তিনি গোয়ায় যাওয়ায় বিজেপি কাঁপছে। বিমানবন্দরে এই কারণেই তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়েছে। পরিবর্তে তিনি বলেছেন “নমস্তে”। শুক্রবার, সকালে গোয়ায় এই মন্তব্য করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি বহিরাগত নই। আমি ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করি, অভিন্ন ভারতে বিশ্বাস করি।” মমতা প্রশ্ন তোলেন, “আমাকে এখানে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে কেন? তৃণমূলকে ভয় পেয়ে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” তিনদিনের সফরে গোয়ায় রয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেখানে তিনি বলেন, “গোয়াতে (Goa) নতুন সকাল আনতে হবে। গোয়ায় সাইনবোর্ড হওয়ার জন্য আসিনি। মরে গেলেও আপস করব না। এই পার্টি বিক্রি হওয়ার জন্য নয়।” এরপরই তৃণমূল সুপ্রিমো আহ্বান জানান, “তৃণমূল কংগ্রেসকে একটা সুযোগ দিন।” একইসঙ্গে মমতা বলেন, তিনি গোয়ায় মুখ্যমন্ত্রী হতে আসিনি। সেখানে একটি দুর্নীতিমুক্ত সরকার গড়তে চান। সেখানে সরকার গড়বে গোয়ার মানুষ। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।” বলেন, “গোয়া চালাবে গোয়ার মানুষ, বাইরে থেকে কেউ নয়। গোয়ায় দিল্লির দাদাগিরি চলবে না”
আরও পড়ুন-‘আমি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হব না, কিন্তু গেয়ার উন্নয়নের জন্য কাজ করব’ সভা থেকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
মমতা গোয়া সফরের আগে সেখানে তাঁর ছবি দেওয়া পোস্টার ছেড়া হয়। এই ঘটনার বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “গোয়ায় আমাদের পোস্টার বিকৃত করা হয়েছে। এসব করলে ভারত থেকে আপনারা মুছে যাবেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলা আর গোয়ার তিনটে জিনিস এক- মাছ, ফুটবল আর লোকসংগীত। গোয়ার মানুষ তৃণমূলকে বিশ্বাস করলে, তাঁরা লড়তে তৈরি। “বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে আমরা তৈরি। গোয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। কোনওরকম বিভেদমূলক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।”
তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে মহিলা সংরক্ষণ ও তারুণ্যে গুরুত্ব দেব।” এরপর এই বাংলায় তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, “পশ্চিমবঙ্গে আমরা গতিধারার নামে ট্যাক্সি কিনতে আর্থিক সাহায্য দিই। মৎস্যজীবীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়, ঘর ভাঙলে সারানো হয়।” তিনি বলেন, তৃণমূলের আমলে পশ্চিমবঙ্গে দারিদ্র কমেছে ৪০ শতাংশ। “বাংলায় আমরা কন্যা সন্তানদের সবাইকে স্কলারশিপ দিই। পড়ুয়াদের ট্যাব, সাইকেল দিয়ে সাহায্য করা হয়।”
আরও পড়ুন-‘আমি গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী হব না, কিন্তু গেয়ার উন্নয়নের জন্য কাজ করব’ সভা থেকে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
ধর্মের নামে বিভাজন যে তিনি বরদাস্ত করেন না এদিনের বক্তব্যে স্পষ্ট করেই দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “টিএমসি-র অর্থ টেম্পল মস্ক চার্চ।” জানান, বাংলায় দুর্গাপুজো, কালীপুজো হয়, পাশাপাশি ঈদ, মহরম, ক্রিসমাসও সাড়ম্বরে পালিত হয়। “আমরা ভাগাভাগির রাজনীতি করি না। দেশকে আমরা ভাগ করতে চাই না।”
বিজেপিকে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, “অন্যের ক্যারেকটার সার্টিফিকেট নেওয়ার আগে, নিজেদের সার্টিফিকেট দেখান।”
১০ বছর আগে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন গোয়া গিয়েছিলেন মমতা। গিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব উদ্বোধনেও। কোঙ্কন রেলে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস চালুর সময়ও রেলমন্ত্রী হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের কর্মিসভায় সে কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তিনদিনের সফরে গোয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার তাঁর একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক, মৎস্যজীবীদের সংগঠনের সঙ্গে কথা, সাংবাদিক বৈঠক।
গোয়ার মাঙ্গুয়েশি মন্দির, মহালসা নারায়ণী মন্দির ও তপোভূমি মন্দিরে যাবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। গোয়ার নাগরিক সমাজের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি। এদিনের সভা থেকে গোয়ার সব রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজের সব স্তরের মানুষকে তৃণমূলে আসার জন্য আহ্বান জানান মমতা।