নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনায় মঙ্গলবার সংসদে কেন্দ্রকে তুলোধোনা করলেন লোকসভার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার মোদি সরকারের খারাপ পারফরম্যান্সের একের পর এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রশ্ন করেন, তাহলে আসল ‘পাপ্পু’ কে?
আরও পড়ুন-বাবাকে ৩২ টুকরো করে মারল ছেলে
এদিন লোকসভায় মহুয়া তুলে ধরেন দেশের অর্থব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদদের বিরুদ্ধে এজেন্সির ব্যবহার-সহ দেশের প্রতিটি জ্বলন্ত ইস্যু। অর্থব্যবস্থার বেহাল দশা নিয়ে সংসদে বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি এলেই সরকার বলতে শুরু করে, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন অর্থনীতির দেশ। সবাই কাজ পেয়েছে, পাকা বাড়ি, পানীয় জল, গ্যাস, বিদ্যুৎ… দেশের জনগণ সবকিছু পেয়েছে। কিন্তু ৮-১০ মাস পরেই প্রকৃত ছবিটা সামনে চলে আসে। উত্পাদন, শিল্প এবং অর্থনীতির পরিসংখ্যান তুলে ধরে মহুয়া আক্রমণ করেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। বলেন, দেশে একটি সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে, কারণ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের তলোয়ার যাদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে তাদের উপর ঝুলছে। অন্য দলের জনপ্রতিনিধিদের বিজেপি কোটি টাকায় কিনছে অথচ ৯৫ শতাংশ বিরোধী সদস্যকে ইডি তদন্তের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ইডিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার মাত্র ০.৫ শতাংশ। মহুয়া মৈত্রর কটাক্ষ, অব পাপ্পু কৌন হ্যায়?
আরও পড়ুন-পাওয়ারকে হুমকি ফোন
সংসদে কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানকেই হাতিয়ার করেন মহুয়া মৈত্র। বলেন, আর্থিক বছরের ৮ মাস অতিক্রান্ত। অথচ ডিসেম্বরে এসে কেন্দ্রীয় সরকার জানাচ্ছে তাদের এখনও বাজেট হিসাবের অতিরিক্ত ৩.২৬ লক্ষ কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থমন্ত্রী আমাদের সম্পর্কে বলেছেন আমরা নাকি দেশের শত্রু! এতদিন বিজেপি অন্য রাজনৈতিক দলের কাউকে অক্ষম এবং ব্যর্থ বোঝাতে পাপ্পু শব্দটি ব্যবহার করত। কিন্তু এখন কেন্দ্রের দেওয়া পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে আসল পাপ্পু কে? ২৬ মাসে সবচেয়ে কম শিল্পোৎপাদন, উৎপাদন ক্ষেত্রে হ্রাস ৫.৬ শতাংশ। মুদ্রার ভাণ্ডার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে ৭২ বিলিয়ন ডলার কমে গিয়েছে। ২০২২ সালের প্রথম ১০ মাসে ১ লক্ষ ৮৩ হাজার ৭৪১ জন ভারতীয় নাগরিকত্ব ছেড়েছেন। ধনী ব্যক্তিরা মোটা টাকা খরচ করে পর্তুগাল, গ্রিসের মতো দেশের নাগরিকত্ব নিতেও তৈরি। এটাই কি স্বাস্থ্যকর অর্থনৈতিক পরিবেশের লক্ষণ? তাহলে এখন পাপ্পু কে?
আরও পড়ুন-কাতার বিশ্বকাপের বিস্ময় স্টেডিয়াম ৯৭৪
কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে সাংসদ মহুয়া মৈত্র আরও বলেন, গত ১৭ বছরে আর্থিক তছরুপ আইনে ৫ হাজার ৪২২টি তদন্ত শুরু করেছে ইডি। যদিও সাজা দেওয়া হয়েছে মাত্র ২৩ জনকে। ফলে সাজাপ্রাপ্তের হার মাত্র ০.৫ শতাংশ। ২০১১ সাল থেকে ১ হাজার ৬০০টি তদন্ত, ১ হাজার ৮০০টি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে ইডি। অথচ সাজা হয়েছে ১০ জনের। ইডির জন্য জমি এবং কার্যালয় কিনতে বাজেটের অতিরিক্ত ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা চেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর ইডির অভিযান, সাজা, তদন্তের টাকা জোগাচ্ছেন করদাতারা। সাংসদদের কটাক্ষ, এটাই কি না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গার নমুনা? জে পি নাড্ডার উদ্দেশে মহুয়ার কটাক্ষ, শাসকদলের জাতীয় সভাপতি নিজের রাজ্যেই দলকে জেতাতে পারেননি। তাহলে আসল পাপ্পু কে?