উৎসবে সাহিত্যের আন্তরিক আয়োজন

উৎসবের মরশুমে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা। পাঁচটি সংখ্যার উপর আলোকপাত করলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

কলেজস্ট্রীট
সম্পাদক : সুধাংশুশেখর দে
কলকাতার বইপাড়া থেকে চার দশক ধরে প্রকাশিত হচ্ছে ‘কলেজস্ট্রীট’ পত্রিকা। এবারের শারদ সংখ্যায় আছে নানা বিষয়ের লেখা। বিশেষ নিবন্ধের শুরুতেই সুব্রত ছাটুই। লেখার শিরোনাম ‘বারইপুরে রায়চৌধুরী বাড়ির সাবেকি দুর্গাপুজো’। অলোককুমার দত্তর লেখার বিষয় ‘দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার’। দুটি লেখাই অজানাকে বিশেষভাবে জানতে সাহায্য করে। ‘বিজ্ঞান কুসংস্কার ও বাস্তুতন্ত্র’ শিরোনামে সোমা চক্রবর্তীর লেখাটিও মূল্যবান। সুগত মুখার্জি লিখেছেন ঠাকুরবাড়ির এক উজ্জ্বল পুরুষকে নিয়ে। শিরোনাম ‘বিস্মৃতির অতলে দ্বারকানাথ ঠাকুর’। আছে চারটি জমজমাট উপন্যাস। মধ্যবিত্তের দিনলিপি ফুটে উঠেছে অমর দে-র ‘চাঁদনি’ উপন্যাসে। সমগ্র লেখা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত এক মায়া। ভাল লাগে নিত্যরঞ্জন দেবনাথের ‘এক দুর্ভাগা মেয়ের কাহিনি’। একটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গল্প জমাট বেঁধেছে। গীতিকণ্ঠ মজুমদারের ‘সৈনিকের জীবন’ ও নিখিল মণ্ডলের ‘রুদ্রপ্রতাপ রায়ের ডায়েরি’ উপন্যাস দুটিতে আছে ঘটনার ঘনঘটা। শেষপর্যন্ত টেনে রাখতে পারে পাঠককে।

আরও পড়ুন-সংগীত বিদ্যা

গল্প বিভাগ আকর্ষণীয়। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় বাসব দাশগুপ্ত, নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, রবীন বসু, সৌম্যশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস রায়, সপ্তদ্বীপা অধিকারী, সংযুক্ত সেনগুপ্ত, সাগ্নিক দেবের নাম।
নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন ঘটেছে কবিতা বিভাগে। মন ছুঁয়ে যায় সনৎকুমার মিত্র, রাহুল দেওঘরিয়া, কৌশিক বড়াল, গৌতম হাজরা, কানাইলাল জানা, শশাংক দাস বৈরাগ্য প্রমুখের লেখা।
এ-ছাড়াও আছে প্রবন্ধ, ভ্রমণ, স্বাস্থ্য, রূপচর্চা প্রভৃতি বিভাগ। প্রচ্ছদের পাশাপাশি পাতায় পাতায় ছবি এঁকেছেন শংকর বসাক। সবমিলিয়ে উৎসবের মরশুমে আন্তরিক আয়োজন। ৩৫৬ পৃষ্ঠার সংখ্যাটির দাম ১০০ টাকা।

আরও পড়ুন-কুৎসা না করে আগে ছবি দেখুন

কথা স্বপ্ন
সম্পাদক : অমিতাভ রায়
২৩ বছরের পত্রিকা ‘কথা স্বপ্ন’। প্রকাশিত হয় মহেশতলা থেকে। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি লিখেছেন নতুনরাও। আছে একগুচ্ছ কবিতা। ভাল লাগল শ্যামলকান্তি দাশ, অনন্ত দাশ, সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃপেন চক্রবর্তী, পার্থসারথি গায়েন, গৌরশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌমিত বসু, সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রতাপ সিংহ, শঙ্কর ঘোষ, নমিতা চৌধুরি, অমিতাভ রায় প্রমুখের লেখা।
গল্প আছে কয়েকটা। অজিতেশ নাগের লেখার শিরোনাম ‘সুজন মাল্লা ও একটি ভোরের গল্প’। জলজ-মানুষদের জীবন প্রতিফলিত হয়েছে চমৎকার এই লেখায়। দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কথ্য ভাষা।
মিহির সরকারের ‘ফুলটার নাম যেন কী’ এবং চন্দন চক্রবর্তীর ‘পেঁয়াজ নিয়ে পেঁয়াজি’ গল্প দুটি ভাল লাগে। প্রচ্ছদ মনোমুগ্ধকর। দাম ৫০ টাকা।

আরও পড়ুন-আকবর থেকে রাসমণি, ইতিহাস ছুঁয়ে খয়রাকালী

সাহিত্য আলপনা
সম্পাদক : রাজীব ঘাঁটী
দুর্গাপুর থেকে প্রকাশিত হয় ‘সাহিত্য আলপনা’। বেরিয়েছে শারদীয়া সংখ্যা। শুরুতেই কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ। দুর্গাপুরের কবিতা চর্চা নিয়ে লিখেছেন দিশারী মুখোপাধ্যায়। লেখাটি পড়ে শিল্পনগরীর চেনা-অচেনা কবিদের সম্পর্কে অনেকটা জানা যায়। পাশাপাশি মণিশঙ্কর, দুর্গাদাস মিদ্যা, রজতকান্তি সিংহ চৌধুরি, অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ কবিতার বিবিধ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
আছে অন্যান্য প্রবন্ধ। ড. সুরঞ্জন মিদ্দের লেখার শিরোনাম ‘রবীন্দ্রসাহিত্যে সাঁওতাল সংগ্রাম’। চমৎকার বিষয়টিকে অসামান্য দক্ষতায় উপস্থাপন করা হয়েছে। আরও একটি অনবদ্য প্রবন্ধ ‘লোকজীবনের মেয়েলি ছড়া ও গান’। লিখেছেন অরূপ শান্তিকারী। ড. আদিত্য মুখোপাধ্যায়ের লেখার শিরোনাম ‘আলো-আঁধারের ছায়াময়তা’। লেখাটি কবিতার মতো, ঘটেছে অন্যরকম ভাবনার প্রকাশ।

আরও পড়ুন-লজ্জা! বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে মোদির ভারত ১০৭ নম্বরে

একগুচ্ছ কবিতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় আশিস গিরি, সৈয়দ হাসমত জালাল, সৌমিত বসু, অমিত কাশ্যপ, সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য, পার্থপ্রতিম আচার্য, সুনীল মাজি, গৌতম রায়, অলক্তিকা চক্রবর্তীর নাম। এছাড়াও আছে গল্প, আত্মজীবনী, জীবনকথা। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদ প্রশংসনীয়। ১৭৬ পৃষ্ঠার পত্রিকা। দাম ১৫০ টাকা।
দীপশিখা
সম্পাদক : প্রদীপকুমার সামন্ত
২৬ বছরের পত্রিকা ‘দীপশিখা’। সম্পূর্ণরূপে অবাণিজ্যিক। প্রকাশিত হয় দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার উমেদপুর গ্রাম থেকে। এবারের শারদ সংখ্যাটি গদ্যে-পদ্যে ঠাসা। প্রবন্ধ লিখেছেন প্রদীপকুমার পাল। শিরোনাম ‘মল্ল রাজাদের অভিনব দুর্গাপূজা’। লেখাটি পড়ে পুজোর ইতিহাস এবং আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানা যায়।

আরও পড়ুন-বাংলা সাহিত্যে খাবার

ভাল লাগলো মহুয়া সমাদ্দারের ‘ভালবাসার সূর্যাস্ত’, সৌমী গুপ্তর ‘প্রতিশোধ’, বারিদবরণ ভট্টাচার্যর ‘সাঁজলি’, গোবিন্দ মোদকের ‘তৃতীয় পথ’ গল্পগুলো। চমৎকার অণুগল্প লিখেছেন সঞ্জয় কর্মকার, মনোরঞ্জন গরাই, অগ্নিশ্বর সরকার, মানস চক্রবর্তী প্রমুখ।
ছন্দ-ছড়ার ঢেউ তুলেছেন আনসার উল হক, শঙ্খশুভ্র পাত্র, হাননান আহসান, নির্মল করণ, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী, স্বপনকুমার রায়, রবিনকুমার দাস, জগদীশ মণ্ডল, মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় দাস প্রমুখ। পাশাপাশি আছে একগুচ্ছ কবিতা, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি প্রভৃতি বিষয়। পাতায় পাতায় ছবি এঁকেছেন ব্রজেশ ভাণ্ডারী। ৬৪ পৃষ্ঠার সংখ্যাটিতে দামের উল্লেখ নেই।
পুবের কলম
সম্পাদক : আহমদ হাসান ইমরান
প্রকাশিত হয়েছে ‘পুবের কলম’ সীরাত -উন-নবী সংখ্যা। গদ্য-পদ্য মিলিয়ে আকর্ষণীয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন ইমাম আবু হামিদ গাজ্জালী রহ.। শিরোনাম ‘মহানবী সা.-এর শেষ ভাষণ’। আছে ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদির একটি অন্যরকম রচনা। শিরোনাম ‘আত্মশুদ্ধি অর্জনের সঠিক পথ’। লেখাটি মননশীল। ভাল লাগল সুব্রত গুপ্তর ‘নবী সা.-এর অনুসারীদের সঙ্গে ২২ বছর’ লেখাটি পড়ে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। আছে আরও কয়েকটি গদ্য। লিখেছেন সৈয়দ আল আহসান, সিদ্দিক জামাল, কুতুবউদ্দিন বিশ্বাস, ড. কুমারেশ চক্রবর্তী, গোলাম রাশিদ প্রমুখ। আল মাহমুদ, নাসের হোসেন, জয়নাল আবেদিনের কবিতা সংখ্যাটিকে সমৃদ্ধ করেছে। দাম ৩০ টাকা।

Latest article