ভোটে জিততে মিথ্যাচার প্রধানমন্ত্রীর, মামলা করে শিক্ষকদের চাকরি খেয়েছে বিজেপি

Must read

প্রতিবেদন : কোর্টে মামলা করে আমাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি খেয়েছে বিজেপি। আমরা ছেড়ে কথা বলছি না। আমরা শিক্ষক-শিক্ষাকার পাশে আছি। সোমবার বীরভূমের সাঁইথিয়ায় শতাব্দী রায়ের সমর্থনে প্রচারসভা থেকে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerje)। তিনি বলেন, ওরা বছরে ২ কোটি ছেলে-মেয়ের চাকরি দেবে বলেছিল। চাকরি তো দেয়নি, বেকারের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। উল্টে আমাদের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকার চাকরি ওরা খেয়ে নিয়েছে কোর্টে কেস করে।

সবাইকে বাদ দিয়ে দিলে : মুখ্যমন্ত্রী এদিন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে জানান, যদি কেউ একটা ভুল করে। তুমি তাকে সংশোধন করবার সুযোগ দাও, তুমি তার জন্য পলিসি করো। যারা কোনও ভুল করেনি, অন্যায় করেনি, পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছে, তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে দিলে। এরপরই তাঁর হুঙ্কার, মধ্যপ্রদেশের ব্যাপমের খবর কী? তোমার রাজ্যে কী হয়? চাকরির কেলেঙ্কারিতে যারা ইনভেস্টিগেশন করতে গিয়েছিল, সবাইকে মার্ডার করা হয়েছিল। কী মোদিবাবু একটু মুখটা খুলুন!

ইলেকশনে জিততে ব্লুপ্রিন্ট : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সন্দেশখালিতে নিয়ে কীভাবে পরিকল্পনা করেছিল? মহিলাদের অসম্মান করা হয়েছিল। ওরা জানে না মহিলাদের কাছে টাকাটা বড় নয়, সম্মানটাই আগে। মহিলাদের আত্মসম্মান অনেক বেশি? ইলেকশনে জিততে এসব ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়। এরপরই তিনি তোপ দাগেন, বেশি বাড় বেড়োনা ঝড়ে পড়ে যাবে। এত চক্রান্ত কোরো না, সব ফাঁস হয়ে যাবে।

এক লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দেউচা-পাঁচামিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি হচ্ছে। ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ১৪২২ জন জমিদাতাকে জুনিয়র কনস্টেবল ও গ্রুপ সি পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি যাদের তারাও মাসে ১০ হাজার টাকা পাচ্ছে। হরিণ শিঙায় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি সাবস্টেশন তৈরি হচ্ছে। বাংলায় ১০০ বছর বিদ্যুতের অভাব হবে না। আমরা বিদ্যুৎ বিক্রি করতেও পারব। আগামী দিনে দেউচা-পাঁচামিতে এক লক্ষ ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে। কোনও ঘরে বেকার থাকবে না। এটা আপনাদের গর্ব।

ক্ষমতা নেই : মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বিনা পয়সা শস্যবিমা আমরা দিই। কেন্দ্রীয় সরকার দেয় না। বিজেপি শুধু বড় বড় কথা বলছে আর বাংলার বদনাম করছে। আর বলছে বাংলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হটাও। আমি বলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন বেঁচে থাকবে, বাংলায় থাকবে। তোমাদের ক্ষমতা নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা চুলও স্পর্শ করা।

আরও পড়ুন: বিজেপির ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, পথে নামলেন সন্দেশখালির মহিলারা

মোদিকে দেশ থেকে হটান : তিনি বলেন, বিজেপির দু’জন নেতা মধুবাবু আর বিধুবাবু গোটা দেশটাকে লুঠ করেছে। আমি বললে দোষ হবে। যখন অর্থমন্ত্রীর স্বামী দাঁড়িয়ে বলেন, দেশ লুঠ হয়ে গেল। যদি মোদি আবার আসে, দেশে আর কোনও দিন নির্বাচন হবে না। মোদিকে দেশ থেকে হটান, দেশটাকে বাঁচান। নোটবন্দির সময় জনগণের টাকা লুঠ করেছে। কালো টাকা ফেরত আনবে বলে লুঠ করেছে। বিনা পয়সায় গ্যাস দিচ্ছেন বলেছেন, পাচ্ছেন? একটা মিথ্যাবাদী জুমলাবাজ প্রধানমন্ত্রী। টিভি খুললেই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। ওরা এত টাকা চুরি করেছে জনগণের, তবু ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। তাই সময় এসেছে ওদের বিদায় দিন। পাল্টে দিন, বদলে দিন।

ওদের ভোট বন্ধ করে দেব : মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, আমরা যেটা বলি সেটা করে দেখাই। যেটা পারব না, সেটা বলি না। আমাদের সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে? ১ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা দেয়নি। তুমি নাকি বিনা পয়সায় চাল দিচ্ছ! চাল দেয়, না কাঁকড় দেয়? বিনা পয়সায় চাল দিতে গেলে বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লাগে। ২ বছর ধরে কেন্দ্রের সরকার একটা পয়সাও দেয়নি। বিনা পয়সায় রেশন মা-মাটি-মানুষের সরকার দেয়। ভেবেছিল, রেশনটা আমরা বন্ধ করে দেব। আমরা বন্ধ করিনি। ওদের ভোটটা আমরা বন্ধ করে দেব। ওদের আমরা জব্দ করে দেব।

মিথ্যেবাদী, লোভী প্রধানমন্ত্রী : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওরা শুধু নিজেদের ছবি লাগায়। এখন ডিজিটাল প্রচারে বলছে, মোদিজি করছে সব। এত মিথ্যেবাদী, ভাঁওতাবাজি, লোভী প্রধানমন্ত্রী জীবনে দেখিনি। একটা হিংসুটে, অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, সরকার। এদের জীবন শুরু হয়েছে দাঙ্গার মধ্য দিয়ে, এদের কাছে শান্তি প্রত্যাশা করেন? মোদিরা যা যা বলেছিল, কিছু করেনি। শুধু গ্যাস বেলুন আকাশে ওড়াচ্ছে।

জীবন দেব, আত্মসমর্পণ নয় : তৃণমূলনেত্রী বলেন, আপনারা চান এনআরসি হোক, সিএএ হোক, ইউনিফর্ম সিভিল কোড হোক? মনে রাখবেন, মোদিকে ভোট দিলে সিএএ, এনআরসি, ইউসিসি করে সবাইকে তাড়িয়ে দেবে। তফসিলি, আদিবাসী, ভূমিজ, মুসলিম, ওবিসি হিন্দু— কারও কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাবে না। ওরা আমাদের হিন্দু ধর্ম মানে না। ওরা বকধার্মিককে মানে। আমাদের ধর্ম রামকৃষ্ণদেব-বিবেকানন্দের সর্বধর্ম সমন্বয়। আমরা এনআরসি করতে দেব না, সিএএ করতে দেব না, ইউসি করতে দেব না। দরকার হলে জীবন দেব। বিজেপির কাছে আত্মসমর্পণ করব না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সামান্য লজ্জা নেই! : বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ অফিসার এখানে কাজ করে। সেইসব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দিয়ে ফোন করাচ্ছে। যেন তারা বিজেপিকে মদত করে। কেন মদত দেবে? বিজেপি কী ভাবে? আমি খবর রাখি না! বিজেপি এবার ক্ষমতায় আসছে না। দুরু-দুরু করে ভয়ে কাঁপছে, সারা ভারতবর্ষ তাকিয়ে আছে আপনাদের দিকে। দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে, ধর্ম বিক্রি করে দিচ্ছে, মনুষ্যত্ব বিক্রি করেছে, চাকরি কেড়ে নিচ্ছে, গরিবদের টাকা বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই এবার খেলা হবে।

Latest article