অনির্বাণ কর্মকার, দুর্গাপুর: এখনও থেকে গিয়েছে গা-ছমছমে পরিবেশ। একসময় গভীর শাল, সেগুন আর মহুয়ার জঙ্গল ছিল। কথিত, বন কেটে জনবসতি স্থাপন হয় বলেই গ্রামের নাম বনকাটি। এই বনকাটিতেই হয় জেলার আদি এবং প্রাচীন কালীপুজো (Durgapur- Kali puja)। এই কালী প্রতিষ্ঠা করেন বাংলার রাজা বল্লাল সেনের গুরুদেব মহাতান্ত্রিক মহেশ্বরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে বল্লাল সেন যুদ্ধে হেরে চলে আসেন এই গড় জঙ্গলে। তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন গুরুদেব মহেশ্বরপ্রসাদ। তিনি বনকাটি এই অঞ্চলে মহাশ্মশান স্থাপন করে তাঁর তন্ত্রসাধনার পীঠ গড়েন। তান্ত্রিক মহেশ্বরপ্রসাদ রচিত মন্ত্র পাঠ করেই হয় কাঁকসার রায়বাড়ির কালীপুজো। বংশপরম্পরার রীতি মেনে বর্তমানে এই রায় পরিবারের হাতেই এসেছেন বল্লাল সেনের গুরু মহেশ্বরপ্রসাদ প্রতিষ্ঠিত দেবী কালী। পুজোয় বেশ কিছু একেবারেই ব্যতিক্রমী নিয়ম রয়েছে। পরিবারের কর্তা অনিল রায় বলেন,‘‘দেবী কালী খুবই জাগ্রত এবং প্রতিটি নিয়ম মেনে তান্ত্রিক মতে পুজো হয়। ছাগ, ভেড়া এবং মহিষ বলি দেওয়া হয় কালীপুজোয় (Durgapur- Kali puja)। পরিবারের একজনের শরীর থেকে সামান্য রক্ত নিয়ে দেওয়া হয় দেবী কালীর উদ্দেশ্যে তান্ত্রিক মতে পুজোর নিয়ম মেনে।’’ বেশ কয়েক বছর আগে পাথরের যূপকাষ্ঠ মিলেছিল মন্দিরের পাশে খনন করার সময়। পরিবারের সদস্য লালু রায় বলেন, এই যূপকাষ্ঠ থেকেই প্রমাণ হয় কত প্রাচীন এই পরিবারের দেবী।
নিয়ম অনুসারে শ্মশানে শবসাধনা করতে হয় পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্রকে। সম্পূর্ণ নিঃশব্দে শবসাধনার পরে নিকটবর্তী পারিবারিক পুকুরে স্নান করে শ্বেতবস্ত্র পরিধান করে দেবীর ঘট নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করে উল্টো মুখে দাঁড়িয়ে কিছু না দেখেই বলে যান উপচারে কোনও ত্রুটি আছে কি না। তারপরে ঘট স্থাপন হয়। এরপরে নিশিরাতে পুজো শুরু হয়। পুজোয় অর্ঘ্য দেওয়া হয় এক হাজার একটা বেলপাতা এবং ৫ কেজি ২৫০ গ্রাম ঘি। তবে পুজোর সময় রায় পরিবার ছাড়া অন্য কেউ সেখানে থাকতে পারেন না। নিশিরাতে বলি হয় ছাগ, ভেড়া এবং মহিষ। রাতেই ছাগমাংস রান্না করে দেবীকে ভোগ দেওয়া হয়। পরে রায় পরিবারের পক্ষে করা হয় নরনারায়ণ সেবা।
বল্লাল সেনের গুরু প্রতিষ্ঠিত আদি কালীর পুজো চলছে ৯০০ বছর ধরে
কাঁকসার রায়বাড়ি