মৌসুমি বসাক: আওগে জব তুম… না, আর আসবেন না তিনি। এখন সুরের আসর বসবে ইন্দ্রলোকে। উস্তাদ রশিদ খানের সুরের মূর্ছনায় মাতবে সুরলোক। আর ইহলোক আগলে থাকবে কিংবদন্তি শিল্পীর শেষ স্মৃতিটুকু। বুধবার রবীন্দ্রসদনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ বিদায় জানানো হল উস্তাদ রশিদ খানকে।
আরও পড়ুন-দুই মামলা, সজোরে দুই ধাক্কা দুই বিচারপতিকে
নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, যার সুরের মূর্ছনায় গোটা বিশ্ব মুগ্ধ, যার কণ্ঠে স্বয়ং দেবী সরস্বতীর বাস, যার গায়নশৈলীর জাদুতে আবিষ্ট সমগ্র সঙ্গীত জগৎ— সেই মহান শিল্পী তথা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল, উস্তাদ রশিদ খানের অকালপ্রয়াণে আমি শোকস্তব্ধ।
আজ রবীন্দ্রসদনে তাঁর প্রতি জানালাম শেষ শ্রদ্ধা। আমি একজন তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্ত। তিনি ছিলেন ঈশ্বরপ্রেরিত। ধ্রুপদী সঙ্গীতের জগতে তাঁর উদাত্ত কণ্ঠের গায়কি আজীবন থেকে যাবে আমাদের সঙ্গে। আজ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে গান স্যালুটের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায় আপামর জনতা। তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি আমি।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এদিন নাকতলার বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ দেহ নিয়ে আসা হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানেই শ্রদ্ধা জানাতে আসেন স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, ফিরহাদ হাকিম, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, মুনমুন সেন, সুজিত বসু, অরূপ বিশ্বাস, ইন্দ্রনীল সেন, হৈমন্তী শুক্লা, ঊষা উত্থুপ, জিৎ গাঙ্গুলি, নগরপাল বিনীত গোয়েল। এদিন গোটা বিষয়টি তদারকি করেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং অরূপ বিশ্বাস। এরপর দুপুর ১.১০ মিনিট নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর নাকতলার বাড়িতে। জানা গিয়েছে, সেখান থেকে বুধবার রাত ন’টা নাগাদ দেহ নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরপ্রদেশের আদি বাড়িতে। সেখানেই সমাহিত করা হয় শিল্পীকে৷
আরও পড়ুন-বিজেপিকে দুরমুশ করতে নেত্রীর দাওয়াই, উজ্জীবিত জেলা নেতৃত্ব
রশিদ খানের পরিবারের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। নানা ধরনের গান নিয়ে আলোচনা হত। তাই শিল্পীর শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে খবর পেয়ে জয়নগরের সভা থেকে মঙ্গলবারই ছুটে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। ভাবতে পারছি না ও নেই। রশিদ আমার ভাইয়ের মতো ছিল। আমায় অত্যন্ত শ্রদ্ধা করত। আমায় বলত, তুমি আমার মা আছো।
ক্যানসারের মতো মারণব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে মাত্র ৫৫ বছরেই হার মানতে হয় ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী উস্তাদ রশিদ খানকে। মঙ্গলবার বেলা ৩.৪৫ নাগাদ পিয়ারলেস হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। ২২ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন-গঙ্গার জলে এবার প্রতিদিন ধুয়েমুছে যাবে মহানগরীর ধুলোর পাহাড়
জন্মসূত্রে উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁর বাসিন্দা ছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালের এপ্রিলে ১৪ বছর বয়সে প্রথম কলকাতায় আসেন তিনি। তাঁর বাবা হামিজ রশিদ খানও ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী। কথিত আছে, ভীম সেন যোশী বলতেন, রশিদ খানের গান শুনলে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। ২০০৬ সালে পদ্মশ্রী পান, ২০২২-এ পদ্মভূষণ পান। পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণও।
প্রস্টেটে ক্যানসার নিয়ে প্রথম থেকেই ভুগছিলেন তিনি। মাঝে একটু ভাল হলেও বারবার মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। এর ফলে ক্রমেই অবস্থার অবনতি হলে মাসখানেক আগে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেই থেকে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাজ্য সরকার তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বও নিয়েছিল। এদিন রবীন্দ্র সদন চত্বরে যেন জনবৃষ্টি হচ্ছিল। এক আকাশ অনুরাগীর ঢল নেমেছিল সদন-প্রাঙ্গণে। গুরুকে শেষবারের মতো প্রণাম জানাতে এসেছিলেন শিষ্যরাও। সকলের চোখেই জল। মুখে একটাই কথা, ওঁর মতো কেউ হবে না, উনি এক ও অদ্বিতীয়।