্পেশ্যাল উপহার এর চেয়ে ভাল একজন অভিনেতার কাছে আর কী বা হতে পারে। অন্য ধারে দর্শকদের কাছেও দুর্দান্ত পুজো উপহার, দুই সুপারস্টার দেব ও প্রসেনজিৎকে এক ফ্রেমে দেখতে পাওয়া। এর আগে ‘জুলফিকার’ ছবিতে দুই অভিনেতা একসঙ্গে থাকলেও সে ছবি ছিল মাল্টিস্টারার। সেই অর্থে দুই তারকার নিজের ছবি নয়। কিন্তু এসব তথ্যের চেয়েও যা বড় তা হল ছবির বিষয়। ভীষণ প্রাসঙ্গিক কিন্তু চিরকালীন। চমক ছিল ছবির ট্রেলারেই। ‘জীবন যখন মৃত্যুর মুখোমুখি’, ট্রেলারের প্রথম ক্যাচ লাইন যদি এটা হয়ে থাকে তো শুরুর ভিস্যুয়ালটা আরও ইন্টারেস্টিং। ১৯৬৪ সালে রাজেন তরফদার পরিচালিত ‘জীবন মৃত্যু’ ছবিতে বিকাশ রায় আর অনুপকুমারের কথোপকথন দেখা যায় শুরুতেই, “তোমার মৃত্যু মানেই তো আমার জীবন…”! সাদা-কালোর সে যুগের সঙ্গে মিশে যায় বর্তমানের রঙিন বিনোদন দুনিয়া। কিন্তু মূল প্রশ্ন একই। কেন প্রাসঙ্গিক, কেন চিরকালীন খানিক আন্দাজ এ থেকেই হতে পারে কিন্তু বাকিটা বুঝতে চাইলে আজই চলে যেতে পারেন সিনেমা হল-এ। কাছের মানুষকে সঙ্গে পেলে ভাল না পেলে একাও যেতে পারেন কারণ এ ছবি কোথাও নিজের সঙ্গে নিজের মোকাবিলা করার কথাও বলে।
ছাপোষা সাধারণ এক যুবকের চরিত্রে (Kacher Manush) দেব আর প্রসেনজিৎ হলেন ‘এক ইনসিওরেন্স কোম্পানির ছোট্ট এজেন্ট’! মা অসুস্থ। এই অবস্থায় অপরাধবোধ আর অবসাদে ভুগে আত্নহত্যার পথ বেছে নেওয়া দেবের সঙ্গে দেখা প্রসেনজিতের। মরতেই যখন চাইছে তখন সেই মরাটা ফ্রুটফুল হোক। কাজে লাগুক! তেমনই প্রস্তাব আসে প্রসেনজিতের তরফে। তাঁরই পরামর্শে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য একটা ডেথ বেনিফিট ইনশিওরেন্স পলিসি করায় দেব। কিন্তু পলিসির শর্ত একটাই। বিমার টাকা পেতে গেলে মরতে হবে! দেব তাতেও রাজি। এরপর শুরু হয় প্ল্যানিং। আত্মহত্যা হলে তো হবে না। মৃত্যু হতে হবে দুর্ঘটনায়। তাই তার প্ল্যান ছকা শুরু হয়। দুর্ঘটনা কোথায় ঘটবে! রেললাইনে ট্রেন অ্যাকসিডেন্টে, বহুতল থেকে মাটিতে পড়ে, রাজপথে বাসের তলায় নাকি জলে ডুবে। চেষ্টা চলতে থাকে একের পর এক!
আরও পড়ুন-আজ থেকে শুরু হচ্ছে সবুজের পথে হাতছানি
এই মৃত্যুর নামাবলির মধ্যেই জীবনের সুর নিয়ে আসে ইশা। ইশা সাহা। গত পুজোয় এই ইশাই ছিলেন দেবের সঙ্গী। গোলন্দাজ-এ। এই পুজোতে ইশার আরও এক ছবির মুক্তি, ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’। নিজের মতো করে টলিউডে পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে চলেছেন এই শক্তিশালী অভিনেত্রী। ‘কাছের মানুষ’-এর প্রচারে এ-নিয়ে দেবের সঙ্গে খুনসুটিও হয়েছে বিস্তর! এ-ছবিতে জীবন থেকে মুখ ফেরানো দেবের কাছে অক্সিজেন নিয়ে আসে ইশা। একসঙ্গে পথ চলার স্বপ্ন দ্যাখে। স্বপ্ন দেখায় দেবকেও। কিন্তু মৃত্যুও যে হাতছানি দিয়ে ডাকে। জীবন-মৃত্যুর এই দোলাচল পুরো ছবি জুড়েই। আসলে ‘মৃত্যু’ এখানে রূপক। এর মাধ্যমে মানুষ চেনাই আসল উদ্দেশ্য। কাছের মানুষ, কতটা আপন, দূরের মানুষই বা কেমন দূরের তা ভাবাবে দর্শককেও।
ছবির (Kacher Manush) একটি গান আছে ট্রেলার জুড়ে, ‘গাড়ি গড়াতে যেমন চাকা লাগে, কলিযুগে বাঁচতে গেলে টাকা লাগে’! জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে এই অমোঘ সত্যিও ওতপ্রোত জুড়ে আছে কাহিনিতে। সেই সূত্র ধরেই কীভাবে মূল তিন চরিত্র পরস্পরের কাছে আসছে দূরে যাচ্ছে তা দেখা যাবে পর্দায়। ছবিতে আরও যারা অভিনয় করেছেন, তাঁরা হলেন, সুমিত কীর্তনিয়া, রঞ্জিত মল্লিক, তুলিকা বসু, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, তৌসিফ রেজা। শ্যুটিং হয়েছে কলকাতারই বিভিন্ন জায়গায়। পথিকৃৎ বসুর ভাবনা ও পরিচালনায় এই ছবি মুক্তির কথা ছিল অবশ্য আগেই। কোভিড যেমন অনেক হিসেব উল্টে দিয়েছিল তেমনই প্রভাব ফেলেছিল এই ছবিতেও। কিন্তু সেই অবসরে প্রযোজক দেব যে একের পর এক নতুন ভাবনার ছবি ভাবতে পেরেছেন এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা উপস্থাপিত করতে পেরেছেন এটাই টলিউডের প্রাপ্তি। ‘কাছের মানুষ’-এর সংগীত পরিচালনা করেছেন নীলায়ন চট্টোপাধ্যায়। ক্যামেরায় মধুরা পালিত। প্রযোজক দেব নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে, নতুনদের সুযোগ দিতে ভীষণ উৎসাহী। নীলায়ন এবং মধুরা, দেব প্রযোজিত ‘কিশমিশ’ ছবিতে যে-যার ক্ষেত্রে দারুণভাবে সফল। তাই ফের তাঁরা এ ছবিতে জুটি বেঁধেছেন। আশা করা যায় এ ছবিতেও তাঁরা নিজেদের স্বাক্ষর রাখবেন। আশা রাখছেন দর্শকও। তাঁরা নিশ্চিত, নায়ক দেব যেভাবে টলিউড শাসন করেছেন, প্রযোজক দেবও সেই পথেই এগোচ্ছেন। ‘কাছের মানুষ’ সেই ভেঞ্চারে কতটা কাজে আসতে পারে সেটাই এখন দেখার।