প্রতিবেদন : ‘‘পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ?” শুনলেই মনে পড়ে যায় সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাড়াজাগানো সেই উপন্যাস কপালকুণ্ডলা। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সমুদ্রসৈকত, নবকুমার-কপালকুণ্ডলা থেকে ভয়ঙ্কর কাপালিকের গা ছমছম করা ডেরা, সেই মন্দির। সবটাই কি সাহিত্যসম্রাটের কল্পনা? নাকি কল্পনার মধ্যে বাস্তবও কিছু ছিল? গল্পটা লেখকের কল্পনায় জন্ম নিলেও ১৮৬৬ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের পটভূমি কিন্তু বাস্তব।
আরও পড়ুন-বাজি ব্যবসায়ীদের ক্লাস্টার
এমনই দাবি পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির দারিয়াপুরের বাসিন্দাদের। সেখানেই রয়েছে এই কপালকুণ্ডলা মন্দির। দু’দুটো শতাব্দী পেরিয়ে এসে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই মন্দির। যা আদতে কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের পটভূমি। স্থানীয় বাসিন্দারা সেই গল্পই বলছিলেন। আর মন দিয়ে সে গল্প শুনছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে জনসভা থেকে ফেরার পথে সেই ইতিহাসকেই ছুঁয়ে দেখলেন দু’জন। মন্দিরের সামনে বঙ্কিমচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি। মূর্তি পেরিয়ে সেই মন্দির। কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের আঁতুড়ঘর। উপন্যাসের পাতা থেকে বাস্তবের মাটিতে, কুণাল থেকে ঋতব্রত, শিহরিত দু’জনই। কাপালিকের মন্দির, কপালকুণ্ডলার বাসস্থান।
আরও পড়ুন-সংঘ, মোদি, বিজেপি কাউকেই ভয় পাই না : বিলাবল
জঙ্গলের মধ্যে এই নিঝুমপুরী আগলে আজও বসে আছেন বৃদ্ধ ভূদেব জানা। পরম যত্নে আগলে রেখেছেন কপালকুণ্ডলার স্মৃতি। কুণালদের কাছে পেয়ে বলছিলেন, দিন দিন পাশের রাস্তা উঁচু হওয়ায় মন্দিরের মূল কাঠামো বসে যাচ্ছে। আগে চণ্ডীমূর্তি ছিল, এখন নেই। গাইডের মতো ঘুরিয়ে দেখালেন খুঁটিনাটি। কোথায় নবকুমারকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, কোন দরজা দিয়ে নবকুমারকে নিয়ে কপালকুণ্ডলা পালিয়েছিল, সব। ১৮৬৪-৬৫ সাল নাগাদ কিছুটা সময় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে এখানে কাটিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। মন্দিরের সামনের একটি বাড়িতে কিছুদিন ছিলেন।
আরও পড়ুন-সংঘ, মোদি, বিজেপি কাউকেই ভয় পাই না : বিলাবল
এখানেই এক কাপালিকের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এক শ্বেতবসনা মহিলা ঔপন্যাসনিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এরপরই মন্দির, কাপালিক, মহিলা-আর লেখকের কল্পনাশক্তি মিলে গিয়ে জন্ম নিয়েছিল কপালকুণ্ডলা-র। বাকিটা ইতিহাস। দারিয়াপুর দেখে অভিভূত দু’জনেই। হেরিটেজ তকমা পাওয়া এই মন্দিরের সংস্কার চান কুণাল-ঋতব্রত দু’জনেই। এলাকার অবস্থা দেখে ওখান থেকেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে কথা বলেন কুণাল। মন্দিরের প্রবেশের মূল রাস্তা সারানোর অনুরোধ জানান। এই মন্দির প্রাঙ্গণে প্রতি বছর আয়োজিত হয় বঙ্কিমমেলা। এই ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা যাতে সবাই পায় এখন সেটাই চান কুণাল, ঋতব্রতরা। তাঁদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।