পূর্ণেন্দু রায়, নয়াদিল্লি : দেশে বাড়ছে বিভাজন, হিংসা, বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক উসকানি। অথচ নীরব দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কোনও তাপউত্তাপ চোখে পড়ছে না। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে (PM Narendra Modi) মৌনতা কাটিয়ে সরব হওয়ার আবেদন দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া, শিক্ষকদের। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের ছাত্র এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যদের এক প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এবং বর্ণভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়ার অনুরোধ জানাল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেছেন, দেশে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বেড়েই চলেছে। কিন্তু সব দেখেও প্রধানমন্ত্রী নিশ্চুপ রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতা ঘৃণার কণ্ঠকেই উৎসাহিত করছে।
মোদিকে (PM Narendra Modi) দেওয়া চিঠিতে দেশের ১৮৩ বিদ্বজ্জন স্বাক্ষর করেছেন। যার মধ্যে আইআইএম-আহমেদাবাদ এবং আইআইএম-বেঙ্গালুরুর ১৩ জন ফ্যাকাল্টি সদস্য ও ছাত্র আছেন। আইআইএম বেঙ্গালুরুর পাঁচজন ফ্যাকাল্টি সদস্য প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া এই চিঠির খসড়া তৈরি করেছেন। তাঁরা হলেন প্রতীক রাজ (স্ট্র্যাটেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক), দীপক মালঘান (সহযোগী অধ্যাপক, পাবলিক পলিসি), ডালহিয়া মণি (সহযোগী অধ্যাপক, এন্টারপ্রেনিয়রশিপ), রাজলক্ষ্মী ভি মূর্তি (সহযোগী অধ্যাপক, ডিসিশন সায়েন্স) এবং হেমা স্বামীনাথন (সহযোগী অধ্যাপক, পাবলিক পলিসি)। মালঘান একজন বিশিষ্ট পরিবেশগত অর্থনীতিবিদ।
সহকারী অধ্যাপক প্রতীক রাজ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই নীরবতা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সে কারণেই একদল ছাত্র এবং শিক্ষক এই চিঠি লেখার উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে তুচ্ছ বিষয় হিসাবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই মন্তব্যকারীরা উৎসাহিত হয়েছে। তাদের আচরণ বেপরোয়া। এভাবেই সমাজে বিদ্বেষ-বিভাজন বাড়ছে।
আরও পড়ুন-দুয়ারে গুন্ডার সরকার আর নেই দরকার
ছাত্র ও শিক্ষকরা তাঁদের চিঠিতে আরও বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ঘৃণাভরা কণ্ঠকেই উৎসাহিত করছে। দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই তাঁকে অনুরোধ, যে শক্তি আমাদের বিভক্ত করতে চায় সেই শক্তির বিরুদ্ধে আপনি দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়ান।
সম্প্রতি হরিদ্বার ‘ধর্ম সংসদ’ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীকে এই চিঠিটি লেখা হয়েছে। তথাকথিত ওই ধর্ম সংসদে কিছু হিন্দু নেতা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে গণহত্যার আহ্বান জানিয়েছে। এই বিষয়টি উল্লেখ করে
চিঠিতে বলা হয়েছে, ধর্ম, বর্ণ, পরিচয়ের ভিত্তিতে কোনও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য মন্তব্য এবং হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়। স্বাক্ষরকারীরা চিঠিতে আরও লিখেছেন, দেশের সংবিধান প্রত্যেক ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে মর্যাদা সহকারে নিজের নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। তবুও দেশে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে। একাধিকবার গির্জা-সহ অন্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলিতে ভাঙচুর করা হয়েছে। মুসলিম ভাইবোনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। যথাযথ আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই এই ধরনের অসামাজিক মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে এর বিরোধিতা করুন।