চাই বেশি প্রোটিন
ফিটনেস এক্সপার্টরা বলেন যে, তিনবেলা খাবারের মধ্যে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকতেই হবে কারণ প্রোটিন যত বেশি মাত্রায় হবে মাংসপেশি তত মজবুত হবে এবং ওজন তত কমবে। প্রোটিন মানে গুড প্রোটিন। ভাল জিনিস থেকে পাওয়া প্রোটিন থেকে শরীরে অনেক রকম সুযোগ রয়েছে। চিকেন, ডিম, বাদাম, বিনস, বিভিন্ন শাক-সবজি, ডাল, সয়া এবং ডেয়ারি প্রোডাক্ট থেকে সবচেয়ে ভাল প্রোটিন পাওয়া যায়। এই নিয়মটা খাবারের ক্ষেত্রে যাঁরা সারা বছর ধরে মেন্টেন করবেন তাঁদের মোটামুটি ওজনটা নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রী কথা রাখলেন, চেক পেলেন ক্ষতিগ্রস্তরা
কমাই ক্যালরি
দিনভর যতটা ক্যালরি আমরা গ্রহণ করি সেটা কমানোর দিকে নজর দিতে হবে। এর মানে কিন্তু এটা নয় যে মিল স্কিপ করলেন বা খালি পেটে থাকলেন। এই ভুলটা একবারেই করবেন না। ফাইবার এবং প্রোটিনযুক্ত খাবারটাই বেশি খান। যা বেশ লম্বা সময় পর্যন্ত আপনার খিদেটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ফল-সবজি, গোটা আনাজ, বাদাম, বিনস, ডাল এবং ফাইবার-যুক্ত সবজি বেশি করে খেতে হবে।
খাই ঘরের খাবার
ঘরে তৈরি খাবার সবচেয়ে পুষ্টিকর। যদিও সপ্তাহান্তে নিজের স্ট্রেসটুকু রিলিফ করতে বেশিরভাগই বাইরের খাবার খেতেই পছন্দ করেন। তাই এখন পুজো নয় সারাবছরই হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড়। কিন্তু পুজোর ঠিক আগে এই সময়টা আর বাইরে খাবেন না। ঘরের খাবার খান। প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করুন। ওজন কম করতে হলে আপাতত ক’দিন সবচেয়ে জরুরি বাইরের খাবার না খাওয়া।
এবার থাকুক ফাইবার
ফাইবার বেশি খান এবং কার্ব কম। সারাদিনের মিল-এ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন। ভাত, রুটি, পাউরুটি, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদির পরিমাণ একেবারে মেপে নিন। অর্থাৎ খিদে না পেলে খাব না বিষয়টা যেন এমন হয়। সেইটুকুই খান।
মিষ্টি নৈব নৈব চ
যে কোনও মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার, বেভারেজ এড়িয়ে চলুন। চিনি বা আডেড শুগারে থাকে ফ্রুকটোজ যেটা চর্বি গলতে দেয় না। যেমন ক্যান্ডি, কেক, ফ্রোজেন ইয়োগার্ট, সোডা, ফ্লেভারড কফি বা চা জাতীয় পানীয় এড়িয়ে যান।
পর্যাপ্ত জল
প্রচুর পরিমাণে জল খান। জল খেলে ওজন কমে। বিশেষ করে রোজ খালি পেটে এক গ্লাস গরম জল খান। যা মেটাবলিজম সিস্টেমকে উন্নত করবে এবং ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করবে। এ-ছাড়া শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। খাবার ঠিকমতো পরিপাক করতে সাহায্য করে জল।
আরও পড়ুন-শ্রম দফতরের হস্তক্ষেপে বাগানে কাটল বোনাস জট
ফল স্যালাডের কেরামতি
শুধু ফল ও স্যালাড দিয়ে এই সাতদিনে ঝপ করে বেশ খানিকটা ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন। সকালে এক গ্লাস গরম জল সঙ্গে দুটো খেজুর এবং দুটো থেকে তিনটে আমন্ড বাদাম খান। সাড়ে দশটায় একটা পেঁপের অর্ধেকটা টুকরো করে একটু গোলমরিচ আর বিটনুন ছড়িয়ে খেয়ে নিন। একটু বেলার দিকে এক কাপ গ্রিন-টি নিতে পারেন।
দুপুরে
দুপুরটা খুব ভারী করবেন না। জরুরি হল পুষ্টি। বারোটা থেকে একটার মধ্যে এক বাটি তরমুজ খেতে পারেন। এরপরেই মিল নিন। একটা পেট-ভরা,পুষ্টিকর হাই প্রোটিন স্যালাড তৈরি করে নন। একটা পনিরের স্যালাড তৈরি করে ফেলুন। শসা, পেঁয়াজ, টম্যাটোর উপর পনির গ্রেট করে দিতে পারেন। আবার পনির ছোট ছোট টুকরো করে কেটে সামান্য মাখন বা অলিভ অয়েলে রোস্ট করে নিতে পারেন প্যানে। তারপর স্যালাডে সেই রোস্টেড পনির মিশিয়ে খেতে পারেন। ব্যস পেট এবং মন দুই-ই সঠিক পুষ্টি পেল। ওজনে তারতম্য হবেই।
চাইলে একটা চিকেন স্যালড তৈরি করে নিতে পারেন দুপুরে। সেদ্ধ হাড়-ছাড়া মুরগি নিন, ফ্যাট ছাড়া দই, শসা, ছোলাসেদ্ধ, লেটুস, অল্প আঙুর, সামান্য নুন এবং ১ চা-চামচ অলিভ অয়েল। এতেই শরীরে যেমন পর্যাপ্ত পুষ্টির সরবরাহ হবে তেমনই ওজন কমবে ঝরঝরিয়ে।
আরও পড়ুন-কাল জাগোবাংলা উৎসব সংখ্যার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী
বিকেলে
বিকেলে একটা মোসাম্বি বা কমলা লেবু খান। রাত আটটায় একবাটি খরমুজ আর বেদানার সালাড খান। অনেকেরই ফল সহ্য হয় না। যদি সন্ধের পরে না খেতে চান বা অ্যাসিডিটির প্রবণতা থাকে একটা স্যালাডের অপশন রাখুন যেটায় উচ্চমানের প্রোটিন রয়েছে।
এক্ষেত্রে দুটো ডিম সেদ্ধ করে সাদা অংশ, টম্যাটো, সবুজ আপেল, অলিভ অয়েল, সামান্য লবণ এবং গোলমরিচ গুঁড়ো। ডিম, আপেল এবং টম্যাটো কিউব করে কেটে নিন। এরপর সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিন সাধারণ স্যালাডের মতো। ওর মধ্যে ধনেপাতা বা লেটুস পাতা-কুচি ছড়িয়ে নিন।
আর একটা স্যালাডও দারুণ উপকারী। সেদ্ধ কাবলি ছোলা নিন, ওর মধ্যে কাটা পেঁয়াজ, টম্যাটো, ক্যাপসিকাম, শসা এবং গাজর দিন। এর পরে নুন, গোলমরিচ, লঙ্কাগুঁড়ো, চাটমশলা ও লেবুর রস দিয়ে দিন। সব উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। পুদিনাপাতা ও তেঁতুলের চাটনি দিন।
ভেজিটেবিল স্যালাডের উপকারিতা অনেক বেশি কারণ এতে থাকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস এবং পলিফেনল যা আমাদের অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে ফলে হজমের সমস্যা কমে যায়। গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে। তাছাড়া স্যালাডে থাকা সবজি এবং ফল যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর বেশি খাওয়ার হাত থেকে আমাদের বাঁচায় এই সব স্যালাড, ফলে ওজন আপনিই কমে যায়।
রাতের খাবার
ডিনার টাইমের জন্য ম্যাকারনি লাগবে। নিন এককাপ ম্যাকারনি, সঙ্গে ব্রকলি ছোট করে কাটা, সেদ্ধ মুরগির মাংস ছোট করে কাটা, টম্যাটো কিউব করে কাটা, এক টেবিল-চামচ অলিভ অয়েল, নুন এবং সামান্য ভিনিগার। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ১০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন। এরপর এতে সামান্য লেবুর রস দিয়ে খান।
সারাদিনের এই ডায়েট-রুটিনে স্যালাড খাবার সময় অদলবদল করতেই পারেন। সেই সঙ্গে আরও বেশ কয়েক রকম স্যালাড অল্টারনেট হিসেবে নিতে পারেন।