কুণাল ঘোষ
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বজবজ থেকে কলকাতা এসেছিলেন সুব্রতদা। শিক্ষকপুত্র এবং রক্ষণশীল বাড়ির ছেলের রাজনীতি করা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তবু শেষপর্যন্ত সুব্রতদা রাজনীতির ময়দানে আসেন। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নজরে পড়েন। প্রিয়-সুব্রত জুটির অন্যতম হয়ে ওঠেন।
সেই সময়টা একদিকে ক্লাস, অন্যদিকে হাতখরচ তোলার চাকরি, আর রাজনীতি— সুব্রতদার সঙ্গে বসলেই যে কেউ শুনেছেন অসাধারণ স্মৃতিচারণ।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বড় সিদ্ধান্ত
যেন রাজ্য রাজনীতির সময়ের দলিল।
বামরাজনীতির ভাঙাগড়া, নকশাল আন্দোলনের রণধ্বনির মধ্যেই কংগ্রেস রাজনীতিতে সুব্রতদার উত্থান। প্রিয়দার সঙ্গে রুটি-তরকারি ভাগ করে খাওয়ার সংসার।
মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে বিধায়ক এবং তার পরে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মতো ওজনদার মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার সদস্য। তাও আবার স্বরাষ্ট্র বা তথ্যর মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের।
আরও পড়ুন-২৯ নভেম্বর শুরু সংসদের শীতকালীন অধিবেশন
এই সময়ের একটি ঘটনা আমার মতে সুব্রতদার জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা। ১৯৯৭ সালে আমার সম্পাদনায় ‘রাজনীতি অরাজনীতি’ বইটির জন্য লেখাতে প্রথম বলেছিলেন সুব্রতদা।
সেসময় তিনি রাজনীতি করেন পুরোদমে। একটু হাতখরচ দরকার। আলিপুরে ব্যবসায়ী জৈনদের বাড়িতে টেলিফোন অপারেটরের চাকরি নিয়েছিলেন।
হিন্দি আসত না। অনেক কষ্টে টুকরো টুকরো শব্দে চালাতেন। এই সময়েই পালাবদল। ভাগ্যের চাকার দিকবদল। সুব্রতদা ভোটে দাঁড়ালেন। জিতলেন। তার কিছুটা পরে মন্ত্রী। বকেয়া বেতন নিয়ে জৈন এসেছিলেন মহাকরণে দেখা করতে। সুব্রতদা গ্রহণ করেছিলেন। পরে তাঁকে সংস্থার ডিরেক্টর করে দিয়েছিলেন জৈন।
আরও পড়ুন-‘সমস্ত ভোগ করে অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড তৈরি করেছে শুভেন্দু’ নন্দীগ্রামে তোপ কুণাল ঘোষের
এটা শুধু সুব্রতদার গল্প নয়। এটা জীবনের গল্প। সময়ের গল্প।
রাজনীতিতে সুব্রতদা সফল। শাসকপক্ষে থেকেও, বিরোধী পক্ষে থেকেও। আবার প্রশাসক সুব্রতদা এক অন্য উচ্চতার।
যে যুবক ইন্দিরা গান্ধীকে কাছ থেকে দেখেছেন, যিনি ২৬ বছর বয়সে ‘মানুদার’ মন্ত্রী হয়ে জরুরি অবস্থা সামলেছেন, তিনি পরে যখন মেয়র বা মন্ত্রী হয়েছেন, অভিজ্ঞতার ডালি যে উজাড় করে কাজ করবেন, সেটা স্বাভাবিক।
আর এই সুযোগটা করে দিয়েছিলেন মমতাদি।
আরও পড়ুন-ছট পুজো উপলক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভেচ্ছাবার্তা
একেই কি বলে গুরুদক্ষিণা?
মাঝেমধ্যে যতই মেরুবদল করুন সুব্রতদা, মমতাদি যখন সুযোগ পেয়েছেন, সুব্রতদাকে চুটিয়ে পারফর্ম করার মঞ্চ দিয়েছেন। আর দক্ষ সুব্রতদা সেটা করেওছেন।
কলকাতার মেয়র হিসেবে সর্বকালের অন্যতম সেরা নাম সুব্রতদা।
জোর দিয়েছেন আয় বাড়াতে। না হলে কাজ করা যাবে না। বড় প্রভাবশালী সংস্থাকে চোখ রাঙিয়েছেন। বকেয়া না দিলে জল কেটে দেব। সামনে থেকে জঞ্জাল সরবে না। বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু আমজনতা সমর্থন করেছেন।
উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যের পীঠস্থান স্টার থিয়েটার আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়েছিল। বামফ্রন্ট সরকার এবং পুরসভা তাকিয়েও দেখেনি। মেয়র সুব্রতদা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেটিকে নতুন চেহারা দিয়েছেন। গোটা উত্তর কলকাতা কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে।
পরিকাঠামো উন্নয়নে বহু কাজ করেছেন সুব্রতদা।
আরও পড়ুন-সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিবসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রদ্ধার্ঘ্য
আবার রাজনৈতিক ভুলভুলাইয়ায় মেয়র থেকে সরে গিয়েছেন।
এরপর ২০১১ তে মমতাদি তাঁকে মন্ত্রিত্বে আনলেন। ২৬ বছর বয়সে যিনি মন্ত্রী, তিনি আবার মন্ত্রী ৬৫ বছর বয়সে। শেষ দশ বছর চুটিয়ে কাজ করেছেন সুব্রতদা। গ্রামোন্নয়নে জোর দেন মমতাদি, রূপায়ণে সুব্রতদা। পর পর স্কিম কেন্দ্রের বিচারে দেশে একনম্বর। আমলা এবং সরকারি কাঠামোকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার মুনশিয়ানা যে ক’জনের আছে বা ছিল, তার মধ্যে সুব্রতদা অন্যতম। সফল মেয়র। সফল মন্ত্রী।
এবং আরেকটি বিষয়। তিনি অনেক পাল্টেছেন। মেয়র থাকাকালীন দু’একটি বিষয়ে জেদ করে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ফেলতেন। কিন্তু মন্ত্রী সুব্রতদা পুরোপুরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুযোগাযোগ রেখে চলেছেন।
আরও পড়ুন-আন্দোলনের আ-জানে না এই বিজেপি
সাংবাদিক বৈঠক করতেন পুরোপুরি দলের লাইন মেনে। সমান প্রাণবন্তভাবে। আরও বেশি করে দলের কাজ, কর্মসূচি চাইতেন। উপভোগ করতেন।
বিধানসভায় বিরোধী বেঞ্চে বসা সুব্রতদাও এক অসামান্য সত্তা।
তাঁর যুক্তি ছিল, ‘‘বিধানসভাটা বিরোধীদের। রাইটার্স সরকারের। এখানে আমাদের এই বিধানসভাটাকে ব্যবহার করতে হবে। সরকারপক্ষ দেবে না সুযোগ। আমাদের করে নিতে হবে। এটাই কৌশল। নিজেদের ভাল বক্তৃতা করতে হবে। সরকারপক্ষের সময় বিরক্ত করতে হবে। তার জন্য বিধানসভায় আসতে হবে। নিয়মের খুঁটিনাটি জানতে হবে। ফাঁকিবাজি করে বিধানসভা হয় না।”
সুব্রতদা ফাঁকি দেননি।
আরও পড়ুন-লখিমপুরের গুলি মন্ত্রীপুত্রের বন্দুক থেকেই, প্রমাণ ফরেনসিক রিপোর্টে
তিনি আসা মানেই বিধানসভা জমজমাট।
বিপক্ষের কেউ ভাল বলছেন। হঠাৎ সুব্রতদা বলে উঠলেন, ‘এটা কী পরে এসেছেন? জঘন্য দেখতে লাগছে। চুল আঁচড়াননি?’
বক্তা চুলে হাত দিচ্ছেন। জামা দেখছেন। রেগে বলছেন, ‘বাজে কথা বলবেন না।’
আর স্পিকার হালিমসাহেব চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, ‘আরে আপনি বলে যান। সুব্রত আপনার তাল কেটে দিচ্ছে।’
এরকম আকছার হয়েছে।
স্পিকার ঘরে গেলে অধিবেশনের দায়িত্বে ডেপুটি স্পিকার অনিল মুখোপাধ্যায়।
তাঁকে পেলে যেন সুব্রতদা সেই ক্লাস সিক্সের চরম দুষ্টু ছেলে হয়ে উঠতেন। কতরকমভাবে জ্বালাতেন তার কোনও শেষ নেই। নিপাট ভদ্রলোক অনিলবাবুও তালগোল পাকিয়ে ফেলতেন।
একবার কেলেঙ্কারি হয়েছিল।
আরও পড়ুন-দেওচা পাঁচামী খনি প্রকল্পের পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী
একটি বিলের উপর ভোটাভুটির সময় সুব্রতদা এতরকম প্রশ্ন আর মন্তব্য করছিলেন যে অনিলবাবু গুলিয়ে ফেলেন।
মৌখিক ভোটাভুটিতে সরকারপক্ষের ‘হ্যাঁ’ গ্রহণের বদলে বিরোধীদের ‘না’ গ্রহণ করে ফেলেন।
সুব্রতদা হইহই করে বলে উঠলেন, ‘এই তো, তাহলে বিল পাশে সরকার হেরে গেল। মানে সরকার পড়ে গেল। এখন আমি যাই। কাল আমাদের শপথের ব্যবস্থা করতে হবে।’
জটিল করে দিয়ে সুব্রতদা উধাও। হালিমসাহেব চেম্বার থেকে ছুটে এলেন।
ডেপুটি স্পিকারের সঙ্গে কথা বলে ভুল সংশোধনে ব্যস্ত হলেন তিনি।
পরে সুব্রতদা বলেছিলেন, ‘সরকার তো আমিই বাঁচিয়ে দিলাম। এটা রেকর্ডে থেকে গেলে সরকার থাকত না!’
আমরা প্রেস গ্যালারিতে বসে হেসেই খুন। এমন অজস্র ঘটনা আছে। লিখলে শেষ হবে না। আর শোনা ঘটনা তো আরও বেশি। তার মধ্যে ঢুকছি না।
সুব্রতদা তৃণমূলের মেয়র।
এদিকে কংগ্রেসের বিধায়ক।
বোঝো কাণ্ড!
আপন মনে আসেন যান ঘুরে বেড়ান।
কংগ্রেস নালিশ করে ক্লান্ত।
উপসংহার একটাই, ‘উনি তো হালিমসাহেবের পোষ্যপুত্তুর। বলে আর লাভ কী!’
সুব্রতদা এসব শোনেন আর মুচকি হেসে বলেন, ‘ওরা যে কেন ফালতু পরিশ্রম করছে কে জানে!’
আবার বিরোধী রাজনীতিতে গোষ্ঠীর ভারসাম্যের খেলায় সুব্রতদা অবশ্যই একটি নাম।
একবার বিকেলে ফোন।
তখন তৃণমূল জন্ম নেয়নি। সুব্রতদা মমতাদির শিবিরে।
সোমেন- সুব্রত তরজা চরমে।
সোমেনদা তাল বুঝে সুব্রতদার আইএনটিইউসি নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন। বেশ জমেছে ঘটনা।
হঠাৎ বিকেলে অফিসে সুব্রতদার ফোন।
– ‘সোমেনের সঙ্গে একবার কথা বলে নাও তো।’
– ‘কেন দাদা?’ আমি অবাক।
– ‘ওর সঙ্গে রাতে একটু বসব কনফিডেন্সিয়ালি। কথা হয়েছে। ও বলল তোমার বাড়িতে বসবে। কথা বলে নাও। রাত দশটায় বসব।’
সোমেন-সুব্রত বৈঠক?
আমি খবরে উত্তেজিত। আবার বিস্ময়, আমার বাড়িতে। দুই নেতারই আস্থার প্রমাণ।
সেদিন রাতে বৈঠক হয়েছিল। একটি শব্দও আমি তার লিখব না।
তবে হ্যাঁ, আমার সাংবাদিকসত্তা খুশি হয়েছে। শেষমেশ দু’জনেই ছবিটি ছাপার অনুমতি দেন।
পরের দিন প্রতিদিন কাগজে দু’জনের বৈঠকের ছবিটি এক্সক্লুসিভ ছিল। তারপর কিছুদিন রাজনৈতিক গোষ্ঠীবিন্যাসের টানাপোড়েন থাকলেও, তরজা থাকলেও সোমেনদা আইএনটিইউসি নিয়ে খোঁচার পথে যাননি। বলেছিলেন, ‘দল করার থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করা শক্ত। ও কিন্তু মন দিয়ে করে। ঝগড়াটা দলেই থাক।’
সোমেনদার সঙ্গে কী যেন একটা ফর্মুলা করে নিয়ে পরের দিনই সুব্রতদা আইএলওতে আইএনটিইউসির প্রতিনিধি হয়ে জেনিভা।
মমতাদির টিম তো বিরাট। প্রিয়দা বা সোমেনদার টিমও কোনও কোনও সময় বড়ই ছিল। সেই তুলনায় সুব্রতদার টিম কিন্তু কখনওই তেমন বাড়েনি। সুব্রতপন্থী বলতে মূলত সুশোভন বসু, প্রদীপ ঘোষ ( রেল), অশোক দেব, প্রমথেশ সেনের মতো কয়েকজনকে বুঝিয়েছে। মমতাদির শুরুর দিকটাও ধরা ভাল। নেত্রীর লড়াকু ইমেজ তখনই নজরে পড়েছিল সুব্রতদার। তবে তারপর ক্রমশ মমতাদি এক বিশাল উচ্চতায় উঠে নিজেই একটা ব্র্যান্ড হয়ে যান।
কিন্তু সুব্রতদা নিজে কার গোষ্ঠী করেছেন কংগ্রেসে? উত্তর : ইন্দিরাজি। পরে মমতাদি। এর বাইরে প্রিয়দার সঙ্গে ছাত্র-যুব জুটি থাকলেও পরে তিনি টানা প্রিয়দা করেছেন, এটা বলা ভুল। সিদ্ধার্থবাবু, প্রণববাবু, গনিখান চৌধুরী— সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল সুব্রতদার। কিন্তু তিনি পুরোপুরি তাঁদের কারুর টিম করেছেন বলা যাবে না। বরং কিছুদিন সোমেনদার সঙ্গে ছিলেন। বাকি পুরো মমতাদির নেতৃত্বে। শেষ দিন পর্যন্ত।
দু’একটি ক্ষেত্রে আমার মতো সাধারণ সাংবাদিকের এমন এমন অনুরোধ রেখেছেন সুব্রতদা, আজও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা পাই না।
তখন দুই চ্যানেলের রেষারেষি। সিটিভিএন আর চ্যানেল ভিশন। আমি ভিশনে রোজ লাইভ অনুষ্ঠান করি।
‘মেয়রের দরবার’ অনুষ্ঠান করব। ঘোষণা দিয়েছি। সিটিভিএনও দুম করে ঘোষণা দিল। সেখানে এক সিনিয়র সাংবাদিক। তাদের অনুষ্ঠান আমাদের আগে।
সুব্রতদার কাছে গেলাম। আব্দার— ওদেরটায় যাবেন না। আমারটায় আসতে হবে।
হেসে ফেলেছিলেন।
এবং শেষ মুহূর্তে ওদের ডুবিয়ে ত্রিসীমানায় যাননি।
দু’দিন পর লাইভ করেছিলেন আমাদের স্টুডিও থেকে।
আরেকবার ‘এক নজর মেয়রের দরবারে’ অনুষ্ঠানের মুখে খবর দিলেন মমতাদি অন্য কাজ দিয়েছে। লাইভ অসম্ভব। নিজেই বললেন, ‘মমতাকে একটু বলো। আমি কাজটা পরদিন করে দেব।’ আমি আর দীনেশ বাজাজ গেলাম। মমতাদিকে বলে সুব্রতদাকে টিভিতে আনলাম।
কখনও ফেরাননি সুব্রতদা।
গুচ্ছ গুচ্ছ এক্সক্লুসিভ দিয়েছেন। এখনকার মতো ব্যাঙে হাঁচার এক্সক্লুসিভ নয়। জাত এক্সক্লুসিভ।
ওঁর কলকাতা উত্তর পশ্চিম লোকসভায় দাঁড়ানোটাও আমার স্টোরি ছিল।
আমাদের ক্লাবের পুজো, অন্য কর্মসূচি, আমার বই প্রকাশ— সুব্রতদা কখনও আমন্ত্রণ ফেরাননি। একটি বাড়তি দুর্বলতা তাই থাকা স্বাভাবিক।
একবার অসুস্থ হয়েছিলাম। নার্সিংহোমে। সুব্রতদা দেখতে গিয়েছিলেন। তার দিনদশেক পর এক সহকর্মী সাংবাদিকের ছেলের অন্নপ্রাশনে মন দিয়ে পটলের দোরমা খাচ্ছি, হঠাৎ পেছনে সুব্রতদা। পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন, ‘কদিন আগে অক্সিজেন নিচ্ছিলে, এখন এসব ঠিক হচ্ছে?’
পুজোঅন্তপ্রাণ। একডালিয়া এভারগ্রিন।
সুব্রতদা থিম পুজো নয়, সাবেকি ঝলমলে পুজোয় বিশ্বাসী। মানুষ যেন দেখতে আসেন। মাতৃপ্রতিমাকে প্রণাম করতে চান।
সুব্রতদা মোহনবাগানপ্রেমী। দীর্ঘদিনের সবুজ-মেরুন। ক্লাবের সভাপতি হওয়ার যোগ্যতা রাখতেন। সেটা আর হয়ে ওঠেনি।
সুব্রতদা সংস্কৃতিপ্রেমী। লেখালেখিতে বেশি সময় দেননি বটে। কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতির অনুরাগী তিনি। আর মুনমুন সেনের সঙ্গে তাঁর টিভি সিরিয়ালে অভিনয়? শুধু সুব্রতদার নামেই হিট। অবশ্য ব্যাপারটা নানা তালেগোলে খুব বেশিদিন এগোয়নি।
সব মিলিয়ে সুব্রতদা ভাল লাগার। ভালবাসার।
শেষ দেখা হল ক’দিন আগে।
টিভি নাইনের সিইও বরুণ দাস একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন। বিড়লা সভাঘরে। অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ‘গহর জান’। আইনজীবী অয়নকে নিয়ে গিয়েছিলাম দেখতে। সুব্রতদা আর বউদি এসেছিলেন। শুরুর আগে লাউঞ্জে গল্প হল। কাজের কথাও হল। ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে কয়েকজন চাকরির অনিশ্চয়তায় রয়েছে, অথচ কাজ করে আসছে। আইনমাফিক কী করা যায়। সমস্যা জানিয়েও সুব্রতদা বললেন, ‘দেখছি কী করা যায়।’
আমরা প্রথম রোতে পরপর বসেছিলাম।
আমাকে বেরোতেই হত। পরপর কর্মসূচি ছিল।
শুরুর মিনিট কুড়ি পর সুব্রতদাকে বলে এলাম, ‘দাদা আমি আসছি। পরে কথা হবে।’ প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকারে মঞ্চ থেকে আসা আলোয় উজ্জ্বল সুব্রতদা বলেছিলেন, ‘কথা হবে।’ (সমাপ্ত)