প্রতিবেদন : পাটনায় শুক্রবার বিরোধী জোটের বৈঠকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে থামল দুই দলের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। এদিন বৈঠকের শুরুতেই আপ-এর প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সরাসরি রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে বলেন, আমলা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তুঘলকি অর্ডিন্যান্স বিষয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব চুপ কেন! বাকিরা এই অর্ডিনান্সের তীব্র প্রতিবাদ করলেও কংগ্রেস কেন একটি কথাও বলছে না।
আরও পড়ুন-রক্ত যাক, দেশের জন্যে লড়ব: বৈঠকের পর বার্তা তৃণমূল নেত্রীর
এবিষয়ে কংগ্রেসকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। আর যদি তা না হয় তবে এই কংগ্রেসের এই দ্বিচারিতার কারণে সিমলার পরবর্তী জোট বৈঠকে থাকবে না আপ। পাল্টা কংগ্রেসের তরফেও এর উত্তর দেন মল্লিকার্জুন খাড়্গে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে আসরে নামেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দু’পক্ষকেই থামতে বলেন। যে উদ্দেশ্যে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে, সকলে উপস্থিত হয়েছি আমরা, সেটা নিয়ে এগোনো উচিত। তবে এটাও ঠিক যে আমরা সকলেই এই ‘কালা কানুন’(অর্ডিনান্স) এর তীব্র বিরোধিতা করেছি। এটা সকলেরই করা উচিত। তবে আপাতত এই বৈঠকে মন দেওয়া যাক। এরপরই কংগ্রেস ও আপ নেতৃত্ব চুপ করে যান। শুরু হয় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজেপি বিরোধিতায় এককাট্টা লড়াইয়ের জন্য ঐতিহাসিক পাটনা বৈঠক। যার অন্যতম মধ্যমণি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-পাটনায় বৈঠকের পর কী জানালেন দলনেত্রী
এদিনের বৈঠকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বর্ষীয়ান নেতা নীতীশ কুমারকে সব বিরোধী দলের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে মুখবন্ধের কাজটিও করলেন নীতীশই। এরপর একে একে বক্তব্য রাখলেন, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সব থেকে সিনিয়র নেতা এনসিপির শরদ পাওয়ার, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়্গে, উদ্ধব ঠাকরে-সহ আরও কয়েকজন। তবে সকলেই একটি কথায় জোর দিয়েছেন, বিজেপির স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে লড়াই লড়তে হবে। নেওয়া হবে অভিন্ন কর্মসূচিও।
আরও পড়ুন-নবান্নে জোরদার হচ্ছে নিরাপত্তা, বসানো হচ্ছে হেড কাউন্টিং ক্যামেরা
আগামী মাসে আরও একটি জোটের বৈঠক হবে। সেই বৈঠক হবে শিমলায়। ওই বৈঠকের আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে। সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই নীতীশ কুমার বলেন, আমাদের নিজেদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে আমরা একসঙ্গে চলব। সামনের মাসের শিমলা বৈঠকে চূড়ান্ত হবে কে কোথায় লড়বে। তাঁর সংযোজন, আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করব। এখন দেশের স্বার্থে কাজ হচ্ছে না। বিজেপি ইতিহাস বদলে দিচ্ছে। মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, সব দল এক হয়ে অভিন্ন কর্মসূচি তৈরি করছি। সম্ভবত ১২ জুলাই আমরা শিমলায় আবার একসঙ্গে বসব।
আরও পড়ুন-বজ্রপাত বাড়াচ্ছে চিন্তা, কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে জারি সতর্কতা
রাহুল গান্ধীর কথায়, দেশের সব কিছুর ওপর বিজেপি-আরএসএস হস্তক্ষেপ করছে। আমরা আলাদা দল। আমাদের অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করব।
তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেন কেন বিরোধী জোটের বৈঠক পাটনায় করার কথা বলেছিলেন। বলেন, এখান থেকে অনেক ঐতিহাসিক জন-আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। লালুজি অনেকদিন বাদে রাজনৈতিক বৈঠকে এসেছেন। বাকিরাও এসেছেন। প্রবীণ নেতা শরদ পাওয়ার বলেন, আমরা এবার থেকে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে রোড ম্যাপ তৈরি করে আন্দোলন-কর্মসূচি গ্রহণ করব। উদ্ধব ঠাকরের কথায়, আমরা আলাদা দলের প্রতিনিধি। আমাদের বিচারধারা আলাদা। কিন্তু আমাদের দেশ এক। লড়াইও হবে ঐক্যবদ্ধ।