প্রতিবেদন : এবার আরও শক্তিশালী দল ও প্রশাসন। আরও কড়া হাতে একদিকে দলের রাশ ধরা, একইসঙ্গে প্রশাসনিক স্তরেও কড়া নজরদারিতে উন্নয়নের গতিপথ নির্দিষ্ট করা। সেই লক্ষ্যে এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী ও দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেইসঙ্গে নির্বাচনের কারণে থমকে থাকা উন্নয়নের কাজে গতি আনতেও তৎপর তিনি। সেই লক্ষ্যেই এবার জোড়া বৈঠক করতে চলেছেন নেত্রী। আজ, শনিবার প্রথম বৈঠকটি হবে কালীঘাটে তাঁর বাসভবনে নবনির্বাচিত সাংসদ ও দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতিদের নিয়ে। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর প্রশাসনিক স্তরের বৈঠকটি হবে আগামী ১১ জুন মঙ্গলবার নবান্নে। তৃণমূল সুপ্রিমো হিসেবে দলকে দিকনির্দেশ দেবেন তিনি। আর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের উন্নয়নকে আরও গতিশীল করতে টার্গেট বেঁধে দিয়ে কাজ শেষ করতে রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেবেন। এরপর সামনে একমাত্র ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এখন থেকেই একদিকে রাজ্যের উন্নয়ন, সেইসঙ্গে দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসকে আরও সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী করে তোলাই লক্ষ্য তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের। একইসঙ্গে দিল্লিতে ইন্ডিয়া ব্লকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাতেও থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস।
দিল্লিতে নিয়ন্ত্রণ : বিজেপি বিরোধী জোটের ইন্ডিয়া নাম দিয়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নির্বাচনের আগে থেকে একের পর এক জোট বৈঠকে বিজেপিকে পরাস্ত করতে নানা কৌশল তিনিই বাতলে দিয়েছেন। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এবার সংসদের ভিতরে ও বাইরে জোট শরিকদের নিয়ে এনডিএ বিরোধিতায় খুব স্বাভাবিক ভাবেই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকাতে থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। যোগ্য সঙ্গত করবেন লোকসভা ও রাজ্যসভা মিলিয়ে দলের ৪২ জন সাংসদ। কেন্দ্রের সরকারের যে কোনও জনবিরোধী সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করবে ইন্ডিয়া ব্লক। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণসম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
শক্তিশালী তৃণমূল : এই মুহূর্তে লোকসভায় তৃণমূলের ২৯ জন সাংসদ। রাজ্যসভা মিলিয়ে ধরলে সাংসদ সংখ্যা ৪২। নবনির্বাচিত সাংসদদের শনিবারের বৈঠকে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিক্নির্দেশ দেবেন। আগামী দিনে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কীভাবে দলের নির্দেশ অনুযায়ী কোন কোন ইস্যুতে সরব হতে হবে তাও বলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সার্বিকভাবে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও পর্যালোচনা হতে পারে এই বৈঠকে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করার লক্ষ্যে এগোতে হবে দলকে। আপাতত রাজ্যে কোনও নির্বাচন নেই। এরপরে ভোট বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬-এ। সেদিকে লক্ষ্য রেখে দলকে এখন থেকেই প্রস্তুত হতে নির্দেশ দেবেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন- বলেছিলাম, জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই নয়
উন্নয়নে আরও গতি : নবান্ন সভাঘরে ১১ জনের বৈঠকে রাজ্যের সব দফতরের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় সচিব, ডিভিশনাল কমিশনার, যুগ্মসচিব ও তার উপরের স্তরের সমস্ত আধিকারিক ও জেলাশাসকদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে ওই বৈঠক ১২ তারিখ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন জামাইষষ্ঠী থাকার কারণে একদিন এগিয়ে আনা হয়েছে বৈঠক।
প্রশাসনে রাশ : লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবারই আদর্শ আচরণবিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ফলে প্রশাসনের রাশ ফিরেছে রাজ্য সরকারের হাতে। বিধির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্তের আর কোনও গুরুত্বও থাকছে না। ফলে প্রশাসনিক কিছু রদবদলের সম্ভাবনাও থাকছে। নির্বাচন চলাকালীন রাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গার পুলিশ সুপার, আইসি, ওসি-দের বদল করা হয়েছিল। কাউকে ভোটের কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখা হয়েছিল। এসব নিয়ে ভোট চলাকালীনই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বকেয়া মেটাতে চিঠি : নতুন সরকার গঠনের পর্ব শেষ হলেই রাজ্যের বকেয়া নিয়ে ফের কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়াবে রাজ্য সরকার। ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে বকেয়া টাকা চেয়ে কেন্দ্রের নতুন সরকারকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার দফতরের আধিকারিকদের কাছে বকেয়া সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য তলব করেছেন। রবিবার নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পরেই পরের সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নতুন করে এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।