মুম্বই, ৩ নভেম্বর : আজাজ প্যাটেল আট বছর বয়সে বাবা-মার সঙ্গে নিউজিল্যান্ড পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই এখনও মুম্বইতে। যাদের কয়েকজন শুক্রবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসেছিলেন। জন্মভূমিতে তাদের সামনে এক ঝটকায় শুভমান, পুজারা আর বিরাটকে তুলে নিয়ে আজাজ একসময় ম্যাচে নাটকীয় মোড় নিয়ে এসেছিলেন। দিনের শেষে তিনি নিয়েছেন চার উইকেট।
একটা সময় বিনা উইকেটে ৮০ রান ছিল ভারতের। সেখান থেকে ১৫ বলের মধ্যে ভারত হঠাৎ ৮০-৩। বিরাটের আউট নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লেগেছিল বলে গণমাধ্যমে ভক্তদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে এরপর। আউটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরাটও মাঠে অসন্তোষ দেখিয়েছেন। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা শ্রেয়সের উইকেটও এদিন আজাজ তুলে নেন। দিনের শেষে ভারতীয় বংশোদ্ভুত বাঁ হাতি স্পিনারের বোলিং গড় ২৯-১০-৭৩-৪। তবে ভারত ধাক্কা সামলে চার উইকেটে ২২১ রান তুলে নিয়েছে। আর সেটা মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সৌজন্যে। যাঁর বাদ পড়া নিয়ে জল্পনা ছিল। মায়াঙ্ক শেষপর্যন্ত ১২০ নট আউট। ঋদ্ধিমান সাহা নট আউট ২৫। ভারত কিন্তু ভালভাবেই ম্যাচে ফিরেছে।
মাঠ ভেজা থাকায় এদিন দেরিতে খেলা শুরু হয়েছে। বিরাট কোহলি টেসে জিতে আগে ব্যাটিং নেন। খেলার আগে টিম লিস্টে দেখা গেল ভারতীয় দলে তিনটি পরিবর্তন হয়েছে। চোটের জন্য অজিঙ্ক রাহানে, ইশান্ত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজা বাইরে। এলেন বিরাট, সিরাজ ও জয়ন্ত প্যাটেল। রাহানে ও ইশান্তের চোট নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। চূড়ান্ত অফ ফর্মে থাকা দুই সিনিয়রকে সরাসরি বাদ না বলে ঘুরিয়ে রাস্তা দেখানো হল বলেই ক্রিকেটপ্রমীদের ধারণা। না হলে রাহানেকে আগের দিনও ইন্ডোর হলে প্র্যাকটিস করতে দেখা গিয়েছে। চোট থাকলে এটা তিনি করতে পারতেন না। আর ইশান্তের অফ ফর্ম সর্বজনবিদিত।
আরও পড়ুন : তিন মাসেই গার্ডওয়াল
৮০ রানে তিন উইকেট চলে যাওয়ার পর ভারতকে এতদূর টেনে নিয়ে এলেন মায়াঙ্ক। যাঁর দলে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল টেস্টের আগে। প্রথম টেস্টে মায়াঙ্কের মতোই অবস্থা ছিল শ্রেয়সের। তিনি সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করে পায়ের তলার জমি শক্ত করেছেন। মায়াঙ্কও ঠিক সেটাই করলেন। ২৪৬ বলের ইনিংসে ১৪টি চার, চারটি ছয়। শুভমান করেন ৪৪ রান। এদিন শূন্য রানে ফিরে যান পুজারা ও বিরাট। পুজারার রানের খরা চলছেই। প্রথম টেস্টের নায়ক শ্রেয়স করেন ১৮ রান। ঋদ্ধিমান কাঁধের চোট সারিয়ে ফিরে এসে ৫৩ বলে ২৫ নট আউট রয়েছেন। এদিন অবশ্য কম আলোর জন্য খেলা নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে।
এদিকে ভাল শুরু করেও নিজের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যেতে পারেননি শুভমান গিল। বারবার ইনিংস সেট করে ফিরে যাওয়া এখন অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন বছর বাইশের পাঞ্জাব ওপেনার। তবে নিজে বড় রান না পেলেও শুভমান মহা খুশি তাঁর ওপেনিং পার্টনার সেঞ্চুরি পাওয়ায়। তিনি বলেছেন, ‘‘দারুণ ব্যাট করেছে মায়াঙ্ক। অসাধারণ ইনিংস।” ওয়াংখেড়েতে এদিন একটা সময় পনেরো বলে তিন উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মায়াঙ্ক। এদিন খেলার পর শুভমান বলেন, ‘‘গ্রেট নক। মায়াঙ্ক প্রথম টেস্টে খুব বেশি রান করেনি। কিন্তু এখানে সাহসী ইনিংস খেলেছে। সারাদিনে আড়াইশো বল খেলে নট আউট থাকা খুব বড় ব্যাপার।” নিজের সম্পর্কে শুভমান বলেছেন, তিনি ভালই ব্যাট করছিলেন। ওয়াংখেড়েতে এদিন তাঁর সামনে বড় রান করার সুযোগও ছিল। ‘‘এটা খুবই আফসোসের কথা যে, দশ ম্যাচে আমি এখনও সেঞ্চুরি করিনি। মনসংযোগের জন্য সেঞ্চুরি হয়নি, এমন নয়। অনেক সময় কপাল খারাপ গিয়েছে। কিংবা বড় রান হয়নি। কিন্তু আমার মনে হয় সেঞ্চুরি থেকে বড় রানে যাওয়াই আমার শক্তি।” তবে শুভমানের এখনও সেঞ্চুরি ক্লাবের সদস্য হওয়া হয়নি। প্রাক্তনরা অবশ্য বলছেন, এটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।