কুকথার অভিযোগে কাঁথি আদালতে শুভেন্দু অধিকারীর তরফে মামলা দায়ের করেন সৌমেন্দু অধিকারী। কিন্তু কোন কোন শব্দে তাঁরা কোর্টের নিষেধাজ্ঞা চাইছেন, নিজেরা দাবি তুলেও তার তালিকাই কোর্টে দিতে পারলেন না সৌমেন্দু অধিকারীর আইনজীবী। এনিয়ে জমে উঠল কাঁথি আদালতের শুনানি। শেষে জামিন হল কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh)। তারপর আবার শুভেন্দুদের তুলোধনা করলেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারীর তরফে সৌমেন্দু অধিকারীর করা মানহানির মামলার শুনানিতে নাটকীয় সওয়াল জবাব হল মঙ্গলবার কাঁথি আদালতে। কুণাল (Kunal Ghosh) সোমবার থেকেই কাঁথিতে পুরভোটের প্রচারে ছিলেন। এদিন কোর্টে উপস্থিত হন। শুনানির পর জামিনও মঞ্জুর হয়। কিন্তু কৌতূহলী ভিড়ে উপচে যাওয়া এজলাসে তার আগে বিস্তর নাটক হয়। অধিকারীদের আইনজীবী দাবি করেন কুণাল ঘোষকে কোর্ট নির্দেশ দিক মানহানিকর শব্দ যাতে তিনি না বলেন। কুণালের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী বিচারককে বলেন,” কোনটা খারাপ শব্দ, তার তালিকা দিন ওঁরা। কোর্ট নির্দেশ দিলে আমার মক্কেল বলবেন না।” এই প্রসঙ্গে অয়ন বিচারকের কাছে জানতে চান, মীরজাফর, বিভীষণ, বেইমান, রাজনৈতিক বেজন্মা- এগুলো বলা যাবে কী না। শুনেই রে রে করে ওঠেন অধিকারীদের আইনজীবী। বিচারক হেসে ফেলেন। কোর্ট জুড়ে চাঞ্চল্য। অধিকারীদের আইনজীবী বলেন,” উনি (কুণাল) সোমবারও আবার এসব বলেছেন। কোর্টচত্বরে এসেও বলবেন বলেছেন।” অয়ন বলেন,” যা নিয়ে মামলা করেছেন, তার বাইরে কথা বলবেন না।” বিচারক হেসে বিতর্ক থামান। তবে অধিকারীদের তরফে কোনও খারাপ শব্দের তালিকা জমা পড়েনি। কোর্টও কোনো শব্দে নিষেধাজ্ঞা দেননি। জামিন মঞ্জুর হয় কুণালের। তাঁর তরফে ছিলেন আইনজীবী সুব্রত দাসও।
বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কোর্টের বিষয়টি জানান কুণাল (Kunal Ghosh)। তিনি কৌশলে সব কটি শব্দ তুলে বলেন,” কোর্ট যদি বারণ করেন তাহলে বেইমান, গদ্দার, রাজনৈতিক বেজন্মা আমি বলব না। কেন এই কথাগুলি উনি বলেন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন কুণাল। এরপর শুভেন্দু অধিকারী তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন,” কুণাল ঘোষ নরকের কীট। ওর বাবা ওকে ত্যাজ্যপুত্র করেছিল।”
সাংবাদিকরা এর প্রতিক্রিয়া নিতে আবার ধরেন কুণালকে। কুণাল হেসে বলেন,” মানসিক অবসাদ থেকে এসব বলছেন। উনি দিদিকে বলোতে ফোন করে নালিশ করুন।” কুণাল ঘোষ আরও বলেন,” আমার বাবা 1995-এ মারা গেছেন। তখনও আমাকে তাজ্যপুত্র করেননি। মৃত্যুর পর করেছিলেন কি না শুভেন্দু হয়ত জানে।” এর পরেই পাল্টা দিয়ে কুণাল বলেন,” 2009 সালে মমতাদি যখন শিশিরদাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করছিলেন, তখন বাবাকে বাদ দিয়ে নিজে মন্ত্রীর জেদ ধরেছিল শুভেন্দু। নিজে মন্ত্রী হয়নি বলে বাবার শপথ বয়কট করে কলকাতা ফিরে যায়। শেষে শিশিরদা তড়িঘড়ি দিব্যেন্দুকে দিল্লি আনিয়ে শপথে রেখেছিলেন। যে ক্ষমতার জন্য বাবাকে হিংসে করে, তার আবার বড়বড় কথা!”
কোর্টের মধ্যে এদিন অয়নবাবু আরও কয়েকটি আইনি বিষয় তোলেন।
কোর্টের পর 13 নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরির সমর্থনে প্রচারে যান কুণাল। যে মন্দিরে শুভেন্দুর কেন্দ্রীয় বাহিনী জুতো পরে ঢোকা নিয়ে গোলমাল ও সুপ্রকাশ নিগৃহীত হন, সেই মন্দিরে পুজো দেন কুণাল। সংলগ্ন ছোটদের স্কুলে একটু সময় কাটান। দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও বসেন। তিনি বলেন,” অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড এতদিন শুধু নিজেদের উন্নয়ন করেছে। এবার তৃণমূলের নেতৃত্বে আদর্শ শহর হবে কাঁথি।” সৌমেন্দু অধিকারীকে ইঙ্গিত করে কুণাল বলেন,” ঘোড়ার ডিমের চেয়ারম্যান ছিল ও। হারবে বলে দাঁড়ায়নি। বিদায়ী চেয়ারম্যান যেখানে মানুষের মুখোমুখি হতে পারে না, তার দলের ভোট চাওয়ার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকে সমর্থন করবেন। আদি বিজেপি কর্মীদের কেন তৎকাল বিজেপির বিরোধিতা করা উচিত, তারও ব্যাখ্যা দেন কুণাল।