বেঙ্গালুরু, ২৯ মার্চ : স্রেফ ৩.৩ ওভারে কেকেআর ৫০/০ তুলে ফেলার পর মনে হচ্ছিল শাহরুখ খানের দলটা এবার ছুটছে। পাওয়ার প্লে-র শেষে বোর্ডে ৮৫/০। গত ন’বছরের খরা কাটাতে কোথাও একটা ঝাঁকুনির দরকার ছিল। সেটা গৌতম গম্ভীরের উপস্থিতি। প্রাক্তন অধিনায়ক। বর্তমান মেন্টর। যিনি ডাগ আউটে বসেও মাঠেই থাকেন। একটা ঘটনা। কেকেআর (KKR vs RCB) ইনিংসের প্রথম ওভার। ফলো থ্রু-তে উইকেট ভাঙতে না পেরে হাত দিয়েই সেটা করে ফেলেছিলেন মহম্মদ সিরাজ। দেখে বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন গোতি। ফোকাস বিচ্যুতি বিলকুল না-পসন্দ। শুধু ম্যাচের শেষে হাসতে দেখা গেল এই গম্ভীরকে। স্বাভাবিক। ১৯ বল বাকি রেখে ৭ উইকেটে জয়। হাসবেনই।
দাঁড়ান, উল্টো দিকও আছে। খেলা শুরুর আগে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। যখন কাছাকাছি এসে পড়েছিলেন বিরাট ও গম্ভীর। এই দু’জনকে নিয়ে গত কয়েকদিনে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছিল গার্ডেন সিটিতে। আর একবার হবে নাকি? ধুর, পোড়খাওয়া দুই ক্রিকেটার বারবার লোকের মনোরঞ্জন করতে যাবেন কেন? শোনা যায়, টেনিসপ্রেমীরা জন ম্যাকেনরোর খেলা দেখতে যেতেন না, তাঁর আম্পায়ার কল নিয়ে ক্ষোভ- বিক্ষোভ দেখতে যেতেন। র্যাকেট ভাঙা দেখতে যেতেন। ম্যাকেনরো সেটা পরে বুঝেছিলেন। এদিন বিরাট আর গম্ভীর একগাল হেসে আলিঙ্গন করলেন। ফুলের শহরে যেন এতদিনের পারস্পরিক ক্লেদ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল।
বিরাট অবশ্য বিরাটেই থাকলেন তাঁর সেকেন্ড হোমে। সেকেন্ড হোম? হ্যা, তাই। স্ত্রী অনুষ্কার বেড়ে ওঠা, পড়াশুনো সব বেঙ্গালুরুতে। আর সতেরো বছর ধরে বিরাট রয়াল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর পোস্টার বয়। তিনি চিন্নাস্বামী নামা মানে টিকিটের হাহাকার পড়ে যায় শহরে। কোহলি এদিন কাউকে নিরাশ করেননি। ডুপ্লেসির (৮) সঙ্গে শুরুতে এলেন। অধিনায়ক ফিরে গেলেন। তারপর গ্রিন (৩৩), ম্যাক্সওয়েল (২৮), পাতিদার (৩), রাওয়াত (৩)। কিন্তু কোহলিয়ানা জারি থাকল। আগের ম্যাচে রান করেছিলেন। অরেঞ্জ ক্যাপ মাথায় উঠেছিল। এদিন ৫৯ বলে ৮৩ নট আউট। বিরাট এই ইনিংস না খেললে আরসিবি কিছুতেই ১৮২/৬-তে যেতে পারত না।
কারা যেন বিরাটকে টি-২০ বিশ্বকাপের বাইরে রাখতে চেয়েছিল! আইপিএলে এমন ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের পর অজিত আগারকররা তাঁদের যাবতীয় চিন্তায় রিফ্রেশ বাটন টিপবেন। অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভ স্মিথের মতো লোকজন যাঁরা সামান্য ক্রিকেট খেলেছেন, বিরাটকে ব্যাট করতে দেখে নিশ্চয়ই একচোট হাসলেন। ওঁরা ভারতীয় নির্বাচকদের ঐতিহাসিক ভাবনাকে আবর্জনা আখ্যা দিয়েছেন। বিরাট এদিন চারটি চার, চারটি ছক্কা মেরেছেন। অর্থাৎ দৌড়েছেন যথেষ্ট। পিতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে আসার পর আরও ফিট লাগছে তাঁকে। বিরাট নিজে বলেছেন দু’মাস খেলার বাইরে থাকার পর মাঠে ফিরে দারুণ লাগছে।
এই বেঙ্গালুরুতে আইপিএলের উদ্বোধনী বছর একটা ঘটনা ঘটেছিল। ব্রেন্ডন ম্যাকুলাম চিন্নাস্বামীর সব কোনায় বল উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাতেই চিন্নাস্বামী কোথায় যেন আত্মীয়তায় জড়িয়ে গিয়েছে কেকেআরের সঙ্গে। বলার দরকার আছে যে ম্যাকুলাম তখন কেকেআরে? গতবছর আইপিএলের দুই ম্যাচে কেকেআর আরসিবিকে হারিয়েছিল ২১ ও ৮১ রানে। এই মাঠে নাইটরা টানা পাঁচ ম্যাচ জিতেছিল। এই জয়ে সংখ্যাটা দাঁড়াল ছয়। এদিন ১৯ বল বাকি রেখে জিতে এবার আপাতত দুইয়ে দুই করে ফেলল কেকেআর। এই উইকেটে বল দেরিতে আসে। অনেক সময় ডাবল পেসড মনে হয়। কিন্তু সিরাজ প্রথম ওভারে ১৮ রান দেওয়ার পর আর ছন্দ খুঁজে পাননি। আরেকজন যশ দয়াল। গতবার রিঙ্কু তাঁর বলে পরপর পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। এদিন চার ওভারে তিনি ৪৬ রান দিয়েছেন। আলজারি জোসেফ দিলেন দুই ওভারে ৩৪।
কেকেআর যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে মনে হচ্ছিল মাঠে একটাই দল খেলছে। ফিল সল্ট (৩০) আরও একটা অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন। তবে তাঁকেও ছাপিয়ে গেলেন সুনীল নারিন। গম্ভীর যখন অধিনায়ক ছিলেন, নারিন ইনিংস শুরু করতেন। এবারও আসছেন। শুক্রবার ২২ বলে ৪৭ রান করে গেলেন। পাঁচটি ছক্কা। কিন্তু কেকেআর (KKR vs RCB) ইনিংসে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে গেলেন বাঁহাতি ভেঙ্কটেশ আইয়ার। ৩০ বলে ৫০। যশ, সিরাজ, গ্রিন, জোসেফদের এত সহজে মাঠের বাইরে ফেললেন যে মনে হচ্ছিল পকেটে রান নিয়ে নেমেছেন। ভেঙ্কটেশ খেলার পর সব কৃতিত্ব দিলেন নারিনকে। তিনি শুরুতে ওই ধাক্কা দেওয়ার পরই নাকি তাঁদের রান তাড়া করাটা সহজ হয়েছিল।
এই জয়ে আইপিএল টেবলে দুইয়ে উঠে এল কেকেআর। একে চেন্নাই সুপার কিংস। সবে দশ ম্যাচ হয়েছে এযাবৎ। কিন্তু সকাল দেখে বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। নাকি বোঝা গিয়েছিল তখনই? যেদিন লখনউকে বিদায় জানিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন গম্ভীর। বলা হয়নি, এদিন গম্ভীরের পুরনো এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে তিনি বলছেন, আমি হারতে চাই না। আরসিবির কাছে তো নয়-ই। বিরাট জয়ের পর তাঁর থেকে বেশি খুশি কে হবে!
আরও পড়ুন-ওয়াশিং মেশিন ভাজপা এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে তোপ ব্রাত্য বসুর