প্রতিবেদন : ফের নারদ কাণ্ডে তৎপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর জামিন পেয়েছেন রাজ্যের ৪ হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী। এবার ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এবার চার্জশিট পেশ করল ইডি। প্রাক্তন IPS অফিসার এস এম এইচ মির্জার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। আর এই ঘটনায় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে একরাশ প্রশ্ন তুলে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ”নারদ মামলায় ইডি যখন চার্জশিট দিচ্ছে, সেখানে শুভেন্দুর নাম নেই কেন? শুভেন্দু অধিকারীকেও প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআই-র এফআইআর রয়েছে। এসব কি ইডি দেখতে পায় না?”
আরও পড়ুন : ফের বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম
তাঁর আরও অভিযোগ, ”বিজেপিতে নাম লিখলে সিবিআই, ইডি তাকিয়ে দেখবে না। তদন্তের নামে এটা দুমুখো নীতি। দ্বিচারিতা। আসলে যারা বিজেপি পায়ে পড়ছে, তাদের নাম নেই, এটা কোন দেশের তদন্ত? এতেই প্রমাণ হয়, কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয় দেখিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি সিবিআই লোককে দলে টানছে। যাদের মেরুদণ্ড নেই, জুতো চাটে, জুতো পালিশ করে তারা ইডি-র ভয়ে বিজেপিতে নাম লেখাচ্ছেন। তাই শুভেন্দুর মেরুদণ্ডহীনরা বাদ যাচ্ছেন।আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা হলে শুভেন্দু বাদ কেন? স্পিকারের অনুমতি চেয়েছে। স্পিকার বিজেপির। তাই আর অনুমতি আসছে না।”
এখানেই শেষ নয়। কুণালের দাবি, “নারদার মতো সারদা মামলাতেও শুভেন্দুকে গ্রেফতার করে চার্জশিট দিতে হবে। সুদীপ্ত সেন কলকাতা ছাড়ার দিনও তার থেকে টাকা নিয়েছে শুভেন্দু। আর সেই শুভেন্দুকে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।”
আরও পড়ুন : তৃতীয় ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত রাজ্য :অভয় মুখ্যমন্ত্রীর
এরপর কুণাল জানান, “বিজেপি বাংলায় পরাজয় হজম করতে পারছে না। ত্রিপুরাতেও টলমল করছে। সেখানে তৃণমূল বিকল্প। উদ্বিগ্ন বিজেপি। তাই কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে কাজে লাগাচ্ছে। শুভেন্দু আর দিলীপ ঘোষ পার্টি অফিসে এজেন্সি কী করবে সেটা আগাম বলে দিচ্ছে। এতেই প্রমান হয়, বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
তৃণমূল নেতৃত্ব বুক চিতিয়ে লড়বে। শুভেন্দুর মতো মেরুদণ্ড বিকিয়ে দেবে না। যারা বিজেপির জন বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়ছে, তাদের নাম জড়ানো হচ্ছে। আর শুভেন্দু ঘুরছে। বিজেপির কোলে বসে দোল খাচ্ছে, ওদের জুতো পালিশ করছে। জুতো চাটছে। আমরা আইনের পথে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করবো।”
সবশেষে কুণাল ঘোষ বলেন, “সিবিআই, ইডির অফিসারেরা দক্ষ, যোগ্য। কিন্তু তাদের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। এই এজেন্সি গুলির জন্য আমাদের গর্ব হওয়া উচিত। কিন্তু বিভিন্ন আদালত তাদের কাজকর্মকে খাঁচার তোতা পাখি বলে ভৎসনা করছে। অবিলম্বে শুভেন্দুকে গ্রেফতার করে নিজেদের নিরপেক্ষতার পরিচয় দিক সিবিআই, ইডি।”
আরও পড়ুন : এবার লক্ষ্য শিল্প স্থাপন: পানাগড়ে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরপর-ই মে মাসে আচমকাই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও মদন মিত্রকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সেই তালিকায় ছিলেন কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। এরপর দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে শেষপর্যন্ত শর্তসাপেক্ষের চার অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। কিন্তু কোনওভাবেই শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এখনও তৎপরতা দেখায়নি কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি। অথচ, খবরের কাগজে মুড়িয়ে তাঁকেও গোপন ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলসের কাছ থেকে। শুভেন্দুকে নিয়ে এজেন্সির ভূমিকায় কিছুটা অবাক হয়েছেন নারদ স্টিং অপারেশনের মাস্টার মাইন্ড খোদ ম্যাথু স্যামুয়েলসও।