প্রতিবেদন : মোট ভোটারের ৫০ শতাংশেরও বেশি মহিলা। কিন্তু কেন্দ্রশাসিত এই দ্বীপপুঞ্জে আজও তীব্র বঞ্চনা আর উপেক্ষার শিকার বেশিরভাগ মহিলাই। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই দ্বীপের উন্নয়নের জন্য তেমন কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি গত ১০ বছরে মোদি-জমানায়। লোকসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে, এই যন্ত্রণা নিয়ে সরব হচ্ছেন মহিলারা। শুধু মহিলারা নন, মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছেন পুরুষ ভোটাররাও। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোটে এই বঞ্চনারই যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। ভোটারের সংখ্যার বিচারে দেশের ক্ষুদ্রতম লোকসভা কেন্দ্র লাক্ষাদ্বীপ। ভোটার সংখ্যা সবমিলিয়ে ৫৭,৫৭৪। তারমধ্যে মহিলা ভোটার ২৮,৪৪২। লোকসভা কেন্দ্রটির মধ্যে মানুষের বাসযোগ্য দ্বীপের সংখ্যা ১০।
আরও পড়ুন-সিএএ হলে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা জলাঞ্জলি যাবে, সাফ কথা অমর্ত্যর
মহিলাদের বঞ্চনার ছবিটা তাঁদের কথাতেই স্পষ্ট। প্রথম অভিযোগ, দ্বীপে এবং হাসপাতালে কোনও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাওয়া যায় না। গর্ভবতী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষারও কোনও ব্যবস্থা নেই। এমনকী আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে হলেও যেতে হয় কাভারাত্তি দ্বীপে। কিন্তু যোগাযোগের ব্যবস্থা, মানে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতের ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে জরুরি প্রয়োজনেও সেখানে পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। একটিমাত্র দ্বীপে স্নাতকপর্যায় পর্যন্ত পড়ানো হয়। এর বেশি উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে হয় কেরলে। ফেরি জাহাজের টিকিটও রীতিমতো দুর্লভ। তবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের। সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা, ইউপিএ সরকারের আমলে দ্বীপগুলোর মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ১০টা ফেরিজাহাজ চালানো হত। অর্থাৎ প্রতিটি দ্বীপের জন্য গড়ে বরাদ্দ ছিল একটি করে জাহাজ। এখন গেরুয়া জমানায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগকারী জলযানের সংখ্যা মাত্র ১। অনেকসময়ই এক-একটি দ্বীপে ফেরি সার্ভিস সপ্তাহে মাত্র একবার। সমস্যার এখানেই শেষ নয়, স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ এবং ব্যবহারের পরে নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মহিলাদের। এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিলেন আগাত্তি দ্বীপের মহিলারা।
আরও পড়ুন-শুরু হল ইরানের ‘বদলা’, পাল্টা জবাব ইজরায়েলের
দ্বীপপুঞ্জে এবারে মূল ২ প্রতিদ্বন্দ্বী স্থানীয় সাংসদ শারদ পাওয়ার গোষ্ঠীর এনসিপি নেতা মহম্মদ ফইজাল পিপি এবং কংগ্রেসের হামদুল্লা সঈদ। তাৎপর্যপূর্ণভাবে দুটি দলই ইন্ডিয়া জোটের শরিক। তাই এই লড়াইকে ফ্রেন্ডলি কনটেস্ট বলে অভিহিত করছেন দু’দলের নেতা-কর্মীরা। এনডিএ প্রার্থীও আছেন। তবে নামে মাত্র। অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর এনসিপি প্রার্থী টিপি ইউসুফকে নিয়ে কেউই তেমন মাথা ঘামাতে রাজি নন। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ফৈজাল বা হামদুল্লা যে-ই জিতুন না কেন, লাক্ষাদ্বীপের প্রতিনিধিত্ব করবেন ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থীই। এটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। কেন্দ্রে গেরুয়া সরকারের বদলে একটা ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এলে লাক্ষাদ্বীপের বঞ্চনার অবসান হবে বলে বিশ্বাস প্রত্যন্ত দ্বীপবাসীর।