প্রতিবেদন : কালীপুজো (Kali puja- West Bengal) এবং দীপাবলি উপলক্ষে সকলকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সামাজিক মাধ্যমে মানুষের শুভকামনা করে পোস্টও করেছেন তিনি। লিখেছেন, দীপাবলির প্রদীপের আলোয় আনন্দ এবং উজ্জ্বলতায় ভরে উঠুক জীবন। কালীপুজো এবং দীপাবলি উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, দীপের আলোয় উদ্ভাসিত বাংলার প্রত্যেক মানুষের হৃদয়।
এদিন দুপুর দুটোর কিছু পর থেকেই শুরু হয়ে যায় অমাবস্যা। ঘরে ঘরে শঙ্খধ্বনিতে সূচনা হয় দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোর। অলক্ষ্মীকে বিদায় জানিয়ে ঘরে লক্ষ্মী প্রতিষ্ঠার আরাধনা। সময়ের হাত ধরেই এখন ছোট হয়ে এসেছে দিন। বিকেল ৫টা বাজতে না বাজতেই আলোর ঝরনাধারায় ভেসে গিয়েছে মহানগরী কলকাতা, যমজনগরী হাওড়া এবং লাগোয়া শহরাঞ্চলও। শব্দবাজির তাণ্ডব রুখতে এদিন সকাল থেকেই পথে নেমেছে পুলিশ। মানুষও আনন্দে মেতে উঠেছেন পরিবেশবান্ধব বাজি নিয়েই। গ্রাম-বাংলায় নিজস্ব ঘরানায় আয়োজন করা হয়েছে শক্তি-আরাধনার। তবে অমাবস্যার সময়সীমা যাই হোক না কেন শক্তি আরাধনার আদর্শ সময় কিন্তু নিশুতি রাতই। সেই রীতি মেনেই বাড়ির পুজো কিংবা বারোয়ারি— সব জায়গাতেই কালীপুজো মানেই রাত জাগার পালা। অবশ্য কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, ঠনঠনে কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি কিংবা লেক কালীবাড়িতে সকাল থেকেই পুজো (Kali puja- West Bengal) দেওয়ার দীর্ঘ লাইন। কালীঘাটে এদিন মা-কে বরণ করা হয়েছে লক্ষ্মীরূপে। তারাপীঠে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। তারা মায়ের পুজো হয়েছে কালীরূপেই, তন্ত্রমতে। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গী কালী, আসানসোলের হটন রোড কালীবাড়ি এবং অবশ্যই কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে পুজো হয়েছে প্রাচীন রীতি মেনে।
কলকাতা শহরে সন্ধে নামতেই রাস্তায় জনতার ঢল। কেশব সেন স্ট্রিটে নবযুবক সংঘ, আমহার্স্ট স্ট্রিট সর্বজনীন পুজোকে ঘিরে উদ্দীপনা আজও তুঙ্গে। নিমতলা এবং কেওড়াওতলা মহাশ্মশানেও শক্তির আরাধনা হয়েছে নিজস্ব রীতিতে। রাত যত বেড়েছে বারাসত-মধ্যমগ্রামে তত বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভিড়। থিম আর সাবেকিয়ানার স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে এখানে। নৈহাটিতে বড়মার মন্দিরের সামনে হাজারো ভক্তের সমাগম। গোটা নৈহাটি জুড়ে আলোর জাদু। তবে এখানকার বৈশিষ্ট্য হল প্রতিমার উচ্চতা।
শব্দবাজির তাণ্ডব এবারে নেই বললেই চলে। বলা যেতে পারে, শব্দবাজির সেই ভয়াবহতা এখন অতীত। রবিবার সন্ধ্যা থেকে এই ছবিটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মহানগরী এবং লাগোয়া এলাকাগুলোতে। কৃতিত্ব অবশ্যই পুলিশ এবং প্রশাসনের। সারাদিন ধরেই এলাকায় এলাকায় গলি থেকে রাজপথে টহল দিয়েছে পুলিশবাহিনী। রাত যত বেড়েছে, নজরদারি তত কড়া হয়েছে। বিশেষ নজর রাখা হয়েছে আবাসনগুলোর ছাদে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষজ্ঞ দলও এলাকায় এলাকায় ঘুরে খতিয়ে দেখেছে পরিস্থিতি। লক্ষণীয়, নিষিদ্ধবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ লাগাতার অভিযান শুরু করেছিল বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। স্বাভাবিকভাবেই বাজার দখল করেছে আলোর বাজিই। সবমিলিয়ে দীপান্বিতা এবারে প্রকৃত অর্থেই হয়ে উঠেছিল আলোর উৎসব।
লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার রাত থেকেই চিহ্নিত কিছু বহুতলের ছাদে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্র এবং শনিবার বিভিন্ন আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও করেছে পুলিশ। যখন-তখন বাজি না ফাটানো এবং ছাদে ওঠার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণের কথা জানানো হয়েছে তাঁদের। এলাকায় কতগুলি বসত বহুতল রয়েছে, তার তালিকা তৈরি করে সেগুলিতে বাজি ফাটানোর জন্য আলাদা জায়গা চিহ্নিত করা রয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে থানার ওসি-দের।
কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, রবিবার পুজোর দিন, সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাউন্ডবক্স এবং মাইক বাজানোয় ছাড় থাকবে। সোমবার ছাড় থাকবে সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এর বাইরে জরুরি ঘোষণার জন্য মাইক ব্যবহার করা যাবে। নিয়মভঙ্গ হলেই কলকাতা পুলিশ আইনের ৪৩ডি এবং ক্যালকাটা সাবার্বান পুলিশ আইনের ১৭ডি ধারায় মামলা করা হবে। এর পাশাপাশি, বিস্ফোরক আইনে মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখা হয়েছে বেআইনি বাজি ব্যবহারের জন্য ধরা পড়লে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং আদালত বাজি ফাটানোর যে সময় বেঁধে দিয়েছে, তার বাইরে ফাটালেও একই রকম পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন নগরপাল। বেশ কয়েকটি জায়গায় শব্দবাজি ফাটানোর খবর পেয়েই পুলিশ দ্রুত পৌঁছে গিয়ে ব্যবস্থা নেয় পুজোর রাতে।
আরও পড়ুন- ভোগ রেঁধে মাতৃ আরাধনায় মুখ্যমন্ত্রী