কালী কলকাত্তাওয়ালি

কালীর শহর কলকাতা। মহানগরে আছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন কালীমন্দির। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাব ও সর্বজনীন পুজো কমিটির উদ্যোগেও আয়োজিত হয় জমজমাট কালীপুজো। চাইলে পুজোর দিন ঘুরে দেখতে পারেন। শহরের এক-ডজন বিখ্যাত ক্লাব ও সর্বজনীন কালীপুজোর সন্ধান দিলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

নবযুবক সংঘ
ফাটাকেষ্ট কালীপুজো (Kali Puja- Kolkata) নামেই বিশেষ পরিচিত। এবার ৬৫ তম বর্ষ। উদ্বোধন ২২ অক্টোবর। কলেজ স্ট্রিট সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের উপর বাঁধা হচ্ছে বিরাট মণ্ডপ। দেখা যাবে ১৪ ফুটের সাবেক প্রতিমা। শিল্পী মাধব পাল। পাশাপাশি থাকছে আকর্ষণীয় আলোকসজ্জা। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার তো বটেই, প্রতিবছর এই পুজো দেখার জন্য ছুটে আসেন অন্য রাজ্যের বহু মানুষ। অঞ্জলি দেন। আসেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং বিনোদন জগতের বহু তারকা। বিভিন্ন সময় এসেছেন উত্তমকুমার, অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না, রাজ বব্বর, দেব আনন্দ, শত্রুঘ্ন সিনহা, আশা ভোসলে, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, বাপ্পি লাহিড়ী প্রমুখ। প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিতরণ করা হবে প্রসাদ।

আমহার্স্ট স্ট্রিট সাধারণ শ্রীশ্রী কালীপূজা কমিটি
কলকাতার অন্যতম প্রাচীন কালীপুজো। এবার ৮১ তম বর্ষ। পরিচালনায় ইয়ং স্পোর্টিং ক্লাব। সোমেন মিত্রর পুজো বলেও খ্যাত। রাজা রামমোহন রায় সরণির উপর বাঁধা হচ্ছে আকর্ষণীয় মণ্ডপ। এখানে দেখা যায় ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন। প্রায় ২৫ ফুটের প্রতিমা। শিল্পী সনাতন রুদ্রপাল। দেবীকে সাজানো হয় সোনা ও রুপোর অলঙ্কারে। মাতৃমূর্তি, মণ্ডপ, আলোকসজ্জা দেখার জন্য ভিড় জমান দূর-দূরান্তের বহু মানুষ। নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিতরণ করা হয় প্রসাদ। পুজোর পাশাপাশি কমিটি যুক্ত থাকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে।

পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীন কালীপুজো
১৯২৮ সালে সূচনা কলকাতার বড় কালী-র। এবার ৯৫ তম বর্ষ। পরিচালনায় পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতি। জানা যায়, একটা সময় এই ক্লাব স্বাধীনতা সংগ্রামের গোপন ঘাঁটি ছিল। পুজোর সূচনা করেন বিপ্লবী বাঘাযতীন। যুক্ত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। মণ্ডপে দেখা যায় ৩০ ফুটের কালী প্রতিমা। মায়ের হাতে ভারী রুপোর খাঁড়া। জিভ থেকে শুরু করে করে কানের দুল, নাকের নথ— সবই খাঁটি সোনা ও রুপোর। সবমিলিয়ে ঐতিহ্যে ও আভিজাত্যে আজও অমলিন উত্তর কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলের এই পুজো। বনেদি বাড়ির পুজোর মতোই এর রীতি-আচার। প্রতি বছর দেখা যায় জনজোয়ার।

জানবাজার সম্মিলিত কালীপূজা সমিতি
সূচনা ১৯৬৯ সালে। এবার ৫৪তম বর্ষ। জানবাজার এলাকার কয়েকটা পুজোকে একত্রিত করে শুরু হয়েছিল দশ মহাশক্তির আরাধনা। এখানে দেখা যায় মায়ের দশটা রূপ। কালী, তারা, ষোড়শী, মাতঙ্গী, ধূমাবতী, কমলা, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, বগলা এবং ছিন্নমস্তা। প্রতিটি মূর্তির পুজো হয় নিষ্ঠার সঙ্গে। এবারের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মাইসরের একটি প্যালেসের আদলে। পুজোর সময় এলাকার নারী-পুরুষ সবাই উপস্থিত থাকেন। বিতরণ করা হয় প্রসাদ। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বহু বিশিষ্ট মানুষ আসেন। সমাজসেবা এই পুজোর একটি বিশেষ দিক। প্রতিবছর নামে জনজোয়ার। আছে গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা। এসপ্ল্যানেড মেট্রো স্টেশন থেকে পুজোমণ্ডপ খুব দূরে নয়। এস এন ব্যানার্জি রোডের ঠিক উপর।

আরও পড়ুন-হিমাচলে টিকিট বণ্টন নিয়ে তীব্র দ্বন্দ্ব বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর

রামমোহন রায় রোড তরুণ সংঘ
৩০ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। আগে ছিল সাবেক পুজো। গত পাঁচ বছর থিম পুজোর প্রচলন হয়েছে। এবারের ভাবনা ‘যাপনের উদযাপন’। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন লোকশিল্প ও ঐতিহ্যমণ্ডিত প্রতিষ্ঠানকে। মণ্ডপে শোভা পাবে সাবেক মাতৃমূর্তি। শিল্পী চায়না পাল। পুজোর পাশাপাশি আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সুকিয়া স্ট্রিটের এই কালীপুজো মণ্ডপে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য দর্শক-সমাগম চোখে পড়ে।

রয়েল ক্লাব
শিয়ালদহের কাছে আমহার্স্ট স্ট্রিট মোড়। রাস্তার ধারেই বাঁধা হচ্ছে বিশাল পুজো মণ্ডপ। দেওয়া হচ্ছে একটি মন্দিরের আদল। এবার পুজোর ৯১ তম বর্ষ। দেখা যাবে চালচিত্র-সহ ১৬ ফুটের সাবেক শ্যামা প্রতিমা। শিল্পী সনাতন রুদ্রপাল। প্রতি বছর প্রতিমা দর্শনের জন্য আসেন কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার বহু মানুষ। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। পাশাপাশি আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিছু মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয় বস্ত্র।

আমহার্স্ট স্ট্রিট বালক সংঘ
শ্রদ্ধানন্দ পার্ক সংলগ্ন পুজো। এবার ৬৯ বছর। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে একটি মন্দিরের আদলে। এখানকার সাবেক মাতৃমূর্তি দেখার জন্য জন্য বহু লোকসমাগম হয়। দেবীকে সাজানো হয় স্বর্ণালঙ্কারে। নিয়ম মেনে পুজোর পাশাপাশি আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অন্নকূট।

বেনিয়াটোলা লেন ৪০-এর পল্লী
৭৩ তম বর্ষ। আকর্ষণীয় পূজা মণ্ডপে দেখা যাবে ৮ ফুটের শ্যামা প্রতিমা (Kali Puja- Kolkata)। পুজোর পাশাপাশি বিতরণ করা হয় বস্ত্র, প্রসাদ। পুজো ছাড়াও আয়োজিত হয় রক্তদান শিবির। লকডাউনের সময় কমিটি পাশে দাঁড়িয়েছে বহু মানুষের। পাড়ার একমাত্র পুজো। এলাকাবাসীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মহাত্মা গান্ধী রোডে দাঁড়িয়ে দেখা যায় মণ্ডপ। তাই লোকসমাগম হয় প্রচুর।

গিরিশ পার্ক ফাইভ স্টার স্পোর্টিং ক্লাব
এই শ্যামা পুজো ৬-এর পল্লী সর্বজনীন নামেও পরিচিত। ৬৩ তম বর্ষের ভাবনা ‘যতনে’। পরিকল্পনা মানস দাস। মণ্ডপে শোভা পাবে আকর্ষণীয় প্রতিমা। শিল্পী ধনঞ্জয় রুদ্রপাল। পুজোর উদ্বোধন ২২ অক্টোবর। ২৬ অক্টোবর অন্নকূট মহোৎসব। থাকছে‘জাগোবাংলা’ স্টল। প্রতিদিন উপস্থিত থাকবেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য বিশিষ্টজন। প্রতি বছর আসেন অসংখ্য দর্শনার্থী। রীতিমতো লাইন পড়ে। পুজো মণ্ডপটি গিরিশ পার্ক মেট্রোর কাছেই।

যুবশ্রী
শ্রদ্ধানন্দ পার্ক এবং ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ক্রসিংয়ের মাঝামাঝি একটি মন্দিরের আদলে বাঁধা হচ্ছে মণ্ডপ। এবার পুজোর ৬৪ তম বর্ষ। শোভা পাবে চালচিত্র-সহ প্রায় ১৮ ফুটের সাবেক কালী প্রতিমা। শিল্পী প্রদীপ রুদ্রপাল। এলাকা সেজে উঠেছে আলোকমালায়। প্রতি বছর আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অন্নকূট। হবে এবারও। দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে শহরের এই পুজো মণ্ডপে।

২২-এর পল্লী সর্বজনীন শ্যামা পূজা
দক্ষিণ কলকাতার এই পুজো পরিচালনা করে ভবানীপুর বক্সিং ক্লাব। শরীর চর্চার জন্য ক্লাবের বিশেষ পরিচিতি। একসময় লাঠিখেলা, কুস্তি, জিম, বডি বিল্ডিং, বক্সিং ইত্যাদি হতো। এখন হয় শুধুমাত্র বক্সিং। এবার শক্তি আরাধনার ৮০ বছর। প্রায় ১৩ ফুটের সাবেক প্রতিমা। নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। বজায় আছে বলিদান প্রথা। প্রতিবছর হয় লোক সমাগম।

গৌরীবাড়ি সার্বজনীন শ্রীশ্রী শ্যামা পূজা
৮২ তম বর্ষ। গৌরিবাড়ি পরেশনাথ মন্দিরের সামনে তৈরি হচ্ছে আকর্ষণীয় মণ্ডপ। শোভা পাবে ১৪ ফুটের সাবেক প্রতিমা (Kali Puja- Kolkata)। পুজো হয় নিষ্ঠার সঙ্গে। বিতরণ করা হয় প্রসাদ। কমিটির উদ্যোগে মহালয়ার দিন আয়োজিত হয়েছে বস্ত্র বিতরণ।

Latest article