তাঁর উদ্দেশ্য সফল। ঠিক যে যে উদ্দেশ্যে এসেছিলেন, সবক’টিই। ছবির প্রচার, জনসংযোগ এবং প্রচার কৌশলের মাধ্যমে উসকে দেওয়া ভবিষ্যৎ ছবির জল্পনা। সবক’টি সারলেন রণবীর কাপুর (Ranbir Kapoor), দারুণ দক্ষতার সঙ্গে। শহর কলকাতা এরকম ছবির প্রচার, প্রচার উপলক্ষে বলিউড তারকাদের শহরে পদার্পণ নিয়মিত দ্যাখে। কিন্তু রণবীর বিশেষ হয়েছিলেন বিশেষ কারণেই। এক তো তারকার নিজস্ব ক্যারিশমা, তা ছাড়াও কলকাতার মহারাজ ও বাকি ক্রিকেট দুনিয়ার ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বায়োপিকের জন্য তিনিই দাদার প্রথম পছন্দ, এই স্কুপ প্রকাশ হয়ে পড়া। এ তথ্য জানা ইস্তকই রণবীর কলকাতার ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন যেন! যদিও পাক্কা প্রফেশনালদের মতো সব অস্বীকার করলেন, জানালেন, এরকম কোনও অফার নাকি তাঁকে কেউ দেয়ইনি! কিন্তু প্রচারপর্ব সেরেই ইডেন-দৌড়নো ও সেখানে দাদার সঙ্গে জমিয়ে আলাপ ও প্রীতি-ক্রিকেটে পারফরম্যান্স দেখে কে বিশ্বাস করবে সেই পেশাদারি বার্তা! রণবীর ক্রিকেটটা সত্যিই খেললেনও দারুণ। যা দেখে মুগ্ধ দাদাও। হাতে শট ও গায়ে জোর দুই-ই নাকি মুগ্ধতার কারণ।
তবে সব থেকে মন ছোঁয়া ছিল বোধ করি ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কার’ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনটিই। পোশাকি আলাপচারিতা বা নিছক প্রশ্নোত্তর পর্ব নয়, পুরোটা যেন ছিল আন্তরিক আড্ডা ও অত্যন্ত সুচারুভাবে বাঙালিয়ানায় মোড়া। শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে রণবীরকে (Ranbir Kapoor) বরণ থেকে শুরু করে সাংবাদিকবন্ধুদের গুড়ের মিষ্টি উপহার সবকিছুই মনকাড়া। তেমনই মনকাড়া রণবীর নিজে। কালো ডেনিম আর নীল টি-তে ঝকঝকে। সপ্রতিভ। ঘরোয়া। যিনি আত্মসমালোচনা থেকে সিনেমা ভাবনা, ওটিটি থেকে ট্রোলিং, আলিয়া থেকে রাহা, সৌরভ থেকে মেসি সবকিছু নিয়ে দেদার ‘কোট’ দিলেন! সব শেষে কাপুরোচিত দূরত্ব ঘুচিয়ে সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহক সকলের সঙ্গে সেলফি তুললেন, বিগলিত, উত্তেজিত ফ্যানদের উদ্দেশ্যে মনমোহন হাসি বিলিয়ে গেলেন অগণিত।
আরও পড়ুন: মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করতে স্কুলে গ্যাস-হামলা!
বেশ অনেকদিন বাদে রণবীরের রম-কম। ছবি নিয়ে, ছবির বিষয় নিয়ে রণবীর কতটা খুঁতখুঁতে তা তাঁর ছবির সংখ্যা দেখলেই বোঝা যাবে। হিট-ফ্লপের বাইরে সংখ্যাটা নামের সঙ্গে মোটে মানানসই নয়। পনেরো বছরের কেরিয়ারে হাতে গুনে উনিশটি ছবি। কিন্তু তাতে খুব কিছু এসে যায় না রণবীরের (Ranbir Kapoor)। নিজের দুনিয়ায় থাকতে ভালবাসেন। যে কারণে যে সোশ্যাল মিডিয়া ইদানীং স্টারদের প্রায় শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো সেখানে তাঁর কোনও উপস্থিতিই নেই! সিনেমা করেন কিন্তু তার জন্য ব্যক্তিজীবনকে খোলা খাতা বানানোয় বিশ্বাসী নন। ‘তু ঝুটি ম্যায় মক্কার’ ছবিটি নিয়ে যদিও কেউ কেউ স্বয়ং রণবীরকেই উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ছবিতে তাঁর চরিত্র বা ছবির গল্প সবের সঙ্গে ব্যক্তি রণবীরের বড্ড মিল। এ নাকি আদতে তাঁরই বায়োপিক! ক্যাসানোভা রণবীর একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়েছেন। ব্রেক আপ হয়েছে। ফের প্রেমে পড়েছেন। এবং বিয়েও করেছেন। এই ছবিতে রণবীর একজন ব্রেকআপ স্পেশ্যালিস্ট! যাঁরা অতীতে সম্পর্কে জড়িয়ে সমস্যায় পড়েছেন, নতুন সম্পর্ক গড়তে ভয়, জড়তা কিংবা দ্বিধায় ভুগছেন, তাঁদের পরামর্শ দিয়ে উজ্জীবিত করেন রণবীর! সে কারণেই অনেকের বক্তব্য যে, রণবীর নিজেকে যেভাবে চাঙ্গা করতেন সেটার ওপর ভিত্তি করেই এই ছবির গল্প! যা সরাসরি অস্বীকার করেছেন রণবীর। জানিয়েছেন, “এই ছবি মোটেই আমাকে নিয়ে তৈরি হয়নি। এখানে আমি ব্রেক আপ আর্টিস্ট। সবাইকে বোঝাতে চাই, একজনকে মন দিয়ে ভালবাসার পরেও সেই সম্পর্ক ওয়ার্ক না করলে ফের আরেকবার ভালবাসা যায়। একাধিকবার যায়। আর এটা কোনও অপরাধ নয়। জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ভালবাসার হাত ধরেই।’’ ছবিতে রণবীরের জুটি শ্রদ্ধা কাপুর। যদিও কলকাতা সফরে তিনি আসতে পারেননি। ছবির ট্রেলার ও একাধিক গান মুক্তি পেয়েছে। দু’জনের জুটি বেশ পছন্দ হয়েছে দর্শকের। আশা করা যাচ্ছে দোলের ছুটিতে এই ছবি ভালই ব্যবসা করবে।
পরিচালক লভ রঞ্জন যখন এই ছবির অফার নিয়ে এসেছিলেন তখন যদিও দ্বিধায় ছিলেন রণবীর। অন্য ছবির ব্যস্ততা যেমন কারণ, আর একটা ভাবনাও কাজ করছিল তাঁর মনে। সময়ের সঙ্গে প্রেম, ভালবাসা, সম্পর্কের ধরনগুলো এত দ্রুত হারে বদলেছে তার সঙ্গে তিনি পাল্লা দিতে পারবেন কি না! কিন্তু চিত্রনাট্য পড়ার পর তাঁর সব দ্বিধা দূর হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছিল, তাঁকে কেন্দ্র করে একগাদা বায়োপিকের নাম। কিশোরকুমার, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘সঞ্জু’ হিট হওয়ার পর থেকেই কি? রণবীরের ছোট্ট উত্তর, বায়োপিকে অভিনয় কিন্তু খুব সোজা কাজ নয়! তবে টাইপ কাস্ট হতে চান না কোনওদিনই। দুই বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কাজ করে ফেলেছেন। অয়ন মুখার্জি ও অনুরাগ বসু। আর কেউ আছেন নাকি উইশ লিস্টে? রণবীর সিগনেচার হাসিটা হেসে বললেন, সুজিত সরকার, সুজয় ঘোষ এবং সৃজিত মুখার্জি! হয়তো এসব কারণেই রণবীর বাঙালির আরও কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন!